উইলিয়ামসনের ছক্কায় নিউ জিল্যান্ডের শ্বাসরুদ্ধকর জয়

কম রানের পুঁজি নিয়েও ম্যাচটা প্রায় জিতেই যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের দুই আয়োজকের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে ছক্কা মেরে নিউ জিল্যান্ডকে জয় এনে দিলেন কেন উইলিয়ামসন।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2015, 01:14 AM
Updated : 28 Feb 2015, 01:11 PM

ট্রেন্ট বোল্টের অসাধারণ এক স্পেলের পর ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ঝড়; সঙ্গে কেন উইলিয়ামসনের শেষদিকের বীরত্ব। এই তিনের যোগফলে ১ উইকেটের এই জয় তুলে নেয় কিউইরা। বিফলে যায় মিচেল স্ট্যার্কের ক্যারিয়ার-সেরা ৬ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার অবিশ্বাস্য লড়াই।

বোল্টের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। বাঁহাতি এই পেসারের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ছোটো মাঠে ছোট লক্ষ্য পায় নিউ জিল্যান্ড। আর ম্যাককালাম ঝড়ে যথারীতি উড়ন্ত সূচনা পায় স্বাগতিকরা। ২১ বলে অর্ধশতকে পৌঁছানো এই ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর মিচেল স্ট্যার্কের দাপটে ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। তবে শেষরক্ষা হয়নি, চাপ সামলে ১৬১ বল বাকি থাকতেই নিউ জিল্যান্ডেকে জয় এনে দেন হার না মানা উইলিয়ামসন।

শনিবার অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৩২ ওভার ২ বলে ১৫১ রানে অলআউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ২৩ ওভার ১ বলে ৯ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় নিউ জিল্যান্ড।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৩ বল স্থায়ী ৪০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে শুরুটা ভালো হয় নিউ জিল্যান্ডের। মিচেল স্ট্যার্কের বলে মার্টিন গাপটিল প্যাট কামিন্সের ক্যাচে পরিণত হলেও রানের গতিতে ভাটা পড়েনি।

দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন অধিনায়ক ম্যাককালাম। অর্ধশতকে পৌছানোর পর কামিন্সের শিকারে পরিণত হন তিনি। ৫০ রান করা ম্যাককালামের ২৪ বলের বিধ্বংসী ইনিংসটি ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় গড়া।

নবম ওভারের আবার আঘাত হানেন স্ট্যার্ক। লেগের দিকে বল ঘুরাতে চেয়েছিলেন রস টেইলর। বলে ব্যাট লাগাতে না পেরে বোল্ড হয়ে যান তিনি।

টেইলরের আউটের পর বিরতিতে যায় ম্যাচ। ফিরেই গ্র্যান্ট এলিয়টকে বোল্ড করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান স্ট্যার্ক। এলিয়টের প্যাড ও ব্যাটের ফাঁক গলে বল মিডল স্টাম্পে আঘাত হানে।

স্ট্যার্কের হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেয়া কোরি অ্যান্ডারসনকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন উইলিয়ামসন। ৭৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া নিউ জিল্যান্ডকে জয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা।

শুরুতে ভাগ্যের বেশ সহায়তা পান অ্যান্ডারসন। অল্পের জন্য ক্যাচে পরিণত হননি তিনি, ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হওয়ার হাত থেকে একটুর জন্য বেঁচে যান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

এক সময়ে নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ১৩১ রান। জয়ের জন্য ২১ রান প্রয়োজন ছিল তাদের। এই সময়ে দ্রুত পাঁচ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নিউ জিল্যান্ড। যার শুরু অ্যান্ডারসনের বিদায় দিয়ে।

উইলিয়ামসনের সঙ্গে অ্যান্ডারসনের ৫২ রানের জুটি ভাঙার কৃতিত্ব গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিডঅনে কামিন্সের চমৎকার নিচু ক্যাচে পরিণত হন অ্যান্ডারসন।

ছক্কা মেরে শুরু করা লুক রনকি টেকেন মাত্র ৭ বল। স্ট্যার্কের দারুণ বাউন্সারে ব্র্যাড হ্যাডিনের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফিরেন তিনি।

মিচেল মার্শের ফুলটস বলে কামিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে ড্যানিয়েল ভেটোরির বিদায়ে অস্বস্তিতে পড়ে নিউ জিল্যান্ড।

ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো পরপর দুই বলে উইকেট নিয়ে স্ট্যার্ক ম্যাচ আরো জমিয়ে তুলেন। অ্যাডাম মিল্ন ও টিম সাউদিকে বোল্ড করার পর তিনি দুটি বল করার সুযোগ পেয়েছিলেন এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান বোল্টকে।

সেই দুই বল ঠেকিয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখেন বোল্ট। পরের ওভারের প্রথম বলেই বিশাল এক ছক্কা হাকিয়ে দলকে জয় এনে দেন উইলিয়ামসন। ৪৫ রানে অপরাজিত থাকা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ৪২ বলের ইনিংসটি চার আছে ৫টি।

২৮ রানে ৬ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার স্ট্যার্ক। তবে ওয়ানডেতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে পরাজিত দলেই থাকতে হলো তাকে। আগের সেরা ছিল ৬/৪৩।

এর আগে ম্যাচের শুরুটা দেখে কিন্তু বোঝা যায়নি ইনিংসের শেষে এই হাল হবে বিশ্বকাপের ফেভারিটদের। অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দলকে।

এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী সাউদির করা প্রথম ওভারেই ১৫ রান নেয় অতিথিরা। ঘুরে দাঁড়াতে অবশ্য বেশি সময় নেননি আগের ম্যাচেই ৭ উইকেট নেয়া এই পেসার।

তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই লংঅন দিয়ে ছক্কা হাকান ফিঞ্চ। পরের বলেই তাকে বোল্ড করে ‘ব্রেক থ্রু’ এনে দেন সাউদি। তবে তাতেও কমেনি অস্ট্রেলিয়ার রানের গতি। শেন ওয়াটসনকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন ওয়ার্নার।

দ্বিতীয় উইকেট জুটির ৫০ রানের প্রতিরোধ ভাঙেন ভেটোরি। ১ উইকেটে ৮০ রানে পৌঁছানো অস্ট্রেলিয়ার বিপর্যয়ের শুরু তার বলে ওয়াটসনের বিদায়ে।

সীমানায় ওয়াটসনের ক্যাচ নিয়ে বল করতে এসেই ওয়ার্নারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সাউদি। রিভিউ নিয়েছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু বদলায়নি আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত।

স্টিভেন স্মিথকে রনকির ক্যাচে পরিণত করে অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলেন ভেটোরি।

প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে ২৪ রান দেয়া বোল্ট ভয়ঙ্কর হয়ে ফেরেন দ্বিতীয় স্পেলে। এই স্পেলের প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাতে ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল মার্শকে ফিরিয়ে দেন এই ম্যাচ সেরা খেলোয়াড়। অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটসম্যানই ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হয়ে যান।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরাটা স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি মাইকেল ক্লার্ক। বোল্টের পরের ওভারেই শর্ট কাভারে উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক।

পরের ওভারে ফিরে আবার জোড়া আঘাত বোল্টের। মিচেল জনসন ও স্ট্যার্ককে ফিরিয়ে ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নেন বোল্ট। জনসন শর্ট কাভারে উইলিয়ামসনের ক্যাচে পরিণত হন। স্ট্যার্ক বল ব্যাটে না লাগতে পেরে বোল্ড হয়ে ফিরেন।

দ্বিতীয় স্পেলে ৫ ওভার বল করে তিন রানে ৫ উইকেট নেন বোল্ট।

১ উইকেটে ৮০ থেকে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর হয় ৯ উইকেটে ১০৬ রানে। ২৬ রান যোগ করতে ৮ উইকেট হারায় দলটি।

বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বনিম্ন রানে অলআউটের লজ্জা থেকে অস্ট্রেলিয়াকে বাঁচানোর কৃতিত্ব হ্যাডিনের। পাল্টা আক্রমণে ৪৩ রান করেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। দশম উইকেটে কামিন্সের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি গড়েন তিনি।

বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন রান ১২৯। ১৯৮৩ সালের আসরে ভারতের বিপক্ষে এই রান করেছিল তারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ৩৩.২ ওভারে ১৫১ (ফিঞ্চ ১৪, ওয়ার্নার ৩৪, ওয়াটসন ২৩, ক্লার্ক ১২, স্মিথ ৪, ম্যাক্সওয়েল ১, মার্শ ০, হ্যাডিন ৪৩, জনসন ১, স্ট্যার্ক ০, কামিন্স ৭*; বোল্ট ৫/২৭, ভেটোরি ২/৪১, সাউদি ২/৬৫, অ্যান্ডারসন ১/৬)

নিউ জিল্যান্ড: ২৩.১ ওভারে ১৫২/৯ (গাপটিল ১১, ম্যাককালাম ৫০, উইলিয়ামসন ৪৫*, টেইলর ১, এলিয়ট ০, অ্যান্ডারসন ২৬, রনকি ৬, ভেটোরি ২, মিল্ন ০, সাউদি ০, বোল্ট ০*; স্ট্যার্ক ৬/২৮, কামিন্স ২/৩৮, ম্যাক্সওয়েল ১/৭)

ম্যাচ সেরা: ট্রেন্ট বোল্ট।