সাকিবের নৈপুণ্যে বহু প্রতীক্ষার জয়

চাপ সামলে দারুণ এক শতকের পর বল হাতে চার উইকেট- সাকিব আল হাসানের আরেকটি অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ওয়ানডেতে বছরের প্রথম জয়টি পেল বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে সহজেই জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে স্বাগতিকরা।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2014, 07:08 AM
Updated : 21 Nov 2014, 07:38 PM

জিম্বাবুয়েকে ৮৭ রানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। চলতি বছর খেলা আগের ১৩ ওয়ানডের ১২টিতেই হারে বাংলাদেশ, অন্য ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়।

শুক্রবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ২৮১ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪২ ওভার ১ বলে ১৯৪ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।

শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ৩১ রানের মধ্যে তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ। টিনাশে পানিয়াঙ্গারার বল ব্যাটের কানায় লাগিয়ে বোল্ড হয়ে যান তামিম ইকবাল।

এরপর এনামুল হক ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে বিদায় করেন টেন্ডার চাটারা। দুই জনই ফিরেন বাজে শট খেলে। এনামুল এল্টন চিগুম্বুরার ও মাহমদুল্লাহ রিয়াদ টাফাজওয়া কামুনগোজির ক্যাচে পরিণত হন।

মুমিনুল হককে নিয়ে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়েন সাকিব। উইকেটে থিতু হয়ে ফাইন লেগের ওপর দিয়ে স্কুপ করতে গিয়ে জন নিউম্বুর বলে বোল্ড হয়ে মুমিনুলের বিদায়ে ভাঙে ৩৯ রানের জুটি।

পঞ্চম উইকেটের রেকর্ড জুটিতে বাংলাদেশকে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে দেন সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। ১৪২ বলে ১৪৮ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে।

পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের আগের রেকর্ড জুটিতেও ছিলেন সাকিব। ২০০৮ সালে রকিবুল হাসানের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঢাকায় ১১৯ রানের সেই জুটি গড়েছিলেন তিনি।

শতরানে পৌঁছানোর পর সাকিবের বিদায়ে ভাঙে ২৩.৪ ওভার স্থায়ী জুটি। ৯৯ বলে খেলা সাকিবের ১০১ রানের ইনিংসটি গড়া ১০টি চারে। এটি সাকিবের ষষ্ঠ শতক। চার বছর পর ওয়ানডেতে শতক পেলেন এই অলরাউন্ডার।

সাকিবের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টেকেননি মুশফিকুর রহিমও। বিদায় নেয়ার আগে ৭২ বলে দুটি করে ছক্কা ও চারের সাহায্যে ৬৫ রানের চমৎকার এক ইনিংস খেলেন তিনি। এই রান করার পথে ওয়ানডেতে তিন হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন তিনি।

বাংলাদেশের সংগ্রহ পৌনে তিনশ’ পার হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন সাব্বির রহমান। অভিষিক্ত এই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ৪৪ রানে। তার ২৫ বলের ইনিংসটি তিনটি করে ছক্কা ও চার সমৃদ্ধ।

জিম্বাবুয়ের পানিয়াঙ্গারা ৬৬ রানে নেন ৩ উইকেট।

শুরুতে স্বাগতিকদের এলোমেলো বোলিংয়ের সুযোগে জিম্বাবুয়েকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও সিকান্দার রাজা। প্রথম চার ওভার শেষে অতিথিদের রান ছিল বিনা উইকেটে ৪১ রান।

পঞ্চম ওভার থেকেই স্পিনারদের আক্রমণে নিয়ে আসেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সুফল পেতেও দেরি হয়নি। তিন বলের মধ্যে সিকান্দার রাজা ও ভুসি সিবান্দাকে ফিরিয়ে দেন সাকিব।

পেসার রুবেল হোসেনকে বল দিয়েও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পাল্টান মাশরাফি। বোলিং এসেই বিপজ্জনক মাসাকাদজাকে (৪২) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মাহমুদুল্লাহ। পরে রেগিস চাকাবভাকে বোল্ড করেন তিনি।

২ উইকেটে ৯২ রানে পৌঁছে যাওয়া জিম্বাবুয়ে মাসাকদজাকে হারানোর পর আর কক্ষপথে ফিরতে পারেনি।

নিজের ৩ ওভারের মধ্যে জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর ও বর্তমান অধিনায়ক এল্টন চিগুম্বুরাকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের জয় অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেন মাশরাফি।

এরপর উইকেট পান আরফাত সানিও। টিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে বোল্ড করেন এই বাঁহাতি স্পিনার।

আবার বোলিংয়ে ফিরে সলোমন মায়ার ও জন নিউম্বুকে ফিরিয়ে দিয়ে শতকের সঙ্গে পাঁচ উইকেট নেয়ার সম্ভাবনা জাগান সাকিব। চেষ্টা করেছিলেনও, কিন্তু পারেননি।

তবে জয়ের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি স্বাগতিকদের। সানি চাটারাকে বোল্ড করলে বছরের প্রথম জয়টি পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

৪১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সাকিব সফলতম বোলার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৮১/৭ (তামিম ৫, এনামুল ১২, মুমিনুল ৩১, মাহমুদুল্লাহ ১, সাকিব ১০১, মুশফিক ৬৫, সাব্বির ৪৪*, মাশরাফি ১, সানি ১*; পানিয়াঙ্গারা ৩/৬৬, চাটারা ২/৪৮, নিউম্বু ১/৪০, কামুনগোজি ১/৪০)

জিম্বাবুয়ে: ৪২.১ ওভার ১৯৪ (মাসাকাদজা ৪২, রাজা ১৫, সিবান্দা ০, টেইলর ৫৪, চাকাবভা ৯, চিগুম্বুরা ১৫, মায়ার ১১, পানিয়াঙ্গারা ৭, নিউম্বু ৪, চাটারা ১০, কামুনগোজি ১২*; সাকিব ৪/৪১, সানি ২/২২, মাশরাফি ২/৩৩, মাহমুদুল্লাহ ২/৪০)