বাংলাদেশের গুছিয়ে নেওয়ার ম্যাচ

জিততেই হবে এমন আরেক ম্যাচের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে চাপের এই ম্যাচ মাশরাফি বিন মুর্তজাদের জন্য দারুণ এক সুযোগও। কোয়ার্টার-ফাইনালের পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে নিজেদের গুছিয়েও নিতে পারবেন তারা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2015, 02:28 PM
Updated : 4 March 2015, 04:23 PM

বৃহস্পতিবার নেলসনের স্যাক্সটন ওভালে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় ভোর চারটায়।

আফগানিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে শুভসূচনা করার পর শ্রীলঙ্কার কাছে ৯২ রানে হেরে যাওয়ায় মাশরাফিদের আত্মবিশ্বাস কিছুটা কমা অস্বাভাবিক নয়। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে আত্মবিশ্বাস আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবেনই সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমরা। 

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা ফিল্ডিং। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সহজ সব সুযোগ হাতছাড়ার মাসুল দিতে হয়েছে বিশাল হারে। স্কটল্যান্ড ম্যাচের আগে ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসল শিষ্যদের সতর্ক করে দিয়েছেন, এমন সীমাহীন ব্যর্থতার কোনো পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না তিনি।

এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে। দলের ব্যাটিং লাইনআপকে সুস্থির করারও ভালো সুযোগ স্কটল্যান্ড ম্যাচ।

আট ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলা বাংলাদেশ এই ম্যাচে একজন বোলার বাড়াতে পারেন। এক ম্যাচে ৯, অন্য ম্যাচে চার নম্বরে ব্যাট করা মুমিনুল হক বা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান এনামুলের যে কোনো একজন বাদ পড়তে পারেন।

নিউ জিল্যান্ডের কন্ডিশনে কার্যকর হতে পারেন শফিউল ইসলাম। স্পিনে শক্তি বাড়াতে আরাফাত সানি বা তাইজুল ইসলামের যে কোনো একজনকে খেলাতে পারে বাংলাদেশ।

ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভালো হচ্ছে না বাংলাদেশের। বড় সংগ্রহের ভিত পেতে তামিম ইকবাল, এনামুলের রান পাওয়া জরুরি। বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও যতক্ষন ক্রিজে থাকেন, আত্মবিশ্বাসী সব শট খেলেন সৌম্য সরকার। দলের ভারসাম্যর জন্য তিনি ইনিংস উদ্বোধনও করতে পারেন।

অনেক নিচে ব্যাট করায় সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে সেরাটা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের চারে ও পাঁচে খেলানোর পথে হাঁটছে না তারা। বরং বিপর্যয় সামলানোর জন্যই যেন রেখে দেয়া হচ্ছে সেরা ব্যাটসম্যানদের।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভালো করতে পারেননি বাংলাদেশের পেসাররা। মাশরাফির বিশ্বাস, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেই ঘুরে দাঁড়াবেন সতীর্থরা। রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদের ওপর অধিনায়কের আস্থা একটুও কমেনি।  

স্পিনে খুব একটা স্বচ্ছন্দ্য নয় স্কটল্যান্ড, কেউ কেউ এই সুবিধা নেয়ার কথা বলছেন। তবে বাঁহাতি স্পিনার সাকিব চান, দায়িত্বটা পেসাররাই নিক। উইকেটে স্পিনারদের জন্য খুব একটা সহায়তা না থাকায়, পেসারদেরই বেশি দায়িত্ব নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।   

স্যাক্সটন ওভালে স্পিনারদের জন্য খুব একটা সহায়তা দেখেন না স্কটল্যান্ডের অধিনায়ক প্রেস্টন মমসেন। বাংলাদেশের চেয়ে উইকেট তাদের জন্যই বেশি মানানসই বলে মনে করেন তিনি।

নিউ জিল্যান্ডে অনেক ম্যাচ খেলেছে স্কটল্যান্ড। তাই কন্ডিশন সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা আছে তাদের। টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে হারানোর কিছু নেই তাদের। তাই বাংলাদেশের চাপে থাকার পূর্ণ সুবিধা নিতে চায় তারা।

আয়ারল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের পাল্টা আক্রমণে এলোমেলো হয়ে পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং পরিকল্পনা। যার মাসুল তারা দিয়েছিল ম্যাচটি হেরে। সেই ম্যাচ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে আগ্রাসী খেলার পরিকল্পনা থাকতে পারে স্কটল্যান্ডের।

ভালো একটা শুরু, মাঝের ওভারে রানের চাকা সচল আর হাতে উইকেট রেখে ৪০ ওভারে যেতে চান মমসেন। শেষ ১০ ওভারে ঝড় তুলে লড়াইয়ের পুঁজি গড়তে চান তিনি। 

সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষায় ফেলার সামর্থ্য জস ডেভিদের আছে। নিউ জিল্যান্ড, আফগানিস্তানের বিপক্ষে সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেনও তারা।

পরের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। ২ পয়েন্ট নিয়ে ছয় নম্বরে রয়েছে ওয়েন মর্গ্যানের দলটি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় তাদের ওপর চাপ আরো বাড়বে।

৩ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে থাকা বাংলাদেশের পয়েন্ট পাঁচ হলে বিপদ বাড়বে ইংল্যান্ডের। কোয়ার্টার-ফাইনালে যেতে হলে পরের দুই ম্যাচে তাদের জিততেই হবে আর হারতে হবে বাংলাদেশকে।

ইংল্যান্ডের জন্য সমীকরণ যতটা সম্ভব কঠিন করার সুবর্ণ এই সুযোগ হাতছাড়া করবে না বাংলাদেশ। চাপটা নিজের কাঁধ থেকে মর্গ্যানদের কাঁধে পাঠানোর কাজটা আনন্দের সঙ্গেই করবেন মাশরাফিরা।

ওয়ানডের সেরা আসরে তৃতীয়বারের মতো খেলছে স্কটল্যান্ড। বিশ্বকাপে এখনো জয়শূন্য দলটি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুবর্ণ সুযোগটি হাতছাড়া করা স্কটল্যান্ড উন্মুখ বাংলাদেশ ম্যাচের জন্য। তাবে ইতিহাস বাংলাদেশের পক্ষেই। 

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে কখনো হারেনি বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে দুই দলের একমাত্র দেখায়ও জয় তাদেরই। ১৯৯৯ এর আসরে স্কটল্যান্ডকে হারিয়েই বিশ্বকাপের ইতিহাসে নিজেদের প্রথম জয় পায় তারা।