বেহিসাবি ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সিরিজ হার

কুমার সাঙ্গাকারার সময়োপযোগী শতক, আবারো বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ব্যর্থতা আর রান তাড়া করতে নেমে হঠকারী ব্যাটিং। ফল যা হওয়ার তাই হলো- দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৬১ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জিতে নিল শ্রীলঙ্কা।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2014, 06:40 AM
Updated : 20 Feb 2014, 03:33 PM

টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ২৮৯ রান করে অতিথিরা। জবাবে ৪৩ ওভারে ২২৮ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।

২০১১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের কাছে সর্বশেষ দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-২ ও নিউ জিল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে তারা। শ্রীলঙ্কার মাটিতে আগের সিরিজটাও ড্র হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অহেতুক শট খেলার প্রবণতার খেসারত দিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। স্রোতের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের লড়াই সমর্থকদের হতাশাই বাড়িয়েছে কেবল।

লাসিথ মালিঙ্গার করা প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়ে শামসুর রহমানের বিদায়ে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। তবে দ্বিতীয় উইকেটে আক্রমণাত্মক মেজাজে থাকা এনামুল হক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।

ত্রয়োদশ ওভারে সচিত্রা সেনানায়েকের বলে নড়বড়ে মুমিনুলকে গ্লাভসবন্দী করে ৫৫ রানের জুটি ভাঙ্গেন সাঙ্গাকারা। পরের ওভারে এনামুলকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন থিসারা পেরেরা।

চতুর্থ উইকেটে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৫৩ রানের জুটি গড়ে দলকে লড়াইয়ে রাখার চেষ্টা করেন মুশফিক।

শ্রীলঙ্কা বিপদে পড়ার পর প্রথমে ধরে খেলেছিলেন সাঙ্গাকারা। একটি চার মেরেছেন তো পরের বলে মনোযোগ দিয়েছেন এক রান নেয়ার দিকে। প্রায় একই অবস্থায় থেকে সাকিবের খেয়াল হলো, প্রতিটি বলেই চার-ছক্কা মারার।

আশনা প্রিয়াঞ্জনের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে হতাশা ও রাগ মাখা যে ভংঙ্গি সাকিব করলেন তা ইদানিং বড় বেশি চেনা দৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।

প্রথম ওয়ানডেতে অল্প রানে শ্রীলঙ্কাকে বেধে ফেলেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তিনশ’র কাছাকাছি রান তাড়া করতে গিয়ে রানরেটের হিসাবে শ্রীলঙ্কার চেয়ে কিন্তু এগিয়েই ছিল স্বাগতিকরা। তবে সাকিব-মাহমুদুল্লাহ-নাসিরের অহেতুক আউটে উইকেটের হিসাব আর মেলাতে পারেনি তারা।

ভালো সূচনা করেও নিজের ইনিংস খুব একটা বড় করতে পারেননি নাসির হোসেন। সাকিবের মতো ক্যাচ দিয়ে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন তিনিও। ২৯তম ওভারে নাসিরের বিদায়ের পরের ওভারে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ রান-আউট হয়ে গেলে ভীষণ বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।

ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে মুশফিক-মাশরাফি অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয়ের স্বপ্ন একটু হলেও দেখছিল বাংলাদেশ। তবে এরপর একটি চার ও ছক্কার পর আবারো ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট মাশরাফি। অবশ্য এর জন্য তাকে বেশি দোষ দেয়া যায় না আগের প্রতিষ্ঠিত ব্যাটম্যানদের আউট হওয়ার উদাহরণ দেখে।

ইনিংসের শুরুতে এনামুলের আক্রমণের পর মুশফিকই কেবল প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাট করেছেন। অন্যদের খামখেয়ালিপনায় বড় কয়েকটি জুটি না গড়ার হতাশায় পুড়েছেন তিনি। ৪২তম ওভারের শেষ বলে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেয়ার আগে ৭৯ রান করেন তিনি। তার ৮৩ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ২টি ছক্কা।

শ্রীলঙ্কার পক্ষে সেনানায়েকে, পেরেরা, অজন্তা মেন্ডিস ও লাসিথ মালিঙ্গা দু’টি করে উইকেট নেন।

এর আগে অতিথিরা তিনশ’র কাছাকাছি সংগ্রহ দাঁড় করালেও রুবেল হোসেনের সৌজন্যে শুরুটা ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের। ৩৮ রানের ভেতর শ্রীলঙ্কার দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে ফেরত পাঠান এই ডানহাতি পেসার।

ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে রুবেলের অনেক বাইরে করা খাটো লেন্থের বল কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে শামসুর রহমানের হাতে ক্যাচ দেন কৌশল পেরেরা। অষ্টম ওভারে খাটো লেন্থের আরেকটি বল পুল করতে গিয়ে মিডঅফে মুশফিকুর রহিমের হাতে ধরা পড়েন তিলকরত্নে দিলশান।

ত্রয়োদশ ওভারে অফস্পিনার সোহাগ গাজীর বলে মিডউইকেটে শামসুরের হাতে ক্যাচ দেন দীনেশ চান্দিমাল। অতিথিদের স্কোর তখন ৬৩/৩।

এরপর আশান প্রিয়াঞ্জন চতুর্থ উইকেটে সাঙ্গাকারার সঙ্গে ১১৪ রানের জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কাকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন।

৯৭ বলে ৭টি চারের সাহায্যে ৬০ করা প্রিয়াঞ্জনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ২৪ ওভার স্থায়ী জুটি ভাঙ্গেন সাকিব আল হাসান।

প্রিয়াঞ্জনের বিদায়ের পর ক্রিজে এসেই অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে রানের গতি বাড়তে থাকে শ্রীলঙ্কার। পঞ্চম উইকেটে সাঙ্গাকারার সঙ্গে মাত্র ৫৮ বলে ৮৩ রানের জুটি গড়েন তিনি।

আরাফাত সানির বল উড়িয়ে সীমানা পার করতে গিয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে ধরা পড়ার আগে ১২৮ রান করেন সাঙ্গাকারা। এটি তার ১৭তম শতক। সাঙ্গাকারার ১১৫ বলের ইনিংসে ছিল ১৪টি চার।

সাঙ্গাকারার বিদায়ের পর দলকে তিনশ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব ম্যাথিউসের। শেষ পর্যন্ত ৩৯ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

সাঙ্গাকারা-ম্যাথিউসের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ ১০ ওভারে একশ’ রান তোলে শ্রীলঙ্কা।

প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও এক গাদা ক্যাচ ছেড়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা সহজ করে দেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৮৯ (কৌশল ৮, দিলশান ৮, সাঙ্গাকারা ১২৮, চান্দিমাল ৯, প্রিয়াঞ্জন ৬০, ম্যাথিউস ৫৬*, থিসারা ০, ভিথানাগে ১৩*; রুবেল ৩/৭৬, সানি ১/৪৪, সাকিব ১/৪৬, সোহাগ ১/৫০)

বাংলাদেশ: ৪৩ ওভারে ২২৮ (এনামুল ৪২, শামসুর ০, মুমিনুল ১৫, মুশফিক ৭৯, সাকিব ২৪, নাসির ২২, মাহমুদুল্লাহ ১, সোহাগ ৭, মাশরাফি ১৭, সানি ১*, রুবেল ৬; সেনানায়েকে ২/৩৩, থিসারা ২/৪০, মেন্ডিস ২/৪৩, মালিঙ্গা ২/৪৫)