আমিনুলের কলাম: পাঁচ বোলার নিয়ে খেলতে পারত বাংলাদেশ

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রথমবার খেলার রোমাঞ্চ ছিল ম্যাচের আবহে। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলাটিতে মনে রাখার মতো পারফর্ম করতে পারেনি বাংলাদেশ। বাজে ফিল্ডিং, এলোমেলো বোলিং, সেরা দুই ব্যাটসম্যানকে ছয়-সাত নম্বরে নামানো আর একাদশ নির্বাচন- দলের পারফরম্যান্স নিয়ে অনেক প্রশ্ন আমিনুল ইসলামের। বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ অধিনায়ক অবশ্য এরপরও এই ঐতিহাসিক ম্যাচে গৌরবময় মুহূর্ত খুঁজে পেয়েছেন কিছু।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2015, 04:21 PM
Updated : 27 Feb 2015, 04:21 PM

বিখ্যাত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে এই প্রথমবারের মতো খেলল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি তাই ছিল ঐতিহাসিক এক ঘটনা। এই ম্যাচের আবহে কত আত্মবিশ্বাসীই না ছিল দলটি! আফগানিস্তানের বিপক্ষে স্বচ্ছন্দ্য জয় এবং ফেভারিট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেয়ে বিশ্বকাপের পরের রাউন্ডে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছিল তারা। অন্যদিকে নিজেদের প্রথম দুই খেলায় শ্রীলঙ্কা ছিল বেশ এলোমেলো। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হার ছিল প্রতিরোধহীন আর আফগানিস্তানকেও হারিয়েছে কোনোমতে। এসব কারণে মেলবোর্নের দ্বৈরথ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দুই দলের কাছেই ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

টসভাগ্যে হাসির পর ব্যাটিং বেছে নিতে এতটুকু ভাবতে হয়নি লঙ্কান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও ঠিক লাইন-লেন্থে শুরু করে বোলিং। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল, তার এই প্রচেষ্টা সতীর্থ ফিল্ডারদের সমর্থন পায়নি। তাদের আঙ্গুল গড়ে পড়তে থাকে ক্যাচের পর ক্যাচ। তিন ক্যাচ ড্রপ ও এক স্টাম্পিং মিস বাংলাদেশের জঘন্য ফিল্ডিংয়ের প্রতিচ্ছবি। ইনিংসের প্রথম ওভারে এনামুল হক ক্যাচ ফেলেছে স্লিপে। বেঁচে যাওয়া ব্যাটসম্যান লাহিরু থিরিমান্নে পরে বেঁচেছে স্টাম্পিং হতে হতেও। কুমার সাঙ্গাকারার ক্যাচ পড়েছে ২৩ ও ৬০ রানে, নিজের বলে ফিরতি ক্যাচ নিতে ব্যর্থ তাসকিন আহমেদ আর পয়েন্টে সহজতম সুযোগ নষ্ট মমিনুল হকের। এনামুল আরেকবার তিলকারত্নে দিলশানকে রান আউট করার সুযোগ পেয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এতসব সুযোগের কোনোটির কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশের ফিল্ডাররা।

তাসকিনের কথা একটু আলাদা করে বলি। এমসিজির উইকেট থেকে ভালো গতি ও বাউন্স পেয়েছে এই টিনএজার। তবে আমার মনে হয়েছে, ওর মনোযোগ ছিল কেবল ওই গতি বাড়ানোর দিকেই। যে কারণে লাইন-লেন্থের নিয়ন্ত্রণটা হারিয়ে ফেলে। লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের অন্তত বাড়তি ৫০ রান ‘উপহার’ দিয়েছে তাই। ভাবা যায়, তাসকিন ৮৭ শতাংশ বল করেছে ভুল জায়গায়! দিলশান ও সাঙ্গাকারা এর ফায়দা তুলেছে পুরোমাত্রায়। দলের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও সিনিয়র ক্রিকেটারদের উচিত ছিল, ওকে ঠিকঠাক গাইড করা।

আমি মনে করি, এই ম্যাচে বাংলাদেশ পাঁচ বোলার নিয়ে খেলতে পারত। চার বোলারে একাদশ সাজানোর কারণে তাদের হিমশিম খেতে হয় বেশ। বাংলাদেশের ফিল্ড সাজানোও ভালো হতে পারত আরো। আমার মতে, স্লিপ ফিল্ডাররা একটু বেশি পেছনে দাঁড়িয়েছে। আর উইকেটরক্ষক ও প্রথম স্লিপের মধ্যে দূরত্বটাও ছিল বেশি। ওই অঞ্চল গিয়ে বেশ কিছু সুযোগ গলে যায় তাই।

আর এসবের সুযোগ শ্রীলঙ্কা যে ভালোভাবেই নেবে, তাতে আর আশ্চর্য কী!

শুরুতে থিরিমান্নে ও দিলশানের মজবুত উদ্বোধনী জুটি। এরপর দিলশান ও সাঙ্গাকারার জাদুকরী অবিচ্ছিন্ন ২১০ রানের জুটিতে বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় পুরোপুরি। দিলশান নিজের সর্বোচ্চ ওয়ানডে স্কোর করে অপরাজিত থাকে ১৬১ রানে। আর সাঙ্গাকারা নিজের ৪০০তম ওয়ানডে উদযাপন করে ২০তম শতকে। ৭৬ বলের এই শতরান তাঁর দ্রুততম।

শ্রীলঙ্কা রান তুলে ফেলে তিনশর উপর। আর এত বড় লক্ষ্যের পিছু ধাওয়া করতে গিয়ে একেবারে খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। যাদের টেকনিক ভালো, এমন ব্যাটসম্যানদের যত বেশি সম্ভব বল খেলা উচিত ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের সেরা দুই ব্যাটসম্যান সাকিব ও মুশফিক নামে ব্যাটিং অর্ডারের ছয় ও সাত নম্বরে। এই এক সিদ্ধান্তে শ্রীলঙ্কাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর নূন্যতম সম্ভাবনা দূর হয়ে যায়। এই দুজন ক্রিজে একত্রিত হতে হতে অর্ধেকের বেশি ওভার যায় চলে। এরপরও ওরা চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ৬৪ রানের জুটির পর সাকিবের বাজে শটে ভেঙে যায় জুটি। শেষ পর্যন্ত ২৪০ রানে গুটিয়ে গিয়ে ৯২ রানে ম্যাচটি হেরে যায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ইনিংসের অন্যতম হাইলাইট ছিল, আট নম্বরে নেমে সাব্বির রহমানের ওয়ানডেতে প্রথম ফিফটি। এই তরুণের ফিল্ডিং ছিল চৌকস, ব্যাটিং দুর্দান্ত আর রানিং বিটুইন দ্য উইকেট খরগোশের মতো। ওর সামনে দীর্ঘ উজ্জ্বল ভবিষ্যত বলে আমার বিশ্বাস।

এই ম্যাচে বাংলাদেশের গৌরবের মুহূর্ত কম আসেনি। বিখ্যাত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশের পতাকা উড়েছে, বেজেছে জাতীয় সঙ্গীত। যখনই একটু ভালো খেলেছে দল, জার্সি গায়ে তাদের হাজার পাঁচেক সমর্থক নেচে-গেয়ে করেছে উপভোগ। ম্যাচের আগে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে এই আমার সৌভাগ্য হয়েছে, মেলবোর্নের দর্শকদের সামনে বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে প্রবেশ করার।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে যাওয়ার পর এখন বাংলাদেশের পরের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড। খেলাটি হবে নিউ জিল্যান্ডে, যেখানে বাংলাদেশ এখনো খেলেনি কিন্তু স্কটল্যান্ড খেলেছে কয়েকটি ম্যাচ। কোনো সন্দেহ নেই, ওখানকার কন্ডিশন বাড়তি সুবিধা দেবে স্কটিশদের। তবে বাংলাদেশেরও একটি সুবিধা থাকবে। অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে নিউ জিল্যান্ডের উইকেট তুলনামূলক ধীরগতির। সে কারণে একাদশে বাড়তি স্পিনার খেলানোর সুযোগ থাকবে।

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি জিতলে সেটি বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে নিঃসন্দেহে। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ খেলা। অ্যাডিলেইডের উইকেটের কারণে সে ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের আধিপত্য থাকার কথা। আর মাঠের আকৃতির কথা মাথায় রেখে বোলারদের উচিত উইকেটের কাছাকাছি বোলিং করা। অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকার কারণে ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ ম্যাচে ইংল্যান্ডকেই এগিয়ে রাখব আমি।

-আইসিসির সৌজন্যে।