মুরালিধরনের কলাম: ব্যাটসম্যান কমিয়ে বোলার বাড়াতে হবে

হারে বিশ্বকাপ শুরুর পর টানা তিন ম্যাচে জয়, যার শেষ দুটিতে বিধ্বংসী ব্যাটিং দেখিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তবু মুত্তিয়া মুরালিধরন একাদশে পরিবর্তনের পক্ষে। ব্যাটসম্যান কমিয়ে একজন বাড়তি বোলার খেলানোর পরামর্শ কিংবদন্তি এই অফস্পিনারের।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2015, 06:16 PM
Updated : 2 March 2015, 06:16 PM

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার বিশাল রান তাড়া করে জেতাটা ছিল দুর্দান্ত। তারপরও ওয়েলিংটনের ওই ম্যাচের পর একটি ব্যাপার পরিষ্কার। শ্রীলঙ্কার একাদশ নিয়ে ভাবতে হবে নতুন করে।

কারণটা আমি বলছি। হ্যাঁ, সেদিন ব্যাটিং ছিল দুর্দান্ত। যা যা হওয়ার প্রয়োজন ছিল, হয়েছে সব। তারপরও বোলিংয়ের দুর্বলতা ছিল স্পষ্ট। বিশেষত শেষ ওভারগুলোর বোলিং অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের বড় মাথাব্যথার কারণ।

টপ অর্ডার অসাধারণ ব্যাটিং করছে বটে; তবে প্রতি ইনিংসে তো আর তারা ৩০০ রান করবে না। টুর্নামেন্টের সামনের দিকে যখন আরো শক্ত প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা, তাদের কাজ হয়ে পড়বে ভীষণ কঠিন।

লাহিরু থিরিমান্নে, তিলকরত্নে দিলশান, কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, ম্যাথিউসদের সবাই বিশ্বকাপে ব্যাটে অবদান রেখেছে। এখন বোলার ও ফিল্ডারদের সেই উৎসবে শামিল হওয়ার সময়; প্রতিপক্ষকে ২৩০ কিংবা ২৪০ রানে আটকে রাখার সময়। আর আমার মতে, সেটি করার সম্ভাবনা সবচেয়ে উজ্জ্বল হবে যদি একজন ব্যাটসম্যান কমিয়ে বোলিং লাইনআপ আরো শক্তিশালী করা যায়।

দিমুথ করুনারত্নে কিংবা দিনেশ চান্দিমালের জন্য ব্যাপারটি হয়তো খুব কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু টপ অর্ডারে যেভাবে রান করছে আর বোলাররা প্রতিপক্ষকে আটকাতে পারছে না- তাতে একাদশে সাত স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান রাখার কোনো যুক্তি দেখি না। বরং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে ছয় স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানের ওপরই ভরসা রাখা উচিত।

ওই সপ্তম ব্যাটসম্যানের জায়গায় একাদশে আমি নুয়ান কুলাসেকেরাকে নেওয়ার পক্ষে। বিশেষত ইনিংসের শেষ দিকে অধিনায়কের নির্ভর করার মতো বোলার হতে পারে ও। সঙ্গে সাত-আট নম্বরে ব্যাটিংটাও মন্দ না। ২০১৩ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি মনে করে দেখুন। পাঁচ নম্বরে নেমে সেদিন ৩৮ বলে অপরাজিত ৫৮ রান করেছিল কুলাসেকেরা। ২৯৪ রান সফলভাবে তাড়া করায় সাঙ্গাকারাকে যোগ্য সহায়তা দিয়েছিল ও।

এই বাড়তি বোলারের উপস্থিতি শ্রীলঙ্কার সামনের দুটো ম্যাচে বহন করবে বাড়তি গুরুত্ব; ইনজুরিতে পড়া স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের বাঁ হাতের আঙ্গুলে সেলাই পড়ার খবরের কারণে। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে লঙ্কানদের সবচেয়ে নির্ভর করার মতো বোলার ও। আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে যদি কিছু দিনের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হয় হেরাথকে, তাহলে একাদশে বাড়তি বোলারের তাৎপর্য বাড়বে আরো। হেরাথের জায়গায় সচিত্র সেনানায়েকে, সঙ্গে আরেক জন বাড়তি বোলার।

