ভারতকে গুঁড়িয়ে ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার জয়

অ্যাডিলেইড টেস্টের মতো লড়তে পারেনি ভারত; একদিন বাকি থাকতেই তাই ব্রিসবেন টেস্ট জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনে ভারতকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ৪ উইকেটের সহজ জয় পেয়েছে স্বাগতিকরা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2014, 07:52 AM
Updated : 20 Dec 2014, 08:29 AM

৪ ম্যাচের সিরিজে এখন ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্টিভেন স্মিথের দল। সিরিজে আর হারতে হচ্ছে না অস্ট্রেলিয়াকে

মিচেল জনসনের জাদুকরি এক স্পেলে চতুর্থ দিন সকালে পথ হারায় ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস। ২২৪ রানে অলআউট হয়ে যায় অতিথিরা। ১২৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া।

শনিবার ব্রিসবেনের গ্যাবায় ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতে অবশ্য বিপদে পড়েছিল স্বাগতিকরা।

উমেশ যাদবের প্রথম ওভারে লাফিয়ে ওঠা বলে আঙুলে চোট পান অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার। এরপর ব্যাট করলেও ৬ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। ইশান্ত শর্মার বলে উইকেটের পেছনে মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।

ইশান্তেরই একটি বাউন্সারে হুক করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন শেন ওয়াটসন। কোনো রান করেই ধোনির হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিতে হয় তাকে। ২২ রানে ২ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।

প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ক্রিস রজার্স ও অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। জুটিটি মাত্র ৯.৫ ওভার স্থায়ী হলেও দ্রুত রান তুলে দলের ওপর থেকে চাপ সরিয়ে দেন তারা। তৃতীয় উইকেটে ৬.৪০ গড়ে এই জুটি ৬৩ রান তোলে।

১০টি চারে ৫৭ বলে ৫৫ রান করেন রজার্স। প্রথম ইনিংসে শতক করা স্মিথ আউট হন ২৮ রান করে। মাইকেল ক্লার্কের চোটের কারণে দায়িত্ব পেয়েই দলকে জিতিয়ে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান পান ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

রজার্স, স্মিথ ও শন মার্শের পর দ্রুত আউট হয়ে ফেরেন ব্র্যাড হ্যাডিনও। তবে ১২২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেললেও জয় পেতে কোনো বেগ পেতে হয়নি অস্ট্রেলিয়াকে।

মিচেল মার্শ ও জনসন আর কোনো উইকেট পড়তে না দিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।

৩৮ রান দিয়ে ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন ইশান্ত। উমেশ যাদব ২ উইকেট নিতে খরচ করেন ৪৬ রান।

দিনের শুরুতে ভারতের ইনিংসে ধস নামিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পথটা অবশ্য তৈরি করে দেন জনসনই। গ্যাবার উইকেটে বাউন্স, টার্ন আর সুইংকে কাজে লাগিয়ে ভারতের ব্যাটসম্যানদের ভোগান দারুণ ফর্মে থাকা এই পেসার।

দিনের খেলা শুরুর আগে নেটে অনুশীলন করতে গিয়ে চোট পাওয়ায় সকালে ব্যাট করতে নামতে পারেননি আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান। তার পরিবর্তে চেতেশ্বর পূজারার সঙ্গে ব্যাট করতে নামেন বিরাট কোহলি।

আগের ম্যাচের দু্ই ইনিংসে শতক করা কোহলি মাত্র ১ রানই করতে পারেন। দারুণ এক ডেলিভারিতে কোহলিকে বোল্ড করেন জনসন। পরের ওভারে অজিঙ্কা রাহানে ও রোহিত শর্মাকে ফেরান তিনি।

৪ ওভারে ছোট স্পেলে ১৪ রান দিয়ে জনসনের এই ৩ উইকেট শিকারে এলোমেলো হয়ে পড়া ভারতের ইনিংস আর কখনোই গতি পায়নি।

অভিষিক্ত জস হ্যাজলউড তুলে নেন ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি আর পূজারাকে।

স্রোতের বিপরীতে একাই লড়াই চালিয়ে যাওয়া ধাওয়ানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন লায়ন। চোট কাটিয়ে পড়ে মাঠে নামা বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যান ৮টি চারের সাহায্যে ১৪৫ বলে ৮১ রান করেন।

লায়ন এরপর বরুন অ্যারনকেও ফেরান। আর আগের দিন মুরালি বিজয়কে আউট করা মিচেল স্টার্ক পান রবিচন্দ্রন অশ্বিনের উইকেট।

যাদবকে আউট করে ভারতের ইনিংস গুড়িয়ে দেয়ার শেষ কাজটুকু করেন জনসনই। ৬১ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি।

স্টার্ক ২ উইকেট পান ২৭ রানে। লায়ন ২ উইকেট নিতে খরচ করেন ৩৩ রান। আর হ্যাজলউড ৭৪ রানে নেন ২ উইকেট।

অ্যাডিলেইডে প্রথম টেস্টে ভারতকে ৪৮ রানে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্নে সিরিজের তৃতীয় টেস্টটি শুরু হবে আগামী শুক্রবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত:

প্রথম ইনিংস: ৪০৮ (মুরালি ১৪৪, ধাওয়ান ২৪, পূজারা ১৮, কোহলি ১৯, রাহানে ৮১, রোহিত ৩২, ধোনি ৩৩, অশ্বিন ৩৫, যাদব ৯, অ্যারন ৪, ইশান্ত ১*; হ্যাজলউড ৫/৬৮, লায়ন ৩/১০৫, মার্শ ১/১৪, ওয়াটসন ১/৩৯)।

দ্বিতীয় ইনিংস: ২২৪ (মুরালি ২৭, ধাওয়ান ৮১, পূজারা ৪৩, কোহলি ১, রাহানে ১০, রোহিত ০, ধোনি ০, অশ্বিন ১৯, যাদব ৩০, অ্যারন ৩, ইশান্ত ১*; জনসন ৪/৬১, স্টার্ক ২/২৭, লায়ন ২/৩৩, হ্যাজলউড ২/৭৪)।

অস্ট্রেলিয়া:

প্রথম ইনিংস: ৫০৫ (রজার্স ৫৫, ওয়ার্নার ২৯, ওয়াটসন ২৫, স্মিথ ১৩৩, শন ৩২, মিচেল ১১, হ্যাডিন ৬, জনসন ৮৮, স্টার্ক ৫২, লায়ন ২৩, হ্যাজলউড ৩২*; যাদব ৩/১০১, ইশান্ত ৩/১১৭, অশ্বিন ২/১২৮, অ্যারন ২/১৪৫)।

দ্বিতীয় ইনিংস: ২৩.১ ওভারে ১৩০/৬ (রজার্স ৫৫, ওয়ার্নার ৬, ওয়াটসন ০, স্মিৱথ ২৮, শন মার্শ ১৭, হ্যাডিন ১, মিচেল মার্শ ৬*, জনসন ২*; ইশান্ত ৩/৩৮, যাদব ২/৪৬)।

ফল: অস্ট্রেলিয়া ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: স্টিভেন স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া)

সিরিজ: ৪ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে।