সাইফ উদ্দিন এখন আরও আত্মবিশ্বাসী

“একটু সময় পেলেই তো বেশ বড় ইনিংস খেলতে পারেন!” মিরপুর একাডেমি ভবনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে কথাটি শুনে একটু থমকে দাঁড়ালেন সাইফ উদ্দিন। চোখে-মুখে আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক। বললেন, “বেশিরভাগ সময়ই শেষ দিকে সুযোগ পাই। ওপরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেলে গুছিয়ে ব্যাট করতে পারি।”

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2017, 01:54 PM
Updated : 19 July 2017, 01:55 PM

গুছিয়ে ব্যাট করার সময় তিনি কমই পান। হাতে মার আছে, জোর আছে। অনেক সময়ই তাই তাকে ভাবা হয় ধুমধাড়াক্কা ব্যাটসম্যান। এমন সময়ে ব্যাটিংয়ে নামানো হয়, যখন ব্যাটিং মানে ‘ধর তক্তা মার পেরেক’। সময় নিয়ে একটা ঘর গড়ে তোলার সুযোগ পান না।

তবে যখন পান, নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখেন ঠিকই। পেস বোলিং অলরাউন্ডার তিনি, বোলিংটা বেশি ভালো। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে ঘরোয়া ক্রিকেট, বোলিং প্রধান অলরাউন্ডার হিসেবে দেখা হয়েছে তাকে। বোলিংটা আপাতত বেশি ভালো, সেটা নিয়ে সংশয়ও নেই। তবে তিনি নিজে হয়ে উঠতে চান পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার। ঘরোয়া ক্রিকেটে যখনই একটু ওপরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন, প্রমাণ রেখেছেন নিজের সামর্থ্য আর টেম্পারামেন্টের।

নিজের ব্যাটিংয়ের ওপর তার বিশ্বাস আরও বেড়েছে হাই পারফরম্যানস দলের অস্ট্রেলিয়া সফরের পর। তৃতীয় একদিনের ম্যাচটিতে সুযোগ পেয়েছিলেন ৫ নম্বরে ব্যাটিংয়ের। বিপর্যয় থেকে দারুণ এক অপরাজিত সেঞ্চুরিতে দলকে এনে দেন ম্যাচ জয়ের মত স্কোর।

বুধবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাইফ উদ্দিন জানালেন, ওই ম্যাচের ব্যাটিং অর্ডার জানার পরই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সুযোগ কাজে লাগানোর।

“সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগে আমি সেভাবে ব্যাটিং করার সুযোগ পাইনি। অল্প কয়েকটা ম্যাচ সুযোগ পেয়েছি। হাতে ২-৩ ওভার ছিল. তাই ইনিংস বড় করতে পারিনি। অস্ট্রেলিয়াতে প্রথম দুটি ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেলেও খুব বেশি ওভার ছিল না।”

“ওই ম্যাচের টিম হওয়ার পর আমার ব্যাটিং অর্ডার যখন ৫ নম্বরে দেখি, তখন মনের মধ্যে বিশ্বাস এলো কিছু একটা করতে পারব। আমাদের টপ অর্ডারে দ্রুত বেশ কয়েকটি উইকেট পড়ে গেলে দায়িত্বটা আমার উপর ছিল। শুরু থেকেই চেষ্টা ছিল দলকে নিরাপদ অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার।”

সেঞ্চুরিটির পর নিজের ব্যাটিং নিয়ে সাইফ উদ্দিন এখন আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী। এই আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করেই আরও এগিয়ে যেতে চান।

“বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে আমি পাঁচ থেকে সাত নম্বরে খেলেছি। হয়তো টিম কম্বিনেশনের কারনে এখন ৭ থেকে ৯ নম্বরে ব্যাটিং করতে হয়েছে। আসলে আমি আমার ব্যাটিংটা উন্নতি করতে চাই। যতটুকু দুর্বলতা আছে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে চাই। টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে যেখানে সুযোগ দেবে আমি খেলতে প্রস্তুত। আমি সব জায়গায় নিজেকে খেলার মতো প্রস্তুত রাখতে চাই।”

বোলিং তো তার শক্তির জায়গা। অস্ট্রেলিয়া সফরেও বল হাতে ছিলেন দারুণ ধারাবাহিক। পারফরম্যান্সে পড়েছে উন্নতির প্রতিফলন। সাইফ জানালেন, ওখানকার কন্ডিশনে বোলিংয়ের অনেক কিছু শিখেছেন এই সফর থেকে।

“অনেককিছু শেখেছি। প্রথম দিকের ম্যাচগুলোতে স্টক বলই বেশি কাজে লাগিয়েছি। পরের দিকে এসে সুইং ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন কিছু করেছি। মোট কথা সব রকম চেষ্টাই করেছি সফল হওয়ার জন্য।”

গত বছর দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অপরিহার্য অংশ ছিলেন সাইফ উন্নতির। ঘরোয়া ক্রিকেটের সিড়ি ধরে উঠে চলেছেন ওপরের দিকে। এখনও পর্যন্ত ২৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। অর্ধশতক ৬টি, ব্যাটিং গড় ৩৪.৭০। উইকেট ৪৮টি। সমান লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলে ব্যাটিং গড় ২৫, উইকেট নিয়েছেন ৩৬টি।

বাংলাদেশ দলের একজন কার্যকর পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাব পূরণে ভবিষ্যতের বাজি আপাতত সাইফ উদ্দিনই। ২০ বছর বয়সী অলরাউন্ডার অবশ্য এখনই অতদূর না তাকিয়ে স্রেফ নিজেকে তৈরি করে নিতে চান।

“জাতীয় দলে সবাই খেলতে চায়। আমারও চিন্তা আছে। কিন্তু আমি ওটা নিয়ে এখনই মনোযোগ দিচ্ছি না। আমি এখন এইচপিতে আছি, চেষ্টা করছি এখানে নিজেকে যতটা উন্নতি করা যায়। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং, সব বিভাগে নিজেকে যথাযথভাবে প্রস্তুত করতে চাই।”

এভাবে উন্নতির সোপান বেয়ে উঠতে থাকলে, একদিন সামনে পেয়ে যাবেন স্বপ্নের দুয়ার!