'শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ড ম্যাচে মূল ভূমিকা রাখবে বোলাররা'

গত বছরের ওয়ানডে সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দাপটের সঙ্গে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু রোববারের ম্যাচে এর কোনো প্রভাব থাকবে বলে মনে করছেন না মুত্তিয়া মুরালিধরন। আগের সিরিজের ফলে প্রভাবিত হয়ে একাদশে যেন দুই স্পিনার না খেলানো হয়, সেই সর্তকবার্তাও দিয়েছেন এই কিংবদন্তি স্পিনার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2015, 05:42 PM
Updated : 28 Feb 2015, 12:21 PM

নিউ জিল্যান্ডের কাছে হেরে বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো হয়নি শ্রীলঙ্কার। কিন্তু এরপর তারা নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে বেশ। খেলছে এমন ক্রিকেট, যা পছন্দ হচ্ছে আমার।

সত্যি যে, টুর্নামেন্টের সহ-আয়োজকদের কাছে হারের পর তুলনামূলক দুর্বল দুই প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছে তারা। এটিও মিথ্যা নয়, আফগানদের বিপক্ষে মাহেলা জয়াবর্ধনে ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের অসাধারণ এক জুটিতে বিপদ কাটিয়ে নিশ্চিত হয়েছে জয়। তবে শেষ পর্যন্ত জয় তো জয়ই। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে যেভাবে খেলেছে শ্রীলঙ্কা, সেটি সামর্থ্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

লাহিরু থিরিমান্নে, তিলকারত্নে দিলশান, কুমার সাঙ্গাকারাদের সবাই রান পেয়েছে মেলবোর্নের ম্যাচে। ব্যাটিংটা তাই হঠাৎ যেন মনে হচ্ছে প্রতিপক্ষের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সঙ্গে যোগ করুন, চোটে পড়া অলরাউন্ডার জীবন মেন্ডিসের জায়গায় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্তি। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং তাই ঠিক পথে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

মেন্ডিসের জন্য ব্যাপারটি বেশ কঠিন। বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্ট থেকে চোটের কারণে ছিটকে যেতে কারোই ভালো লাগার কথা না। কিন্তু আমি তো আগে থেকে বলে আসছি, ওই কন্ডিশনে ওর মতো স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার অতো কার্যকর হবে না। থারাঙ্গাকে মূল স্কোয়াডে রাখার পক্ষপাত ছিল আমার। এখন ভিন্ন পরিস্থিতিতে দলে এসেছে ও। এতে দলের ভারসাম্য বাড়বে নিঃসন্দেহে। আর বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে খেলার প্রচুর অভিজ্ঞতা থারাঙ্গার থাকায় সেটি সাহায্য করবে দলকে।

এত কিছু বলার পরও শ্রীলঙ্কা দলকে আমি সতর্ক করতে চাই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি বিশেষত তাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখছি বলে।

শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের জন্য অস্ট্রেলিয়ান কন্ডিশনে খেলা তুলনামূলক সহজ। কারণ সেখানে সুইং থাকে কম। বাড়তি যে বাউন্স, সেটি সামলানোর সামর্থ্য আছে ওদের। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই অস্ট্রেলিয়ায় খেলার পর আবার নিউ জিল্যান্ডে ফেরাটা তাই লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন। বিশেষত মাঝের সময়টা যখন মোটে দুই দিনের। প্রস্তুতির জন্য যা মোটেও আদর্শ না।

ওদিকে ইংল্যান্ড আবার নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকবে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের কাছে দুই ম্যাচে বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল তারা, এর মধ্যে পরেরটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের ভেন্যু ওয়েলিংটনেই। টুর্নামেন্টে অমন বাজে শুরুর পর অবশেষে জয়ের মুখ দেখেছে ইংল্যান্ড। আর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচের জয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে নিঃসন্দেহে।

আমার মনে কোনো সন্দেহ নেই, শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ড ম্যাচে জিতবে তারাই, যারা ভালো বোলিং করবে। ওই বড় দুটো হারে ইংল্যান্ডের পেস-আক্রমণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার স্বাভাবিক। কিন্তু শ্রীলঙ্কান সিমাররাও তো খুব ভালো করতে পারছে না। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে বড় প্রাপ্তি, নতুন বলে লাসিথ মালিঙ্গার ফর্মে ফেরা। ওর বোলিংয়ে পুরনো দিনের ছায়া আমি দেখতে পেয়েছি। শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ অভিযানে মালিঙ্গার আগুনে বোলিংয়ের গুরুত্ব অসীম।

আমি আশা করব, গত বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের ফলে খুব গুরুত্ব দেবে না শ্রীলঙ্কা। হ্যাঁ, সিরিজটি ৪-২ ব্যবধানে জেতার কারণে সেটি ছেলেদের জন্য মধুর স্মৃতি হয়ে আছে। সেটি স্মৃতিই! ভিন্ন কন্ডিশনে অনুষ্ঠেয় রোববারের ম্যাচে আগের সিরিজের বিন্দুমাত্র প্রভাব তাই থাকবে না।

ওই সিরিজে স্পিনারদের সামলাতে বড্ড হিমশিম খেয়েছে ইংল্যান্ড। তবে নিউ জিল্যান্ডের কন্ডিশনে লঙ্কান স্পিনারদের কার্যকারিতা অমন থাকার কথা না। মালিঙ্গাকে পুরোভাগে রেখে শ্রীলঙ্কার পেসারদের বরং এদিন বোলিং-নেতৃত্ব দেওয়া প্রয়োজন। আমি তাই বলব, রঙ্গনা হেরাথের পাশাপাশি দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে সচিত্রা সেনানায়েকেকে খেলার লোভ যেন সামলায় তারা।

অনেকের কাছে এই ম্যাচটির হয়তো অত গুরুত্ব নাও থাকতে পারে। কেননা, এদিন যে জিতুক বা হারুক, দুটি দলই কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছানোর আশা করছে। আমি কিন্তু মনে করি, রোববারের ম্যাচে জয়ের গুরুত্ব ব্যাপক। যারা জিতবে শেষ আটে তারা ভারতকে এড়াতে পারবে বলে আমার ধারণা। কেননা পুল ‘বি’ থেকে ভারত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে ধরে নিচ্ছি। পুল ‘এ’-র চতুর্থ দলের বিপক্ষে কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলবে তারা। ভারতকে এড়ানোর জন্য তাই শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ড ম্যাচে জেতাটা দুই দলের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজে এবং ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে ধুঁকতে থাকা ভারতের সঙ্গে বিশ্বকাপের ভারতের অনেক পার্থক্য।

শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ড ম্যাচে যারা জিতবে, তাদের তাই পুলে তৃতীয় হওয়ার সুযোগ থাকবে। এমনকি দ্বিতীয় হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

-সৌজন্যে আইসিসি।