দলের অন্য বোলারদের মধ্যে লাসিথ মালিঙ্গার সেরা রূপের খানিকটাই কেবল দেখা গেছে বিশ্বকাপে। আমার মনে হয়, একটু একটু করে পূর্ণ ফিটনেস ফিরে পাচ্ছে ও। থিসারা পেরেরা রান দিচ্ছে প্রচুর। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সুরাঙ্গা লাকমালের পারফরম্যান্স ভুলে যাওয়ার মতো। এসব মিলিয়ে বোলিং নিয়ে অধিনায়কের সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো উপায় নেই। বিশেষত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ১০ ওভারে ১০৬ রান দেওয়াটা তাঁর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলবেই।

শ্রীলঙ্কার পরের ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, রোববার। পুলে কোন দল দ্বিতীয় হবে, সেটি হয়তো নির্ধারিত হবে ওই দ্বৈরথের ফলে। ম্যাথিউসের দল নিশ্চিতভাবেই ওই স্থানটি চাইবে। কেননা এই পুলে যত উপরে থাকা যাবে, অন্য পুলের তত দুর্বল দলের সঙ্গেই তো কোয়ার্টার-ফাইনালে দেখা হওয়ার জোর সম্ভাবনা।

তবু আমি তড়িঘড়ি করে হেরাথকে মাঠে নামিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী না। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তো নয়ই, এর তিন দিন পর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে খেলাতেও না। ওর স্পিনিং আঙ্গুলে যে ইনজুরি হয়েছে ওর, সেটি সারার জন্য সময়ের প্রয়োজন। সর্বোচ্চ সময়ই আমি হেরাথকে দিতে চাই। ১৮ মার্চ সিডনিতে শ্রীলঙ্কার সম্ভাব্য কোয়ার্টার-ফাইনাল পর্যন্ত ওকে বিশ্রামে রাখার পরামর্শ আমার।

আর হেরাথের বদলে একাদশে সেনানায়েকের আসার অর্থ, লোয়ার অর্ডারে ঝটপট কিছু রান ওঠার সম্ভাবনা। এ কারণেও আমি ব্যাটসম্যান কমিয়ে আরেকজন বোলার নিতে চাই।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পুরো সপ্তাহ পড়ে আছে শ্রীলঙ্কার। ওদিকে মাইকেল ক্লার্কের দলের জন্য সেটি হবে নয় দিনে তৃতীয় ম্যাচ। আগের দুটো ম্যাচ নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে অকল্যান্ডে ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে পার্থে। বিশ্বকাপে এই দুটো ভেন্যুর পারষ্পরিক দূরত্ব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি।

তাই বলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলার সময় অস্ট্রেলিয়ানরা ক্লান্ত থাকবে, অমন ভাবার কোনো কারণ নেই। আমি বরং মনে করি উল্টোটাই হবে। ইডেন পার্কে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর নিজেদের প্রমাণের জন্য মুখিয়েও থাকবে তারা।

তবু আমি বলব, শ্রীলঙ্কার ভয়ের কিছু নেই। ব্যাটসম্যানরা অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলছে। বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গত দুই ম্যাচে যদিও তিন জনের বেশি ব্যাটিংয়ের সুযোগ পায়নি। তবে এটিকে আমি সমস্যা হিসেবে দেখছি না। জয়াবর্ধনে-ম্যাথিউসরা টুর্নামেন্টে এরই মধ্যে রান করেছে। পরের বার ব্যাটিংয়ে নামার প্রস্তুতিটা ওরা নিয়ে রাখবে খুব ভালোভাবেই। এ কারণে আমি লঙ্কানদের ব্যাটিং নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নই।

সর্বশেষ তিন ম্যাচে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে শেষ দুটো দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রদর্শনীতে। ড্রেসিং রুমে এখন নিশ্চয়ই বইছে ফুরফুরে হাওয়া। গত কিছু দিনের পারফরম্যান্স প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আরো একটি ব্যাপার। আরেকটি বড় টুর্নামেন্টের ট্রফির লড়াইয়ে অন্যদের জন্য হুমকি হয়ে থাকছে শ্রীলঙ্কা।

-আইসিসির সৌজন্যে