উন্মাদনা ছড়াবে যে মাঠগুলোয়

বছর চারেক বিরতিতে আরেকটি ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলে এসেছে প্রায়। অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের ১৪টি মাঠে ম্যাচের প্রতি মুহূর্তে তৈরি হবে উন্মাদনা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2015, 11:34 AM
Updated : 11 Feb 2015, 11:26 AM

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি), মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া

বিশ্বের অন্যতম বড় ও বিখ্যাত স্টেডিয়াম এটি। ১৮৫৪ সালে মূলত ক্রিকেট স্টেডিয়াম হিসেবে তৈরি করা হয় এক লক্ষ দর্শক ধারণ ক্ষমতার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। ১৯৫৬ সালের অলিম্পিকের মূল ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এটি। সর্বশেষ যেবার বিশ্বকাপ হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে, সেই ১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছিল এখানেই।

১৮৭৭ সালে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্টের ভেন্যুও মেলবোর্ন, যেখানে ৪৫ রানে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৯৭১ সালে ইতিহাসের প্রথম ওয়ানডে মঞ্চস্থ হয় এখানে, সেখানেও জয় স্বাগতিকদের। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মেলবোর্নে তাদের সর্বশেষ জয় ২০১৩ সালে বক্সিং ডেতে। টেস্ট ম্যাচে রেকর্ড ৯১ হাজার ১১২ জন দর্শক ছিলেন সেদিন।

আসছে বিশ্বকাপে এই মেলবোর্নে ফাইনালসহ হবে পাঁচটি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড, ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচ ছাড়া দ্বিতীয় কোয়ার্টার-ফাইনালও হবে এখানে।

সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এসসিজি), সিডনি, অস্ট্রেলিয়া

উনিশ শতকের মধ্যভাগে জলাভূমি ভরাট করে তৈরি করা হয় সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এসসিজি)।অস্ট্রেলিয়ার উইকেটেগুলোর মধ্যে ঐতিহ্যগতভাবে একমাত্র এখানেই স্পিনারদের জন্য কিছু টার্ন থাকে। ক্রিকেটে ফ্লাডলাইটের আলোয় প্রথম ম্যাচ হয় এই মাঠে- ১৯৭৮ সালে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে।

২০১৫ বিশ্বকাপে ৪৪ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হবে পাঁচটি ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান-ইংল্যান্ডের বাইরে প্রথম কোয়ার্টার-ফাইনাল ও দ্বিতীয় সেমি-ফাইনাল হবে এখানে।

অ্যাডিলেইড ওভাল, অ্যাডিলেইড, অস্ট্রেলিয়া

সংস্কারের পর পুরনো রোমাঞ্চ কমে গেছে হয়তো, তবে অ্যাডিলেইড ওভাল এখনো দুর্দান্ত এক ভেন্যু। উইকেটের আড়াআড়ি বাউন্ডারি তুলনামূলক ছোট হওয়ায় এটি ব্যাটসম্যানদের জন্য রীতিমতো স্বর্গ। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের প্রিয় মাঠ এই অ্যাডিলেইড ওভাল। ডিসেম্বেরে ভারতের বিপক্ষে তার টেস্ট সেঞ্চুরিটি এই মাঠে সপ্তম।

বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচের প্রতিশ্রুতি আছে ৫০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই অ্যাডিলেইডে- ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। এছাড়াও গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড-পাকিস্তান ম্যাচ ছাড়াও তৃতীয় কোয়ার্টার-ফাইনালটি হবে এখানে।

ডব্লিউএসিএ গ্রাউন্ড, পার্থ, অস্ট্রেলিয়া

বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির উইকেট হিসেবে এই মাঠ প্রায় সর্বজনস্বীকৃতি। ফাস্ট বোলারদের আগুনের গোলায় এখানে ঝড় ওঠে প্রায়শ। বিকেলে সমুদ্রের হাওয়া ফাস্ট বোলারদের গতি ও সুইং বাড়িয়ে দেয় আরও, সফরকারী ব্যাটসম্যানদের জন্য যেটি বড় পরীক্ষা হবে।

আসছে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের তিনটি খেলা হবে সাড়ে ২৪ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়ামে- ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তান ও ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ব্রিসবেন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া

ব্রিসবেনের এই মাঠটি তৈরি ১৮৯৬ সালে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোনো টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটি সাধারণত আয়োজিত হয় এখানে।

গ্যাবা নামে পরিচিত এই মাঠের উইকেটে গতি প্রচুর; বাউন্সও। প্রতিপক্ষ দলগুলোর বড় পরীক্ষা নেয় এই ভেন্যু। ১৯৬০ সালে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে ইতিহাসের প্রথম টাই টেস্ট হয়েছিল এখানে।

অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড-সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান-জিম্বাবুয়ে- ২০১৫ বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচ হবে প্রায় ৪০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়ামে।

বেলেরিভ ওভাল, হোবার্ট, অস্ট্রেলিয়া

তাসমানিয়া রাজ্যের রাজধানী হোবার্টের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ডেরওয়েন্ট নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত ছবির মতো সুন্দর এই স্টেডিয়াম। অস্ট্রেলিয়ার মাঠগুলোর মধ্যে এটি তুলনামূলক নতুন। বেলেরিভ ওভালে প্রথম ওয়ানডে আয়োজিত হয়েছে ১৯৮৮ সালে; পরের বছর হয় টেস্ট ম্যাচ।

বিশ্বকাপ সামনে রেখে এই স্টেডিয়ামে সংস্কার করা হয়েছে। এখন এখানকার দর্শক ধারণক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজারে।

২০১৫ বিশ্বকাপে এই ভেন্যুতে হবে তিনটি ম্যাচ- আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে, স্কটল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়া-স্কটল্যান্ড।

মানুকা ওভাল, ক্যানবেরা, অস্ট্রেলিয়া

সফরকারী দলগুলোর প্রস্তুতি ম্যাচই আগে আয়োজন করা হত মানুকা ওভালে। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরার এই মাঠে প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় ১৯৯২ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে।

২০১৫ বিশ্বকাপে আফগানিস্তান-বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ-জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ তিনটির ১৩ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়ামে।

ইডেন পার্ক, অকল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড

১৯০০ সাল থেকে ক্রীড়াভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ইডেন পার্ক। ১৯১০ সাল থেকে অকল্যান্ড ক্রিকেট এবং ১৯২৫ সাল থেকে অকল্যান্ড রাগবির ঘরের মাঠ এটি।

১৯৯২ ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ হয়েছিল ইডেন পার্কে। ২০১১ রাগবি বিশ্বকাপ সামনে রেখে স্টেডিয়ামের গ্যালারি সংস্কার করায়, স্টেডিয়ামটি ক্রিকেটের চেয়ে রাগবির সঙ্গেই যায় বেশি। ওই খেলাতেই এখন এই স্টেডিয়ামের ব্যবহার বেশি।

ক্রিকেট মাঠের হিসেবে উইকেটের আড়াআড়ি উত্তর দিকে এবং সোজাসুজিতে বাউন্ডারির দৈর্ঘ্য বড্ড কম। বোলারদের জন্য তাই লাইন-লেন্থের গরমিল করার সুযোগ কম।

২০১৫ বিশ্বকাপে ইডেন পার্কের মঞ্চস্থ হবে চারটি ম্যাচ। দুই সহ-আয়োজক নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈরথ ছাড়াও পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ এবং প্রথম সেমি-ফাইনাল হবে ৫০ হাজার আসনের এই মাঠে।

সিডন পার্ক, হ্যামিল্টন, নিউ জিল্যান্ড

স্থানীয় বাসিন্দাদের বিনোদনের জন্য ১৮৬৪ সালে তৈরি করা হয় মাঠটি। ১৯০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী রিচার্ড সিডনের নামে নামকরণ হয় মাঠটির।

সিডন পার্কে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় ১৯৮১ সালে আর টেস্ট ১৯৯১ সালে।

২০১৫ বিশ্বকাপে এখানে হবে তিনটি ম্যাচ- দক্ষিণ আফ্রিকা-জিম্বাবুয়ে, ভারত-আয়ারল্যান্ড ও নিউ জিল্যান্ড-বাংলাদেশ।

ম্যাকলিন পার্ক, নেপিয়ার, নিউ জিল্যান্ড

১৯১০ সালে এর প্রতিষ্ঠা জনগণের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে এবং উনবিংশ শতাব্দীর রাজনীতিবিদ ডোনাল্ড ম্যাকলিনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। দুর্দান্ত ব্যাটিং উইকেট এবং উইকেটের আড়াআড়ি অল্প দৈর্ঘ্যের বাউন্ডারি রানফোয়ারার প্রতিশ্রুতি দেয় সবসময়।

