এবার লড়াই করে জয়

প্রথম তিন ম্যাচে সহজেই জেতা বাংলাদেশকে এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লড়াই করে জিততে হয়েছে। এই ওয়ানডে সিরিজের আগে চলতি বছর প্রতিপক্ষের প্রতিরোধের মুখে বারবার ভেঙে পড়া দলটি এবার আর হার মানেনি। বোলারদের দৃঢ়তায় জিতেই মাঠ ছেড়েছে মাশরাফি-বাহিনী।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2014, 06:31 AM
Updated : 28 Nov 2014, 03:14 PM

চতুর্থ ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ২১ রানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

ব্যাটিং শুরুটা ভালো না হলেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম ও মাশরাফি বিন মুর্তজার দৃঢ়তায় লড়াই করার মতো পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলার পথে মুশফিক ও মাশরাফির সঙ্গে ১৯৯ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ।

আগের দুই ম্যাচে চমৎকার বল করে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন মাশরাফি। এবার অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলেন তিনি। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ দিকে দ্রুত রান তুলে বাংলাদেশ।

শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ২৫৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৮ উইকেটে ২৩৫ রান করে জিম্বাবুয়ে।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জিম্বাবুয়েকে ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলেন ভুসি সিবান্দা ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। সাকিব আল হাসানের প্রথম স্পেলে বিদায় নেন এই দুই ব্যাটসম্যান। পাঁচ ওভারের সেই স্পেলে ১৪ রান দিয়ে এই দুটি উইকেট নেন সাকিব।

সিবান্দাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ৪৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন সাকিব। পরে বোল্ড করেন মাসাকাদজাকে। পা বাড়িয়ে ব্যাট আনতে একটু দেরি করেছিলেন তিনি; সেই ফাঁকে বল ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে স্ট্যাম্পে গিয়ে আঘান হানে।

সাকিবের জায়গায় বল করতে এসে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট পান অভিষিক্ত জুবায়ের হোসেন। টিমিসেন মারুমাকে বোল্ড করেন এই লেগস্পিনার।

৬০ রানে প্রথম তিন ব্যাটসম্যান ফিরে গেলে সুলেমান মায়ারকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন ব্রেন্ডন টেইলর। তাদের পাল্টা আক্রমণে দ্রুত রান তুলতে থাকে অতিথিরা। প্রথম চার ওভারে ৩৫ রান দেয়া জুবায়ের ভাঙেন ১০৬ রানের সেই জুটি।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বলে ৩২ রানে আবুল হাসানের হাতে জীবন পাওয়া মায়ার ফেরেন অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর। জুবায়েরের বলে মাহমুদুল্লাহর হাতে ধরা পড়েন তিনি। এই উইকেটই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

পরের ওভারেই ফিরে যান সাকিবের বলে শূন্য রানে শর্ট লেগে ইমরুল কায়েসের হাতে জীবন পাওয়া টেইলর। রুবেল হোসেনের শর্ট বল উইকেটরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে তুলে দিতে গিয়ে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন তিনি।

সফরে প্রথম জয়ের দিকে অতিথিরা তাকিয়ে ছিল অধিনায়ক এল্টন চিগুম্বুরার দিকে। কিন্তু হতাশ করেন তিনি। মাশরাফির স্লোয়ার বল তুলে মারতে গিয়ে মিডঅফে হাসানের সহজ ক্যাচে পরিণত হন তিনি।

১৬৬/৩ থেকে ১৮৩/৬ -এ পরিণত জিম্বাবুয়ে পরের ব্যাটসম্যানদের প্রচেষ্টায় সিরিজে প্রথমবারের মতো দুইশ’ পার হলেও হার এড়াতে পারেনি।

বাংলাদেশের সাকিব, জুবায়ের ও রুবেল দুটি করে উইকেট নেন।

এর আগে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। আগের দুই ম্যাচে শতরানের দুটি জুটি গড়লেও এই ম্যাচে শুরুতেই ভাঙে স্বাগতিকদের উদ্বোধনী জুটি। চতুর্থ ওভারেই বিদায় নেন এনামুল হক।

এরপর তামিম ইকবাল ও ইমরুল দেখেশুনে খেলে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেয়ার ইঙ্গিত দেন। তবে মাত্র ১ রানের মধ্যে তামিম, ইমরুল ও সাকিবের বিদায়ে বিপদে পড়ে স্বাগতিকরা।

৩২ রানে চার উইকেট হারানো বাংলাদেশকে সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে দেয়ার কৃতিত্ব মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিকের।

মুশফিক ক্রিজে আসার সময় বাংলাদেশের রান রেট ছিল মাত্র আড়াই। উইকেট ধরে রাখার পাশাপাশি রানের গতিও বাড়াতে হয় মুশফিক-মাহমুদুল্লাহকে।

দুই ম্যাচ পর চার নম্বরে ফেরা মাহমুদুল্লাহ দেখেশুনে খেললেও দ্রুত রান তুলতে থাকেন মুশফিক। ২৫.১ ওভার বা ১৫১ বলে ১৩৪ রানের জুটি গড়েন এই দুই জন।

এক পর্যায়ে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ১৬৬ রান। তবে এরপরই মাত্র ১১ রানের মধ্যে মুশফিক, সাব্বির রহমান ও আবুল হাসান বিদায় নিলে আবার চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। ৭৮ বলে ৭৭ রান করা মুশফিকের ইনিংসটি ৭টি চারে গড়া।

সেখান থেকে দলকে আড়াইশ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান মাশরাফি। মাত্র ২৫ বলে ২টি ছক্কা ও ৪টি চারের সাহায্যে ৩৯ রান করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। এই রান করার পথে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে ৪৮ বলে ৬৫ রানের জুটি উপহার দেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত ৮২ রানে অপরাজিত থাকা মাহমুদুল্লাহর দৃঢ়তায় টানা চতুর্থ ম্যাচে আড়াইশ’ পার হয় বাংলাদেশের সংগ্রহ। মাহমুদুল্লাহর ১১২ বলের ইনিংসটি সাজানো ৬টি চারে। এই ইনিংস খেলার পথে দুই হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন মাহমুদুল্লাহ।

জিম্বাবুয়ের মায়ার ও নেভিল মাডজিভা তিনটি করে উইকেট নেন। এছাড়া দুটি উইকেট নেন লেগস্পিনার টাফাজওয়া কামুনগোজি।

বাউন্সারের আঘাতে বৃহস্পতিবার মারা যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান ফিল হিউসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, খেলা শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়রা। দুই দলের খেলোয়াড়রা খেলেন কালো আর্মব্যান্ড পরে।

সোমবার একই ভেন্যুতে হবে পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৫৬/৮ (তামিম ১৬, এনামুল ৫, ইমরুল ৫, মাহমুদুল্লাহ ৮২*, সাকিব ১, মুশফিক ৭৭, সাব্বির ৪, হাসান ১, মাশরাফি ৩৯, রুবেল ৭*; মায়ার ৩/৪৯, মাডজিভা ৩/৬০, কামুনগোজি ২/৩৬)

জিম্বাবুয়ে: ৫০ ওভারে ২৩৫/৮ (মাসাকাদজা ২৮, সিবান্দা ১৭, মারুমা ৬, টেইলর ৬৩, মায়ার ৫২, চাকাবভা ২৬, চিগুম্বুরা ৪, মুর ১৩, মাডজিভা ৩*, চাটারা ১৬*; সাকিব ২/২৮, জুবায়ের ২/৪২, রুবেল ২/৪৮, মাশরাফি ১/৩৪)