ভিভ রিচার্ডসের কলাম: বিশ্বকাপ ধরে রাখা ভারতের জন্য কঠিন

বিশ্বকাপে ভারতের তিন ম্যাচে তিন জয়; ওয়েস্ট ইন্ডিজের চারে দুই। এই ধারাবাহিক ভারত এবার মুখোমুখি হচ্ছে অধারাবাহিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তবে ভারতের বোলিং লাইনআপে অধারাবাহিকতার ছায়া ঠিকই দেখছেন স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস। যে কারণে এই ম্যাচ জয়ে উত্তরসূরীদের সুযোগ রয়েছে বলে দাবি তাঁর। আর খেলাটি পার্থের ওয়াকায় হওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্ভাবনার পালেও জোর হাওয়া দেখছেন এই কিংবদন্তি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2015, 04:48 PM
Updated : 5 March 2015, 04:48 PM

ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ভারতের ম্যাচটি দারুণ হবে আশা করছি। আর খেলাটি যেহেতু হবে পার্থের বাউন্সি উইকেটে, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের হারানোয় ক্যারিবিয়ানদের আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণও থাকছে।

এ বিশ্বকাপে নিজেদের তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে ভারত। এই মুহূর্তে তাই তারা ভীষণ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। বিশেষত ভারতের বরাবরের শক্তি যে ব্যাটিং, সেটি এই আসরে খেলছে দুর্দান্ত। বোলিং খারাপ হচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়ায় দীর্ঘ সফরের এই সময়ে এসেই বরং তা দেখাচ্ছে ভালো। তবে আমি ঠিক নিশ্চিত নই, এই ধারাবাহিকতা ওরা ধরে রাখতে পারবে কিনা। আজ হোক বা কাল, বিশ্বকাপের কোনো এক পর্যায়ে ভারতের বোলিং দুর্বলতা ফুটে উঠবেই। অন্য যে কোনো দলের জন্য সেটি কাজে লাগানোর সুযোগটা থাকছে তাই উন্মুক্ত।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং অর্ডারে প্রতিভার অভাব নেই। ঐতিহ্যগতভাবে ভারতের ওই অধারাবাহিক বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ওরা একটা সুযোগ নিয়ে দেখতে পারে। পুল ‘বি’-তে ভারত হয়তো বেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থানে রয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেখানে পরের রাউন্ডে যেতে হলে পয়েন্টের প্রয়োজন। তারপরও পার্থের এই ম্যাচ যে ক্যারিবিয়ানদের জিততেই হবে-এমন না। অন্তত আমি তেমন ভাবনায় গিয়ে অযাচিত চাপ নেওয়ার পক্ষপাতী নই।

এর চেয়ে বরং অন্য আর দশটা ম্যাচের মতো এটিকে নেওয়া উচিত। তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে তা। আর যদি ম্যাচটি জিতেই যেতে পারে ছেলেরা, আত্মবিশ্বাসের জন্য তা হবে দারুণ ব্যাপার। পার্থের ম্যাচটির গুরুত্ব আমি দেখি সেখানেই। ভারতের বিপক্ষে জিততে পারলে ক্যারিবিয়ানদের মনোবল বেড়ে যাবে ১২০ শতাংশ। টুর্নামেন্টে অনেক দূর যাওয়ার বিশ্বাস যোগাবে যা।

তাই বলে ভারতকে আমি মোটেও অবহেলা করছি না। অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে ওরা খুব ভালো করতে পারেনি। বিশ্বকাপে কিন্তু তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে। আমার মনে হয়, ভারত দলে প্রতিভার ছড়াছড়ি সত্ত্বেও ওরা খুব ধারাবাহিক না। এ কারণেই বিশ্বকাপ ধরে রাখাটা ভারতের জন্য খুব কঠিন হবে।

জানি যে, দিনকয়েক আগে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে ওরা। কিন্তু সেটি ছিল কেবলই একটি ম্যাচের ব্যাপার। যদি পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হত, তাহলে প্রোটিয়ারা এমন ভিনদেশী কন্ডিশনে অবশ্যই ভারতকে হারাত।

হ্যাঁ, বিশ্বকাপে পাকিস্তানকেও হারিয়েছে ভারত। কিন্তু আজকাল যে কোন দিন কোন পাকিস্তানকে মাঠে দেখা যাবে, তা আগে থেকে বলার উপায় নেই। চলতি বিশ্বকাপে তো ওরা বেশ বাজে খেলছে। অমন এক পাকিস্তানকে হারানো দলের সামর্থ্যের বড় প্রমাণ না। অন্তত বিশ্বকাপ ট্রফি ধরে রাখার ক্ষমতা তো নয়ই।

আমি মনে করি, এখনকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলও কিছুটা পাকিস্তানের মতো। কিছুটা অনিশ্চিত চরিত্রের। ভালো না মন্দ-ম্যাচের দিন সকালে কোন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দেখা যাবে, পূর্বানুমানের উপায় নেই।

তবে ভারতের বিপক্ষে খেলাটি পার্থে হওয়ায় ক্যারিবিয়ানদের মনোবল থাকবে তুঙ্গে। অন্য যে কোন জায়গার চেয়ে এই মাঠেই ওদের ভারতকে হারানোর সুযোগ বেশি। তবে সেজন্য একাদশ নির্বাচনে ঠিক বোলিং আক্রমণ বেছে নিতে হবে।

আমি বলব, শেলডন কট্রেলের কথা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভাবতে পারে। জানি যে, বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টের বিবেচনায় ও অনভিজ্ঞ। তবে ওর আগ্রাসী ভাবটা আমার পছন্দ খুব। কখনো কখনো বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে খরুচে হতে পারে। তবে কট্রেলের মধ্যে ফাস্ট বোলারসুলভ ব্যাপার আছে দারুণভাবে। সেটি প্রদর্শনের জন্য পার্থের চেয়ে ভালো মঞ্চ আর কী হতে পারে!

গত ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভোগা সত্ত্বেও জেসন হোল্ডারও ভালো বোলিং করছে। উইকেটে বল ঠুকছে যত জোরে সম্ভব আর ব্যবহার করছে নিজের উচ্চতা। পার্থের ওয়াকার পিচের বাউন্স তাই হোল্ডারের কাজে লাগানোর সুযোগ থাকছে।

এর বাইরে দ্বৈরথটি হবে দুই বিস্ফোরক ব্যাটিং অর্ডারের। যে সব ক্রিকেটারের উপর আলাদা চোখ রেখে আমি বিশ্বকাপ শুরু করেছি, এর মধ্যে ছিল বিরাট কোহলি ও ক্রিস গেইল। এখন পর্যন্ত ওরা আমাকে হতাশ করেনি। এই দুজনের বাইরেও দুই দলে দারুণ প্রতিভাবান সব ক্রিকেটার রয়েছে। যে কারণে পার্থে জমজমাট লড়াই হবে বলে আমার বিশ্বাস।

দুই দলের অনেক ক্রিকেটারই খেলে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে। সতীর্থ কিংবা প্রতিপক্ষ হিসেবে। এ কারণে দুই দল দুই দলকে ভালোভাবে চেনে বলে অনেকে বলছে। তবে আমি সেসব নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাতে চাই না। অমনটাই যদি সত্যি হত, তাহলে তো দক্ষিণ আফ্রিকা ও এবি ডি ভিলিয়ার্সকে ঠেকাতে পারত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কারণ, বিশ্বকাপের ঠিক আগে মুখোমুখি হয়েছিল দল দুটি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ওই সিরিজের মতো বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখেও মনে হয়, ডি ভিলিয়ার্সকে ঠেকানোর উপায় জানা নেই ক্যারিবিয়ানদের।

এ কারণেই আইপিএল সূত্রে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের পরষ্পরকে জানায় পার্থের ম্যাচের ফলে কী প্রভাব পড়বে, এ নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে, ম্যাচের দিন নিজেদের পরিকল্পনাগুলো কারা ঠিকঠাক মাঠে অনুবাদ করতে পারে।

-আইসিসির সৌজন্যে