সাকিব বীরত্বে সিরিজ বাংলাদেশের

সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে খুলনা টেস্টে দারুণ এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। শতকের পাশাপাশি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ১০ উইকেট নিয়ে অনন্য এক অলরাউন্ড কৃতিত্ব দেখিয়েছেন বাংলাদেশের সেরা এই ক্রিকেটার।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতখুলনা থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2014, 03:41 AM
Updated : 7 Nov 2014, 06:00 PM

ঢাকায় জয়ের পর খুলনা টেস্টে জিম্বাবুয়েকে ১৬২ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।

২০০৫ সালে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। প্রায় দশ বছর পর আবার দেশের মাটিতে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশ সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে।

এই জয়ে জিম্বাবুয়েকে পেছনে ফেলে আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের নয় নম্বরে উঠে আসা নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের।

শুক্রবার টেস্টের পঞ্চম দিনে জিম্বাবুয়ের ১০ উইকেট নেয়ার জন্য কমপক্ষে ৬৮ ওভার পেয়েছিল বাংলাদেশ। স্পিনারদের দাপটে ৫১.১ ওভারে ১৫১ রানে অতিথিদের অলআউট করে দেয় স্বাগতিকরা।

সাকিব, তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে ১৫ রানেই সিকান্দার রাজা, ব্রায়ান চারি ও ব্রেন্ডন টেইলরকে হারিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে জিম্বাবুয়ে।

চতুর্থ উইকেটে রেগিস চাকাবভাকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। ৭০ রানের জুটি ভেঙে স্বাগতিক শিবিরে স্বস্তি ফেরানোর কৃতিত্ব জুবায়ের হোসেনের। পরে ক্রেইগ আরভিনকেও বিদায় করেন এই লেগস্পিনার।

৫ উইকেটে ১১৭ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় অতিথিরা। ম্যাচ বাঁচাতে শেষ সেশনটি কাটিয়ে দিলেই হত তাদের। কিন্তু সাকিব ও তাইজুলের মারাত্মক বোলিংয়ে তা সম্ভব হয়নি।

মাসাকাদজাকে মুমিনুল হকের ক্যাচে পরিণত করে প্রতিরোধ ভাঙেন সাকিব। এরপর এল্টন চিগুম্বুরাকেও ফিরিয়ে দেন তিনি।

নাটসাই মুশাংওয়েকে ফিরিয়ে ম্যাচে দ্বিতীয়বার পাঁচ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখান সাকিব। সেই ওভারেই জয় পেয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু শাহাদাত হোসেন সহজ ক্যাচের সুযোগটি হাতছাড়া করায় বেঁচে যায় অতিথিরা।

তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়নি, তাইজুল ইসলাম টেন্ডাই চাটারাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে উচ্ছ্বাসে মাতে দর্শকরা।

৪৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসেও বাংলাদেশের সেরা বোলার হয়েছেন সাকিব। প্রথম ইনিংসে ৮০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ম্যাচে এই প্রথম ১০ উইকেট নিলেন তিনি; ১২৪ রানে ১০ উইকেট তাই তার ম্যাচসেরা বোলিংও। আগের ম্যাচসেরা ছিল ৯/১১৫।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ম্যাচে শতক ও ১০ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখালেন সাকিব। এই কৃতিত্ব রয়েছে কেবল ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম ও পাকিস্তানের ইমরান খানের।

এর আগে শুক্রবার খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে ৫ উইকেটে ২০১ রান নিয়ে খেলা শুরু করে বাংলাদেশ।

জিম্বাবুয়ের রক্ষণাত্মক কৌশলের জন্য দ্রুত রান তুলতে পারেনি স্বাগতিকরা। পেসাররা অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে বল করেন। স্পিনাররা লেগে ছয় জন ফিল্ডার রেখে লেগ স্ট্যাম্পে বল করেন।

২৪৮ রানে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে শুভাগত হোম চৌধুরীর বিদায়ের পর দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।

বিদায় নেয়ার আগে ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতকে পৌঁছান শুভাগত (৫০)। তার ১০৩ বলের ইনিংসটি সাজানো ৪টি চারে।

আগের দিন অর্ধশতক পাওয়া মাহমুদুল্লাহ এদিন নিজের ইনিংস বেশি দূর এগিয়ে নিতে পারেননি। নাটসাই মুশাংওয়ের বলে লংঅফে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার ক্যাচে পরিণত হয়ে শেষ হয় তার ৭১ রানের ইনিংসটি।

পঞ্চম দিন স্বাগতিক ব্যাটম্যানদের চারটি উইকেটই নেন মুশাংওয়ে। মাহমুদুল্লাহর পর তাইজুল ইসলাম, শাহাদত হোসেন ও শুভাগতকে বিদায় করেন এই লেগস্পিনার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৪৩৩ (সাকিব ১৩৭, তামিম ১০৯, মাহমুদুল্লাহ ৫৬; পানিয়াঙ্গারা ২/৪৯, চাটারা ২/৬১, ওয়ালার ২/৬৫) ও ২৪৮/৯ ডিক্লে. (তামিম ২০, শামসুর ২৩, মুমিনুল ৫৪, মাহমুদুল্লাহ ৭১, সাকিব ৬, মুশফিক ০, শুভাগত ৫০, তাইজুল ১, শাহাদাত ৩, রুবেল ৮*; ওয়ালার ৪/৫৯, মুশাংওয়ে ৪/৮২, পানিয়াঙ্গারা ১/৪৫)

জিম্বাবুয়ে: ৩৬৮ (মাসাকাদজা ১৫৮, চাকাবভা ১০১,; সাকিব ৫/৮০) ও ১৫১ (রাজা ৯, চারি ৪, মাসাকাদজা ৬১, টেইলর ০, চাকাবভা ২৭, আরভিন ২১, চিগুম্বুরা ১২, ওয়ালার ৪, পানিয়াঙ্গারা ৮*, মুশাংওয়ে ০, চাটারা ১; সাকিব ৫/৪৪, তাইজুল ৩/৪৪, জুবায়ের ২/৪২)