পাকিস্তানের 'শেষ সুযোগ'

দুই ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের প্রাপ্তি শূন্য। জাভেদ মিয়াঁদাদ আর ওয়াসিম আকরামরা সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন। মিসবাহ-উল হক অবশ্য কিছুতে কান দিচ্ছেন না। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে নকআউটে ওঠার 'শেষ সুযোগটা' কাজে লাগানোর দিকেই মনোযোগ পাকিস্তান অধিনায়কের।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2015, 02:39 PM
Updated : 1 March 2015, 05:01 AM

রোববার অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের গ্যাবায় প্রথম দুই ম্যাচে হেরে যাওয়া পাকিস্তান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায়।   
 
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলাটি এই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের তৃতীয় ম্যাচ। এই ম্যাচ হেরে গেলেও কাগজকলমের হিসাবে পাকিস্তানের সম্ভাবনা টিকে থাকবে। তবে বাস্তবতার আতশিকাচ দিয়ে তাকালে হিসেবটা একটু কঠিন মনে হওয়াই স্বাভাবিক। 
 
জিম্বাবুয়ের পর পাকিস্তান গ্রুপ পর্বে তাদের বাকি তিনটি ম্যাচে খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। মিসবাহর দলের যে অবস্থা, তাতে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের জয় পাওয়াকে অনেকেই দূরাশা ভাবছেন। 
 
সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের জয় পাওয়ার সম্ভাবনা শুধু আরব আমিরাত আর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। তাই জিম্বাবুয়ের কাছে হারলে মাত্র ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করার সম্ভাবনাই বেশি পাকিস্তানের। এদিকে জিম্বাবুয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলে চার ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট হয়ে যাবে তাদের। 
 
৪ পয়েন্ট নিয়ে নকআউটে যাওয়ার সম্ভব হবে না, এটা বলেই দেওয়া যায়। কারণ, এরই মধ্যে ভারত ৩ ম্যাচ থেকে ৬ পয়েন্ট পেয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ ম্যাচ থেকে পেয়েছে ৪ পয়েন্ট। ২ ম্যাচ থেকে আয়ারল্যান্ডের পয়েন্ট ৪, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ ম্যাচ থেকে পেয়েছে ৪ পয়েন্ট।   
 
৩ ম্যাচ থেকে ২ পয়েন্ট পাওয়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই ম্যাচটি পাকিস্তানের জন্য তাই আসলেই 'শেষ সুযোগ'। এই সুযোগ আলিঙ্গন করে নকআউটের আশা বাঁচিয়ে রাখতে মরিয়া মিসবাহ। 
 
"আমি মনে করি, আমাদের জন্য আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার একটা সুযোগ এটা। জিম্বাবুয়ে ভালো দল। সবাই জানে যে, নিজেদের দিনে তারা অনেক ভালো করতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয়, এটা আমাদের সুযোগ।”

পাকিস্তানের 'সুযোগ'-এর ম্যাচের আগে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক এল্টন চিগুম্বুরাও বেশ আত্মবিশ্বাসী। তবে দলের বোলিং নিয়ে কিছুটা চিন্তিত তিনি।

গত ম্যাচগুলোতে ইনিংসের শেষ দিকে ভালো বল করতে পারেনি জিম্বাবুয়ের বোলাররা। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। অন্য ম্যাচটি জিম্বাবুয়ে আমিরাতের বিপক্ষে খেলেছে এবং একমাত্র জয়টি সেই ম্যাচেই।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে জয়ের প্রত্যয়ের কথা উল্লেখ করে বোলিং-দুশ্চিন্তার কথা বলেন চিগুম্বুরা।

"ইনিংসের শেষ দিকে বল ভালো করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি আমরা। আশা করি, আগামীকাল (রোববার) আমরা পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারব।"

ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং-পাকিস্তানের কোনোটিই তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি আগের দুই ম্যাচে। এর সঙ্গে বাড়তি ধাক্কা হয়ে এসেছে প্রধান নির্বাচক মইন খানের ক্যাসিনো-বিতর্ক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচের আগে তার ক্যাসিনোতে যাওয়া নিয়ে তুমুল ঝড় ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরে যেতে হয়।

মাঠের বাজে পারফরম্যান্সের সঙ্গে এইসব বিতর্ক মিলে একদমই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পাকিস্তান। অনেকে আবার বলছেন, পাকিস্তানের এই কোণঠাসা হয়ে পড়াটাই তাদের জাগিয়ে তুলবে। উদাহরণ হিসেবে কেউ কেউ ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপকে সামনে নিয়ে আসছেন।

১৯৯২ বিশ্বকাপে ইমরান খানের পাকিস্তান প্রথম পর্বের প্রথম ৫ ম্যাচে মাত্র একটি ম্যাচই জিতেছিল। এরপর আর কোনো ম্যাচ হারেনি তারা। নিজেদের ক্রিকেট ইতহাসে একমাত্র বিশ্বকাপ ট্রফিটি সেবারই জেতে পাকিস্তান।

'কখনোই হাল ছেড়ো না'-ইমরানের দলের সেই মন্ত্র নিয়েই এগিয়ে যেতে চান মিসবাহ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসের পালে হাওয়া ভরে নিতে এর সঙ্গে আছে অতীত লড়াইয়ের সমৃদ্ধ ইতিহাস।

দুই দলের এ পর্যন্ত মুখোমুখি ৪৭ ম্যাচের একটিতে কোনো ফল হয়নি, একটি হয়েছে টাই। বাকি ৪৫ ম্যাচের ৪২টিতেই জয় পেয়েছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপ স্বপ্ন তরতাজা রাখতে এই ম্যাচেও পরিসংখ্যানের এই সাফল্যের পথেই হাঁটতে হবে তাদের।