জয়াবর্ধনের হৃদয়ের কাছে বাংলাদেশ

তখন তিনি কলম্বোর বিখ্যাত নালন্দা কলেজ দলের অধিনায়ক। রানের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন স্কুল ক্রিকেটে। মাত্রই শ্রীলঙ্কার স্কুল ক্রিকেটার অব দা ইয়ার হলেন। স্কুলের পারফরম্যান্সেই ডাক পেলেন বাংলাদেশ সফরের শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলে। সেটি ১৯৯৪ সাল, মাহেলা জয়াবর্ধনের বয়স ১৭!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2017, 02:09 PM
Updated : 5 July 2017, 02:09 PM

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডানা মেলার যে স্বপ্ন দেখছিলেন জয়বর্ধনে, সেই স্বপ্নের পালে নতুন দোলা দিয়েছিল বাংলাদেশ সফরের ডাক। প্রায় দুই যুগ পর বাংলাদেশে বসে সেই দিনটিতে ফিরে গেলেন সাবেক শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক। জানালেন, সেই সময় থেকেই বাংলাদেশ তার হৃদয়ের খুব কাছে।

সেই সফরের পর বহুবার এসেছেন বাংলাদেশে; জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে, অধিনায়ক হিসেবে। খেলোয়াড়ি জীবনের একমাত্র বিশ্ব শিরোপাও এখানেই, জিতেছিলেন ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সবশেষ গত বিপিএলে এসেছিলেন ঢাকা ডায়নামাইটসে খেলতে। এবারও তাকে এই দেশে টেনে আনল বিপিএল। তবে ভূমিকা ভিন্ন। বাংলাদেশ সামনে দেখতে পাবে কোচ জয়াবর্ধনেকে।

আগামী দুই মৌসুমের কোচ হিসেবে কদিন আগেই জয়াবর্ধনের নাম জানিয়েছিল খুলনা টাইটান্স। বুধবার ঢাকার একটি হোটেলে কোচ হিসেবে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দিল ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।

এমনিতে কোনো দেশ সফরে গেলে সেই দেশ সম্পর্কে ভালো কিছু বলা এখন পেশাদার কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। তবে কৃত্রিমতা ছাপিয়ে জয়াবর্ধনের অনুভূতিটাকে এদিন ভেতর থেকে উঠে আসা বলেই মনে হলো।

“বাংলাদেশ বরাবরই আমার হৃদয়ের খুব কাছে। জাতীয় পর্যায়ে আমার প্রথম সফর ছিল বাংলাদেশেই, ১৯৯৪ সালে এসেছিলাম শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের হয়ে। আমার প্রথম সুযোগ ছিল সেটিই। এরপর বাংলাদেশে বেশ কবারই এসেছি। এখানে বিশ্বকাপ জয়ের দারুণ স্মৃতিও আছে। ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে মনে হচ্ছিলো আমরা দেশের মাটিতেই খেলছি।”

খেলোয়াড়ি জীবনে প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে বিব্রত হতে দেখেছেন অনেকবার। দেখেছেন লড়াই করতে। গত কয়েক বছরে দেখেছেন বাংলাদেশের উন্নতি। এই এগিয়ে চলার মুগ্ধ দর্শক জয়াবর্ধনেও।

“বাংলাদেশের উন্নতিটা অবশ্যই দুর্দান্ত। সেই ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপ থেকে যদি বলি, সেখান থেকে এগিয়েছে অনেক দূর। গত ৬ বছর বা এই সময় ধরেই ওরা বেশ ধারাবাহিক। মূল কারণ, দারুণ প্রতিভাবান কিছু ক্রিকেটার একসঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে খেলছে। তরুণ প্রতিভাবানরাও বেশ ধারাবাহিক।”

বাংলাদেশের কোচিং স্টাফে আছে কয়েকজন আছেন শ্রীলঙ্কান। সেটি নিয়েও মজা করলেন সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক।

“সাফল্যের সবচেয়ে বড় রহস্য হয়ত শ্রীলঙ্কান কোচিং স্টাফ, ওরা অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। কিছুটা কৃতিত্ব তাই আমরা দাবি করতেই পারি!”

২০১৫ বিশ্বকাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। তার পর থেকে বিভিন্ন লিগে খেলা আর টুকটাক কোচিং, দুটি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সবশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে খেলেছেন পাকিস্তান সুপার লিগে।

কোচিং শুরু করেছেন এর মধ্যেই। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং উপদেষ্টা ছিলেন কিছুদিনের জন্য। গত আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে শিরোপা এনে দিলেন প্রধান কোচ হিসেবে। এবার ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে খেলার কথা ছিল ল্যাঙ্কাশায়ারে। তবে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আর খেলা নয়। ক্রিকেটের সঙ্গে বন্ধন আপাতত থাকবে কোচিং দিয়েই।

কোচিং নিয়ে তার দর্শনটাও দারুণ। পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে চান অন্তর দিয়েও।

“কোচিংটাকে আমি চাকরি হিসেবে দেখি না। আমার কাছে এটা একটা চ্যালেঞ্জ। যে খেলাটাকে আমি ভালোবাসি সেই খেলাটাকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখি। সেটা ভারতে হোক বা বাংলাদেশে, কিংবা ইংল্যান্ডে; কিছুদিন আগে ছিলাম নিউ জিল্যান্ডে। আমি এটিকে দেখি তরুণদের কিছু শেখানোর সুযোগ হিসেবে। খেলাটা আমাকে অনেক দিয়েছে। আমিও পরবর্তী প্রজন্মকে কিছু দিতে চাই।”

খুলনা টাইটান্সে বাংলাদেশের যারা খেলবেন, তারাও নিশ্চয়ই রোমাঞ্চিত। জয়াবর্ধনের কাছ থেকে কিছু শিখতে পারলে সমৃদ্ধ হবেন তারা, লাভ বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই।