ফ্লেমিংয়ের কলাম: নিউ জিল্যান্ড এখন ট্রফির অন্যতম দাবিদার

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ে দেশের সবার মতো খুশি নিউ জিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিং। শেষদিকে দলের ব্যাটিং ধসে অবশ্য খুশি নন একেবারেই। তারপরও এটি তাদের পা মাটিতে রাখতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন তিনি। আর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে জিতে নিজেদের বিশ্বকাপ জয়ের দাবিদার হিসেবে কিউইরা প্রমাণ করেছে বলেও দাবি তার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2015, 10:42 AM
Updated : 1 March 2015, 10:42 AM

কেন উইলিয়ামসনের ছক্কায় ইডেন পার্কে বয়ে গেছে স্বস্তির হাওয়া। এটি একপাশে সরিয়ে রাখলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের শেষ অংশ নিউ জিল্যান্ডের জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক ছিল না।

তা হোক। তবু কিউইরা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে জয়টা গ্রহণ করবে আনন্দের সঙ্গে। এখান থেকে ইতিবাচক বহু কিছু যেমন নেবে তারা, তেমনি নেওয়ার আছে অনেক শিক্ষাও।

আসলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে কোনো জয় নিউ জিল্যান্ডের জন্য উপভোগ্য। এটিও ব্যতিক্রম না। যদিও শেষ দিকের ব্যাটিং ধসে ইডেন পার্ক নিস্তব্ধ হওয়ার যোগাড় হয়েছিল।

তবে বল হাতে ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’রা নিজেদের সামর্থ্যের বার্তাটা দিতে পেরেছে দারুণভাবে। সেটি সত্যি ছিল বিশেষ কিছু। আমার তো মনে হয়, এই পারফরম্যান্সের পর ট্রফি জয়ের অন্যতম দাবিদার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে নিউ জিল্যান্ড।

তর্কের খাতিয়ে হয়তো বলতে পারেন, শুরুর দিকে টিম সাউদির বোলিং ছিল আলগা। এ-ও যোগ করতে পারেন, দুই সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকা দল যেমনভাবে ফর্ম ও আত্মবিশ্বাস হাতড়ে বেড়ায়, মাইকেল ক্লার্কের দল ব্যাটিং করেছে তেমনি। তা সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ডে বোলিং আক্রমণের দক্ষতা ও আগ্রাসনকে উপেক্ষার উপায় নেই। ওই বোলিং দেখা ছিল দারুণ আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। আরো ভালো লেগেছে, সাউদি খানিকটা এলোমেলো থাকার সময় ওর সতীর্থ ট্রেন্ট বোল্টের দারুণভাবে জ্বলে ওঠাটা। এটি খুব ভালো দলের চিহ্ন। যখন একজন ক্রিকেটার একটু অফফর্মে থাকে, অন্য কেউ পুষিয়ে দেয় তা। বোল্টের বোলিংটা ছিল এর আদর্শ উদাহরণ।

আমরা কিউইরা আসলে কোনো কিছুই সহজভাবে করায় বিশ্বাস করি না। তবু শেষ দিকে ১৫ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট পড়ে যাওয়া দেখা ছিল কঠিন। অবশ্য এটি এক অর্থে শাপেবর হতে পারে। নিউ জিল্যান্ডের পারফরম্যান্সের কারণে পুরো দেশে যে আত্মবিশ্বাসের ফুরফুরে হাওয়া বয়ে যাচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের শেষটার কারণে তা এখন হয়তো আর বাঁধনহারা হবে না।

সমর্থকদের আত্মবিশ্বাস যে কোন চূড়ায় উঠেছিল, সেটি বুঝেছি ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ওই বেধড়ক পিটুনির সময়। গ্যালারি থেকে তখন সমস্বরে ভেসে আসছিল গর্জন, ‘তোমরা ইংল্যান্ডের চেয়েও খারাপ’। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্য করে বলছিল তা দর্শকরা। ওই সময়টায় আমি হেসেছিলাম খুব। কারণ কখনোই নিউ জিল্যান্ডের দর্শকদের কাছ থেকে এমন কিছু শুনিনি আগে।

শেষ দিকের ব্যাটিং বিপর্যয় এই জায়গাতেই করেছে বড় উপকার। নিউ জিল্যান্ডের ক্রিকেটার ও দর্শকদের বুঝিয়ে দিয়েছে, তোমরা যত ভালো হও কিংবা নিজেদের যত ভালোই ভাব না কেন, কখনোই ম্যাচের উপর থেকে মনোযোগ সরানো যাবে না। সেটি যদি করো, বিশেষত সেরা দলগুলোর বিপক্ষে-তাহলে এর ফল ভোগ করতে হবে। শেষ কয়েক ওভার এই শিক্ষাটি কিউইদের দিয়েছে দারুণভাবে।

সবচেয়ে বেশি হতাশ নিশ্চয়ই ম্যাককলাম। তাঁর আউট প্রতিপক্ষকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছে বলে। আজ হয়তো নিউ জিল্যান্ড পার পেয়ে গেছে। কিন্তু কোয়ার্টার-ফাইনাল বা সেমি-ফাইনালে প্রতিপক্ষকে সেই সুযোগ দিলে ভুগতে হতে পারে।

চূড়ান্ত বিশ্লেষণে এই ম্যাচটি কিউইদের জন্য সব অর্থেই দারুণ। জয় তো সবসময়ই আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। আর সেই জয় যখন আসে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানীয় কোনো দলের বিপক্ষে, খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস তখন বেড়ে যায় বহুগুণ। তারা বুঝতে পারে, সেরাদের বিপক্ষে খেলে ম্যাচ জেতার সামর্থ্য তাদের রয়েছে।

এই ম্যাচের আবহে নিউ জিল্যান্ডের সামর্থ্য নিয়ে ছিল নানা প্রশ্ন। সত্যি তারা কতটা ভালো দল? অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জিতে ওই প্রশ্নের জবাব দেওয়া গেছে ভালোভাবে। সেরা দলগুলোর মধ্যে যে তারা পড়ে, সেটি নিয়ে এখন আর সংশয় নেই।

এছাড়াও এই জয়ে পুলে সবার উপরে থাকার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হল নিউ জিল্যান্ডের। তাতে কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলবে অন্য পুলের চতুর্থ স্থানের দলের বিপক্ষে। তা সেটি যে দলই হোক না কেন, ওয়েলিংটনে স্বাগতিকদের বিপক্ষে শেষ আটে খেলার সম্ভাবনায় তাদের খুব খুশি হওয়ার কথা না।

এই ম্যাচটি দেখে আমার মনে হয়েছে ইডেন পার্কে আগে বোলিং করলে জয়ের সম্ভাবনা বাড়ে। কেন? মাঠের বাউন্ডারী সীমা বেশ ছোট। আগে ব্যাটিং করলে ব্যাটসম্যানদের মনের ভেতর সব সময় কাজ করে যে, অনেক স্কোর করতে হবে। নইলে প্রতিপক্ষ সেটি টপকে যাবে। এ কারণে তারা রানের চেষ্টাটা করে একটু বেশি। অস্ট্রেলিয়ানরা সেই দোষে দুষ্ট ছিল। মাঝে যখন টপাটপ উইকেট পড়ছিল, তখন একটু রয়েসয়ে খেলে সেট হওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল। তা না করে রানের পিছু তাড়া করেছে তারা।

অকল্যান্ডে আগে বোলিং করার লাভটা সেখানে। প্রতিপক্ষ দ্রুত রান তোলার চাপে থাকে বলে সুযোগটা নিতে পারে বোলাররা। আবার যদি বড় স্কোর হয়ে যায়, তাতেও খুব ক্ষতি নেই। দলে তখনো এ বিশ্বাস থাকবে যে, দু-একজন ব্যাটসম্যান জ্বলে উঠলে অসাধ্য নয় জেতা। তা সেটি যত বেশি রান তাড়া করে হোক না কেন!

ক্রিকেট-সাম্রাজ্যে অভিষেকের মাসখানেক আগে কি আমরা ব্ল্যাক ক্যাপসদের দেখলাম? হয়তো-বা। হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্তির সময় মার্টিন ক্রো যেমনটা বললেন, আমরা কিউইরা ওই সাহসী-স্বপ্নটাই দেখছি।

তবে সেজন্য এখনো পাড়ি দিতে হবে আরো অনেক দূরের পথ। ম্যাককালাম ও তার দলের খেলোয়াড়দের চেয়ে সেটি ভালো জানে কে!

-আইসিসিরি সৌজন্যে