নিজের কাজ করে রাখলেন শফিউল

সাড়ে ৭ বছরের ক্যারিয়ার। টেস্ট মোটে ৯টি! দলে আসতে সময় লেগেছে বারবার, বের হতে সময় লাগেনি। যত সময় ছিলেন দলে, তার চেয়ে বেশি ছিলেন দলে ফেরার লড়াইয়ে। সেরকম আরেকটি লড়াইয়ে সফল হওয়ার দুয়ারে শফিউল ইসলাম।

ক্রীড়া প্রতিবেদক চট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2017, 02:22 PM
Updated : 9 August 2017, 03:01 PM

চট্টগ্রামে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথম দিনে যা পারফরম্যান্স, তাতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াডে জায়গা পাওয়া কেবলই মনে হচ্ছে সময়ের ব্যাপার। উইকেটে ঘাস ছিল, ছিল বাউন্স। সেটি কাজে লাগাতেও জানতে হয়। দুদলের সাত পেসারের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পারলেন শফিউলই।

ফিট থাকলে ও শুরু থেকে ছন্দ পেলে এমনিতেই শফিউল দেশের সবচেয়ে স্কিলফুল পেসারদের একজন। দুই দিকে সুইং করাতে পারেন, লেংথ থেকে বল তুলতে পারেন ব্যাটসম্যানের জন্য অস্বস্তিকর উচ্চতায়। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এদিন নিজের সেরা সবকিছুই মেলে ধরলেন।

প্রথম ওভার থেকেই ছিলেন ছন্দে। গতি দারুণ, পেয়েছেন সুইং, ব্যাটসম্যনদের ভুগিয়েছেন লেংথ ও বাউন্সে। পুরানো বলে ফিরেও প্রায় একই রকম গতিময় ও আগ্রাসী।

প্রথম স্পেলে দারুণ তিনটি ডেলিভারিতে ফিরিয়েছেন সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস ও মাহমুদউল্লাহকে। বিকেলে দ্বিতীয় স্পেলে প্রান্ত বদলেও এক রকম ক্ষুরধার। পুরোনো বলে দুই ওভারে আরও দুই উইকেট। সব মিলিয়ে ১৭ রানে ৫টি!

দিন শেষে শফিউল জানালেন, গত কিছুদিনের পরিশ্রমের ফসল এই ম্যাচের পারফরম্যান্স।

“আমি নতুন বল ভালোভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছি। অনেক কাজ করেছি নতুন বল কাজে লাগানো নিয়ে। পুরোনো বল নিয়েও কাজ করেছি। ওই জিনিসগুলোই চেষ্টা করেছি করতে। আর ঘাস থাকলে পেসারদের জন্য সহায়তা থাকেই। কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। তাতে ফল পেয়েছি।”

যদিও অনুশীলন ম্যাচ, তার পরও এই পারফরম্যান্সকে আত্মবিশ্বাসের বড় উৎস মানছেন ২৮ বছর বয়সী পেসার।

“যে ম্যাচই খেলি, ভালো কিছু করলে আত্মবিশ্বাস বেশি থাকে। আমার মনে হয় সামনে যে খেলাই আসুক, আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এই বোলিংটা কাজে দেবে ভালো কিছু করার জন্য।”

সামনে যে ম্যাচ মানে তো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ! যদিও দেশের মাটির টেস্টে একজন-দুজনের বেশি পেসার বাংলাদেশের একাদশে জায়গা পায় কদাচিৎ, শফিউল নিশ্চয়ই আশা করছেন সেই একজন বা দুজনের একজন হতে!

এবার শফিউলের একটু সতর্ক উত্তর, “ওটা ভাবছি না। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি। সামনে কি হবে এটা আমার হাতে নেই। আমি নিজের কাজ করে যাচ্ছি। আমার বোলিং, আমার স্কিল নিয়ে কাজ করছি। খেলব নাকি খেলব না, এটা তো পরের ব্যাপার।”

আপাতত তাকে দলে নেওয়ার পথে একটি বাধাই থাকতে পারে। অতীত অভিজ্ঞতা। ঘরোয়া বা অনুশীলনের পারফরম্যান্সে আগেও তাকে জাতীয় দলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ম্যাচে নেওয়ার পর ভেঙে পড়েছেন।

সবশেষ টেস্টেও ছিল একই অভিজ্ঞতা। এই মাঠেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ছিলেন গত অক্টোবরে। কিন্তু মিরপুর টেস্টের আগে দলের বাইরে। বলা হয়েছিল বিশ্রাম, আসলে ছিল তার ফিটনেস নিয়ে বিরক্তি।

এবার যে ব্যতিক্রম হবে, সেই আশার ভিত্তি কি? শফিউল নিজে ভরসা পাচ্ছেন ফিটনেস ট্রেনিং থেকে। ভরসা থেকেই ছড়াতে চাইছেন বিশ্বাস।

“শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। নিজের কাছে আমার তো ভালোই লাগছে। সামনে কি হবে জানি না। ফিটনেস ট্রেনিং করে যাচ্ছি। ফিটনেস ট্রেনিং মানেই নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা। ভবিষ্যতে যেন আগের মত না হয়, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। সব ঠিকঠাক থাকলে সুস্থভাবে খেলার ইচ্ছে আছে।”

তার ইচ্ছে পূরণ হলে বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই লাভ। এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই ২০১০ সালের জানুয়ারিতে তার টেস্ট অভিষেক। এই মাঠেই সবশেষ টেস্ট। এই মাঠের এবারের পারফরম্যান্সের হাত ধরে হয়ত রচিত হবে তার নতুন অধ্যায়!