আসছে বিশ্বকাপে পাকিস্তান-সংযুক্ত আরব আমিরাত, নিউ জিল্যান্ড-আফগানিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচ তিনটিতেও এর ব্যতিক্রম হবে না হবে দর্শকদের প্রত্যাশা।

ওয়েলিংটন স্টেডিয়াম, ওয়েলিংটন, নিউ জিল্যান্ড

বহুবিধ ব্যবহারের আরেকটি স্টেডিয়াম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের পাশাপাশি রাগবি ও ফুটবলের আয়োজনও এখানে নিয়মিত। হয় ওপেন-এয়ার কনসার্টও। ক্রিকেট ম্যাচ চলার সময় এখানের ৩০ হাজার দর্শকের উল্লাস রেকর্ড করে নিয়ে গিয়েছিলেন খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা পিটার জ্যাকসন। সেটি পরে ব্যবহার করা হয় ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ সিরিজের চলচ্চিত্রে।

২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়েলিংটনের এই স্টেডিয়ামে হবে চারটি ম্যাচ। চতুর্থ কোয়ার্টার-ফাইনাল ছাড়াও গ্রুপ পর্বে নিউ জিল্যান্ড-ইংল্যান্ড, ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা-সংযুক্ত আরব আমিরাতের ম্যাচগুলো হবে এখানে।

স্যাক্সটন ওভাল, নেলসন, নিউ জিল্যান্ড

বিশ্বকাপের সবচেয়ে স্বল্প দর্শকধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়াম এটি। সর্বোচ্চ হাজার পাঁচেক দর্শকই কেবল দেখতে পারবেন খেলা। নেলসনের স্থানীয় সরকার ক্রীড়া ও বিনোদনের জন্য পূর্ণাঙ্গ যে ক্রীড়া-কমপ্লেক্স গড়ে তুলেছেন, স্যাক্সটন ওভাল এর একটি অংশমাত্র।

এই মাঠে প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত বছরের জানুয়ারিতে, নিউ জিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে। বিশ্বকাপে এখানে হবে তিনটি ম্যাচ। আয়ারল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সংযুক্ত আরব আমিরাত-জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ-স্কটল্যান্ড।

হ্যাগলি ওভাল, ক্রাইস্টচার্চ, নিউ জিল্যান্ড

২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্পে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ হয় ক্রাইস্টচার্চের ল্যাঙ্কেস্টার পার্ক। স্থানীয় ক্রিকেট কর্মকর্তাদের তাই তৈরি করতে হয় নতুন ক্রিকেট ভেন্যু।

হ্যাগলি পার্কের সবুজে তাই তৈরি করা হয় নতুন স্টেডিয়াম। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে নিউ জিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা টেস্ট দিয়ে প্রথমবারের মতো সেখানে আয়োজিত হয় ক্রিকেট ম্যাচ। আর প্রথম ওয়ানডে ওই দুই দলের মধ্যেই, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে।

এমনিতে হ্যাগলি ওভালের ধারণক্ষমতা ৯ হাজার। তবে বিশ্বকাপ উপলক্ষে অস্থায়ী গ্যালারি তৈরি করে সেটি বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে ২০ হাজারে। নিউ জিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কার মধ্যে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে কোনো আসন শূন্য না থাকার পূর্বানুমান করাই যায়। এছাড়া পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড-স্কটল্যান্ডের ম্যাচ হবে এখানে।

ইউনিভার্সিটি ওভাল, ডানেডিন, নিউ জিল্যান্ড

নিউ জিল্যান্ডের আরেকটি ছবির মতো সুন্দর স্টেডিয়াম। শহরের বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এই মাঠে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় ২০০৮ সালে। ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমের (ডিআরএস) প্রথম ব্যবহার হয়েছিল এখানে, ২০০৯ সালে নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তান টেস্টে।

২০১৫ বিশ্বকাপে ছয় হাজার আসনের ইউনিভার্সিটি ওভালে হবে গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচ - নিউজিল্যান্ড-স্কটল্যান্ড, আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা, ও আফগানিস্তান-স্কটল্যান্ড।