কারাগারে গিয়ে শঙ্কায় রুবেলের বিশ্বকাপ

নারী নির্যাতন আইনে মামলায় কারাগারে যাওয়া রুবেল হোসেনের ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে সময়মতো অস্ট্রেলিয়ায় যেতে না পারলে এই পেসাররের বিকল্প নেওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2015, 08:33 AM
Updated : 8 Jan 2015, 06:48 PM

বৃহস্পতিবার চিত্রনায়িকা নাজনীন আকতার হ্যাপীর করা মামলায় রুবেলের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত।

হাই কোর্ট থেকে পাওয়া জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন দিন আগেই বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছিলেন আসন্ন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে ডাক পাওয়া পেসার রুবেল। কিন্তু শুনানি শেষে বিচারক রুবেলের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ দল অস্ট্রেলিয়ায় যাবে। সেদিন রুবেল যদি দলের সঙ্গে যেতে না পারে তবে তার বিকল্প হিসেবে কাউকে নেওয়া হবে।

রুবেলের মামলার বিষয়টি ব্যক্তিগত এবং আইনি প্রক্রিয়া চলায় এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি নিজাম উদ্দিন।

“বিষয়টির সমাধান হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেয়া ঠিক হবে না। মাত্রই বিষয়টি আমরা জেনেছি। বিসিবির নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।”

বিশ্বকাপ দলের সদস্যদের আনুষ্ঠানিক অনুশীলন শুরু হবে আগামী সোমবার।

বিশ্বকাপের দল গোছানোর সময় জামিনে ছিলেন রুবেল। তবে দল ঘোষণার সময় প্রয়োজন হলে এই পেসারের বিকল্প পাঠানো হবে বলে জানিয়েছিলেন বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান।
রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দল ঘোষণার সময় নাজমুল জানান, রুবেলকে দলে নেয়ার ক্ষেত্রে মামলার কথা বিবেচনা করেননি নির্বাচকরা। আর অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের কন্ডিশনে ছন্দে থাকা এই পেসারকে বাংলাদেশের প্রয়োজন।
এর আগে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে খেলেন রুবেল। তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে বলে রুবেলের আইনজীবী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
গত ১৩ ডিসেম্বর রুবেলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মিরপুর থানায় মামলা করেন হ্যাপী, যাতে ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দৈহিক সম্পর্ক’ গড়ার অভিযোগ আনা হয় এই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে।
এরপর ১৫ ডিসেম্বর রুবেল হাই কোর্টে হাজির হয়ে আগাম জামিন চাইলে বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীর বেঞ্চ চার সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর করে। আগামী রোববার পর্যন্ত ওই জামিনের মেয়াদ ছিল।
হ্যাপীর অভিযোগ নাকচ করে রুবেল বলে আসছেন, এই তরুণী তাকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করছে।
হ্যাপী নারী নির্যাতন আইনে মামলা করায় পুলিশের তত্ত্বাবধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ডাক্তারি পরীক্ষাও হয়েছে।
ওই পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি হ্যাপীকে জোর করে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করা হয়েছে, এমন কোনো আলামত চিকিৎসকরা পাননি।
হ্যাপীর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক মো. মাসুদ পারভেজের আবেদনে গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার একটি আদালত রুবেলের ডিএনএ পরীক্ষারও অনুমতি দিয়েছে।
২১ বছর বয়সী হ্যাপীর দাবি, ফেইসবুকের মাধ্যমে প্রায় এক বছর আগে তার সঙ্গে পরিচয় হয় রুবেলের। বিয়ের কথা বলে নয় মাস ধরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখছিলেন রুবেল।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী হ্যাপী ‘কিছু আশা কিছু ভালবাসা’ চলচ্চিত্রে প্রধান অভিনেত্রীর ভূমিকায় ছিলেন। তার অভিনীত আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র মুক্তির অপেক্ষায়।
তার অভিযোগ, রুবেল অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার পর তাকে এড়িয়ে চলায় তিনি আইনের আশ্রয় নেন।
রুবেলকে জাতীয় দল ও বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ দেওয়ার জন্য হ্যাপী হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করলেও আদালত তা খারিজ করে দেয়। এর বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলেও ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।