অ্যান্ডি বিকেলের কলাম: হারটি অস্ট্রেলিয়ার জন্য জেগে ওঠার ডাক

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ে নিউ জিল্যান্ডের সমর্থকরা মেতে আছে উৎসবে। তাতে প্রভাবিত হয়ে ক্রিকেটারদের ভেতর চলে আসতে পারে আয়েশী ভাব। সেটি এড়ানো নিউ জিল্যান্ডের জন্য চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অ্যান্ডি বিকেল। আর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে হার অস্ট্রেলিয়ার জেগে ওঠার উপলক্ষ হতে পারে বলেও বিশ্বাস দেশটির সাবেক এই পেসারের।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2015, 06:26 PM
Updated : 1 March 2015, 06:26 PM

নিউ জিল্যান্ডের অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও কোচ মাইক হেসনের পরিকল্পনা ছিল দুর্দান্ত। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি এগিয়েছে তাদের ছক করা চিত্রনাট্য অনুযায়ী। বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণার সময় থেকেই নিশ্চয় এই দ্বৈরথ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল কিউইরা। কারণ ইডেন পার্কে অস্ট্রেলিয়া যে নিউ জিল্যান্ডকে হারাতে পারেনি বহু দিন!

ইডেন পার্ক এমন দুর্ভেদ্য দূর্গ কেন? ছোট বাউন্ডারি, ধীরগতির উইকেট ও আগ্রাসী দর্শকের সমন্বয় এর পেছনে ভূমিকা রাখে বলে আমার ধারণা। সেখানে এবারের ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষেকে চেপে ধরে চাপে ফেলার ভালো সুযোগ ছিল নিউ জিল্যান্ডের সামনে। অন্য দিকে অস্ট্রেলিয়ার যেন কমতি ছিল কিসের! ব্যাটসম্যানরা একেবারে ছন্দহীন ছিল না বটে, তবে ম্যাচ অনুশীলনের অভাবটা ছিল স্পষ্ট।

তবে আগের তিন ম্যাচ জেতায় এ ম্যাচে আরেকটু সহজ জয়ের আশা নিশ্চয়ই করেছিল তারা। দুর্দান্ত বোলিং আর দারুণ অধিনায়কত্বে তৈরি হয়েছিল সে প্রেক্ষাপট। অস্ট্রেলিয়ানরা নিজেদের ব্যাটিং ইনিংসে ছিল একেবারে কোণঠাসা।

যদিও শুরুটা অজিদের মন্দ হয়নি। কিন্তু ড্যানিয়েল ভেট্টোরির বোলিং আক্রমণে আসা বদলে দেয় পুরো পরিস্থিতি। ওই বাঁহাতি স্পিনার যদিও উইকেট পেয়েছে মাত্র দুটি। কিন্তু তার বোলিংয়ে রান নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে খুব। অন্য প্রান্তে ট্রেন্ট ব্রোল্ট অবিশ্বাস্য বোলিং করে অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডার ছিঁড়েকুড়ে ফেলে একেবারে। একটা সময় ২৬ রানের মধ্যে অসিরা হারিয়ে বসে আট উইকেট। ব্রাড হাডিন ও প্যাট কামিন্সের শেষ উইকেট জুটি তবু কিছুটা লড়াইয়ের পুঁজি দেয় তাদের।

আমার মতে, ১৫১ রান করেও অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা লুকিয়ে ছিল দ্রুত কিছু উইকেট নেওয়ায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি। হয়নি ব্রেন্ডন ম্যাককালামের জন্য। এই মুহূর্তে টপ অর্ডারে নেমে যে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে ও, অমনটা আর কেউ পারে না। ওর এই ধরনের ব্যাটিংয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের চিত্রনাট্য সাজানো ছিল যথার্থভাবে। দুই মিচেলের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই ছক্কা মেরে ম্যাককালাম আসলে কিউইদের ব্যাটিংয়ের গতিপথ দেন এঁকে।

যদি ম্যাককালামের উইকেট দ্রুত তুলে নিতে পারত, তাহলেই কেবল জয়ের সম্ভাবনা থাকত অস্ট্রেলিয়ার। দেড়শর মতো রান তাড়া করতে গিয়ে ও ২৪ বলে ৫০ রান তুলে ফেলল। এরপর আসলে ম্যাচে টিকে থাকা কঠিন।

তবে শেষ পর্যন্ত সেটি ধ্রুপদী এক ম্যাচই হয়েছে, যেটি নিয়ে সামনের বহু বছর কথা হবে। নিউ জিল্যান্ডের জয়ে শেষ বেলার নায়ক কেন উইলিয়ামসন। টেকনিকের দিক দিয়ে এখন ও বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম বিশুদ্ধ ব্যাটসম্যান। বয়স মাত্র ২৪ বছর হলেও ওর খেলার পরিণতিবোধ বয়সের তুলনায় দারুণ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছক্কা মেরে রূপকথার মতো যেভাবে ম্যাচটি জিতিয়েছে উইলিয়ামসন, তাতে সেটি প্রমাণ করেছে আবার।

ওই মাত্র ১৫১ রানের পুঁজিতে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের হারানোর কিছু ছিল না। মাইকেল ক্লার্ক আগ্রাসী অধিনায়কত্বে যেভাবে উইকেটের জন্য মরিয়া হয়ে ছিলেন, সেটিও বোলারদের করেছে সাহায্য। মিচেল স্টার্ক ছিল অসাধারণ। সাদা ক্রিকেট বলে বোলিংটা খুব উপভোগ করে ও। এরই মধ্যে ওর ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক আছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে আরো দু’বার গিয়েছিল ওই অর্জনের খুব কাছাকাছি। এই রোমাঞ্চকর ম্যাচটির স্মৃতিচারণে স্টার্কের ২৮ রানে ছয় উইকেটের বোলিং ফিগারও নিশ্চিতভাবে মনে পড়বে সবার।

মিচেল জনসন খুব পিটুনি খেয়েছে ম্যাককালামের কাছে। তবে এই দু’জনের মুখোমুখি হওয়া দেখাটা ছিল দারুণ ব্যাপার।

বিশ্বকাপে এই মুহূর্তে নিউ জিল্যান্ড রয়েছে বেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থানে। চার খেলার চারটিতে জিতে আট পয়েন্ট তাদের। সপ্তাহখানেকের বিরতি শেষে খেলবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নেপিয়ারে এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যামিল্টনে। পুল পর্বে সহজ এই দুটি ম্যাচই বাকি তাদের।

অন্য দিকে তিন ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার এখন মোটে তিন পয়েন্ট। এর মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচও রয়েছে। নিউ জিল্যান্ডের কাছে হারের পর এখন নিশ্চয়ই জয়ের ধারায় ফেরার জন্য মরিয়া থাকবে তারা।

গত দুই সপ্তাহ অজিদের জন্য নিঃসন্দেহে ছিল ভীষণ হতাশার। নিউ জিল্যান্ডের কাছে হারটি তাদের জন্য হতে পারে ঘুম থেকে জেগে ওঠার ডাক। এখন আর কোনো হোঁচট খাওয়ার সুযোগ নেই তাদের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচের পর ৮ মার্চ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিডনির ম্যাচটি খুব গুরুত্বপূর্ণ তাই।

আর নিউ জিল্যান্ডের জন্য চ্যালেঞ্জ পা মাটিতে রাখা। ওদের পুরো দেশের মানুষ এখন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় নিয়ে মেতে আছে। কিউই ক্রিকেটাররা যেখানেই যাক, উৎসবের আমেজে সেটি ওদের মনে করিয়ে দেওয়ার লোকের অভাব হবে না। এতে মনোযোগ নড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তবে আমি নিশ্চিত, ব্যাপারটি নিয়ে নিউ জিল্যান্ড শিবিরে জোর আলোচনা হয়েছে অবশ্যই। ওদের স্কোয়াডে রয়েছে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেল। এই সময়টায় আবেগ নিয়ন্ত্রণের কাজটি বিশেষত অভিজ্ঞদেরই করতে হবে।

-আইসিসির সৌজন্যে