মাঠের বাইরের জীবন নিয়ে ক্রিকেটারদের হুঁশিয়ারি নাজমুলের

কোনো খেলা বা সিরিজ চলার সময় শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন। কিন্তু খেলা না থাকলেই অনেকে হয়ে উঠছেন বেপরোয়া। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে অশান্তির ঢেউ স্পর্শ করছে ক্রিকেটকে। হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে ক্রিকেট বোর্ডকে। ক্রিকেটারদের তাই আবারও সতর্ক করে দিয়েছেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2017, 02:01 PM
Updated : 11 July 2017, 02:01 PM

ক্রিকেটে বাংলাদেশের উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যেন মাঠের বাইরে ক্রিকেটারদের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক। উঠতি এক মডেল ও অভিনেত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ঝামেলায় জেলে যেতে হয়েছিল পেসার রুবেল হোসেনকে। গৃহকর্মীকে মারধরের অভিযোগে জেলে যেতে হয়েছিল শাহাদাত হোসেনকে। দুই স্ত্রী নিয়ে ঝামেলায় জেলের অভিজ্ঞতা হয়েছে আরাফাত সানির। সবশেষ মোহাম্মদ শহীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে রোববার বিসিবিতে এসেছিলেন তার স্ত্রী। বোর্ডের প্রধান নির্বাহীর হস্তক্ষেপে চলছে মীমাংসার চেষ্টা।

এসব ঘটনায় বেশ বিব্রত বিসিবি। এসব ব্যাপারে আগেও ক্রিকেটারদের সতর্ক করেছেন বোর্ড প্রধান। মঙ্গলবার বিসিবিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ক্রিকেটারদের হুঁশিয়ার করে দিলেন আরও একবার।

“ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমাকে জিজ্ঞেস করলে, আমার কথা হলো শুধু ভালো খেলোয়াড় হলেই হবে না, ভালো মানুষও হতে হবে। এটা হলো মৌলিক ব্যাপার। প্রথম থেকেই আমি সেটা বলে আসছি। এজন্যই আমরা চেষ্টা করছি যতটুকু সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করার। অন্তত আমাদের অধীনে যখন থাকে, খেলা থাকে, হোটেলে থাকে, আমরা কিন্তু অনেক কঠোর হয়েছি। সমস্যাটা হলো, ওরা যখন এখান থেকে চলে যাচ্ছে, ওদের পারিবারিক, ব্যক্তিগত ব্যাপারে তো আমারা সরাসরি ঢুকতে পারছি না।”

“যে ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলো আমাদের নজরে আছে। আমরা এসব দেখছি। কেউ এসব গ্রহণ করে নিতে পারছি না। ঘটনাগুলো যদি একটি একটি করে দেখেন, আমরা কিন্তু কোনোবারই ওদেরকে সমর্থন করিনি। এমনকি মামলা চলার সময় সাসপেন্ডও করেছি। সমর্থন দেওয়া দূরে থাক, বরং অ্যাকশন নিয়েছি। এবারও সেটিই হবে। আমরা চাইব সব মিটমাট হয়ে যাক। কিন্তু যদি না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও অনেক কঠিন, কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিসিবিকে।”

মাঠের বাইরে ক্রিকেটারদের মেলামেশা, সামাজিক অপরাধে অভিযুক্তদের সঙ্গে ছবি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে গত কিছুদিনে। এসব ঘটনায় দুর্ভাবনা আছে বিসিবি প্রধানেরও।

“এটা একটা বিরাট বিপদের প্রশ্ন। আমি নিজেই একটু চিন্তিত। ব্যক্তিগত কথা যদি বলি, যে কোনো বিমানবন্দরে নামলেই ওখানে যদি বাঙালি কেউ থাকে, বাংলাদেশি কেউ থাকে, আমার সাথে ছবি তোলে। বিদেশে গেলে এখন কোনো শপিং সেন্টারে যাই না যেখানে বাঙালিরা যেতে পারে। এত আগ্রহ বেড়েছে মানুষের ক্রিকেট নিয়ে। গড়ে যে পরিমাণ ছবি, সেলফি আমার সঙ্গে তোলে লোকে… আমি একজনকেও চিনি না। এখন ওরা যদি এটা অন্য কাজে ব্যবহার করে, তাহলে আমি বিপদে পড়ব। কে ভালো খারাপ, আমি তো জানি না।”

“আবার জানাশোনা সোশাল ক্রিমিনাল যদি হয়, তার সাথে জেনে কেউ ছবি তুললে সেটা এক ব্যাপার। কিন্তু কেউ জানল সে ভালো মানুষ। আসলে ভেতরে কী, সেটা জানে না, তাহলে অন্য সমস্যা।”

এ নিয়ে সবাইকে আরও সতর্ক হতে বললেন বিসিবি প্রধান। আহ্বান করলেন, ক্রিকেটারদের সত্যিকারের আদর্শ হয়ে উঠতে।

“সবাইকে সতর্ক হতে হবে। আমাদের হতে হবে, খেলোয়াড়দের হতে হবে। জেনেশুনে যেন এরকম জায়গায় না যায়। ক্রিকেটাররা এখন এত বেশি জনপ্রিয় বাংলাদেশে, আগে যেমন ছিল সালাউদ্দিন, এক নামেই বাংলাদেশে হুলুস্থুল, এখন ফুটবলার বা অন্য কারও নাম শোনা যায় না। ক্রিকেটাররাই সব। তো এত বেশি জনপ্রিয় যারা, তারা দেশের জন্য রোল মডেল হিসেবে কাজ করবে, আমরা সেটাই আশা করি।”

“রোল মডেল হিসেবে ওদের এমন কোনো কাজ করা উচিত না যেটায় নতুন প্রজন্ম ভুল বুঝবে বা সেই পথ অনুসরণ করবে। সেজন্য বিসিবি থেকে আমরা যতটা সম্ভব আমরা এই ব্যাপারে কঠোর হব। ওদের সঙ্গে কথা বলা হবে এবং নির্দেশনা দেওয়া হবে। আশা করি, এসব অনেক কমে যাবে।