গ্রায়েম স্মিথের কলাম: পাকিস্তান ম্যাচে বড় হুমকি মিসবাহ

ভারতের বিপক্ষে হারে এলোমেলো ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে আবার তারা ফিরেছে কক্ষপথে। গ্রায়েম স্মিথ এবার জোর দিচ্ছেন দলের ধারাবাহিক উন্নতিতে। সেজন্য পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জয় পাওয়াটা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2015, 05:06 PM
Updated : 2 March 2015, 05:06 PM

প্রোটিয়াদের জন্য সপ্তাহটি ছিল ভিন্নমুখী আবেগের। যেখানে হতাশার বিপরীতে রয়েছে আশার আলো। মেলবোর্নে বিধ্বস্ত হওয়ার পর সিডনিতে প্রতিপক্ষকে তারা বিধ্বস্ত করেছে। পারফরম্যান্স বিবেচনায় দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য একেবারেই বিপরীত দুই ম্যাচ।

ভারতের বিপক্ষে হার নিয়ে গেল সপ্তাহে অনেক কথা হয়েছে। আমি শুধু সংক্ষেপে বলতে চাই, ওই ম্যাচে প্রোটিয়াদের দেখে মনে হয়েছে তারা ভীষণ স্নায়ুচাপে ভুগছে। ওই দ্বৈরথের আগে বলেছিলাম, যে দল দ্রুত ম্যাচের ছন্দটা ধরতে পারবে, তারাই নিয়ন্ত্রণ করবে খেলা। মেলবোর্নে ঠিক তাই করেছে ভারত। বড় উপলক্ষে চাপের মধ্যেও জ্বলে উঠেছে তারা।

এই বিশ্বকাপের ফরম্যাটটা এমন যে, হার হজম করেও নকআউট পর্বে উত্তরণের সুযোগ থাকে। চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতির জন্য ছয় সপ্তাহ করে সময় পাবে দলগুলো। এ সময়ের মধ্যে যারা ধারাবাহিক উন্নতিতে ছন্দে আসবে এবং শেষ তিন সপ্তাহে ফর্মের চূড়ায় পৌঁছতে পারবে- তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি।

দক্ষিণ আফ্রিকা মেলবোর্নে ওই হারের ধাক্কা সামলেছে দারুণভাবে। আমি আগেও বলেছি, বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে একটি হার থেকে ইতিবাচক অনেক কিছু নেওয়ার থাকে। প্রোটিয়াদের দেখে মনে হচ্ছে, ভারতের কাছে হারের পর তারা এগিয়েছে ওই পথেই। সিডনিতে তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে দিতে পেরেছে অমনভাবে।

দক্ষিণ আফ্রিকা এখন জানে, ট্রফি জিততে হলে আগামী তিন সপ্তাহ তাদের এমন পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি দেখাতে হবে ম্যাচের পর ম্যাচ।

এই জয় নিঃসন্দেহে দলের অনেক সদস্যের উপর চাপ কমিয়ে দিয়েছে। এখন তারা আরো নির্ভার হয়ে নিজেদের সামর্থ্যরে প্রকাশের চেষ্টা করতে পারবে।

আমার মনে হয় না, দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বড় কোনো সমস্যা করবে আয়ারল্যান্ড কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরাত। আমি নিশ্চিত, ওই দুই ম্যাচে স্কোয়াডের সবাইকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলানো হবে। একই সঙ্গে বিশ্রাম দেওয়া হবে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারদের।

তবে ওই দুই ম্যাচের মাঝের প্রতিপক্ষ যখন পাকিস্তান, তখন ব্যাপারটি হবে একেবারে অন্য রকম। অনিশ্চিত ক্রিকেট চরিত্রের কারণে ওদের বিপক্ষে প্রস্তুতি নেওয়ার সবসময় কঠিন। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে ওদের বেশ বিবর্ণ লেগেছে। কিন্তু এখানে খুব বেশি জোর দেওয়ার কিছু নেই। যে কোনো প্রতিযোগিতার শুরুর দিতে এমনটা হতেই পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় হুমকি মিসবাহ-উল-হক। এমনকি এটি বলতেও আমার দ্বিধা নেই যে, মিসবাহকে দ্রুত আউট করতে পারলে প্রোটিয়াদের অর্ধেক যুদ্ধজয় হয়ে যাবে। দলের উপর ওদের অধিনায়কের এতটাই প্রভাব। পাকিস্তানের টপ ও মিডল অর্ডারে এখন পর্যন্ত একমাত্র মিসবাহই যা কিছুটা ফর্মে থাকার প্রমাণ দিয়েছে।

ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার প্রতিশ্রুতি থাকা পাকিস্তানের আরেক জায়গা লোয়ার-মিডল অর্ডারের ব্যাটিং। শোয়েব মাকসুদ, উমর আকমল, শহীদ আফ্রিদি, ওয়াহাব রিয়াজদের সামর্থ্য রয়েছে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের। একটু একটু করে ফর্মে ফিরছে ওরা। প্রতি ম্যাচেই এই লোয়ার-মিডল অর্ডার থেকে আসছে বেশ কিছু রান।

বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্ট বিবেচনায় পাকিস্তানের পেস-আক্রমণ বেশ অনভিজ্ঞ। যার নেতৃত্বে থাকবে মোহাম্মদ ইরফান। ও সত্যি দারুণ বোলার, ২০১৩ সালে আমার ক্যারিয়ারে মুখোমুখি হওয়া অন্যতম দ্রুতগতির স্পেলটি করেছিল ইরফান। এছাড়া বাঁহাতি সুইংয়ে বোলিং বৈচিত্র্য আনার জন্য পাকিস্তানের রয়েছে রাহাত আলী, ওয়াহাব রিয়াজ। শহীদ আফ্রিদির লেগস্পিন ও হারিস সোহেলের বাঁ-হাতি স্পিনটাও মন্দ না।

এমন বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার যে নির্দিষ্ট একাদশের ছক কাটা আছে, আমার তা মনে হয় না। আমি বরং মনে করি, প্রতিপক্ষ বুঝে একাদশ পরিবর্তনের পথে হাঁটবে প্রোটিয়ারা। ভারতের বিপক্ষে ফারহান বেহারদিনের জায়গায় ওয়েন পারনেলকে খেলানোয় যার প্রমাণ। এই সাত নম্বরের ব্যাটসম্যান ও পঞ্চম বোলারেই একাদশ নির্বাচনের আলোচনা ঘুরপাক খাবে বলে ধারণা করছি। আমার বিশ্বাস, পাকিস্তানের বিপক্ষে আবার বেহারদিনেই ফিরে যাবে প্রোটিয়ারা।

পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেবে সত্যিকারের আত্মবিশ্বাস। নকআউট পর্বের আগে যেটি প্রয়োজন খুব। আর হেরে গেলে কী হবে? সেটি চিন্তার চৌহদ্দিতেও আনছে না প্রোটিয়ারা!

-আইসিসির সৌজন্যে