হোল্ডারের নৈপুণ্যে ভারতকে হারাল উইন্ডিজ

মাটি কামড়ে পড়ে থাকা মহেন্দ্র সিং ধোনি লড়াই করলেন প্রাণপণে। তাকে ছাপিয়ে দিন শেষে নায়ক জেসন হোল্ডার। কম রানের পুঁজি নিয়েও দলকে অধিনায়ক এনে দিয়েছেন দারুণ এক জয়। এই অলরাউন্ডারের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে সিরিজে টিকে থাকল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2017, 09:59 PM
Updated : 2 July 2017, 09:59 PM

অ্যান্টিগায় রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে চতুর্থ ওয়ানডেতে ভারতকে ১১ রানে হারিয়েছে স্বাগতিকরা। প্রথম ওয়ানডে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর টানা দুই ম্যাচ জেতা ভারত সিরিজে এগিয়ে ২-১ ব্যবধানে। 

স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ১৮৯ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে দুই বল বাকি থাকতে ১৭৮ রানে গুটিয়ে যায় বিরাট কোহলির দল।

ছোট রান তাড়ায় শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি ভারতের। শচীন টেন্ডুলকার ও বীরেন্দর শেবাগের পর ভারতের তৃতীয় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে কোনো দ্বিপাক্ষিক সিরিজে চারটি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলা অজিঙ্কা রাহানে (৬০) অবিচল ছিলেন এক প্রান্তে। কিন্তু অন্য প্রান্তে টিকতে পারছিলেন না কেউ।

ব্যাটিং দুরূহ উইকেটে দুই অঙ্কে যেতে পারেননি শিখর ধাওয়ান, কোহলি ও তিন বছরের বেশি সময় পর ওয়ানডে খেলতে নামা দিনেশ কার্তিক। ৪৭ রানেই নেই ৩ উইকেট। লক্ষ্যটা বড় ছিল না বলে রানের কোনো চাপ ছিল না, রাহানে ও ধোনি পান সময় নিয়ে খেলার সুযোগ।

২২ রানে জেসন মোহাম্মদের হাতে জীবন পাওয়া রাহানে ধোনির সঙ্গে গড়েন ৫৪ রানের চমৎকার এক জুটি। এক প্রান্ত আঁকড়ে থাকা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে বিদায় করেন লেগ স্পিনার দেবেন্দ্র বিশু।

আগের ম্যাচে ঝড় তোলা কেদার যাদবকে এবার উড়তে দেননি অ্যাশলি নার্স। তবে ধোনি-হার্দিক পান্ডিয়া দলকে কক্ষপথেই রেখেছিলেন। দুই গতির উইকেটে দলের আশা বাঁচিয়ে রাখা ধোনি ছিলেন ভীষণ সতর্ক, তার ইনিংসের একমাত্র বাউন্ডারি আসে ১০৩তম বলে!

স্বাগতিকদের চমৎকার বোলিংয়ে ৫ উইকেট হাতে নিয়েও শেষ ৫ ওভারে ৩১ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি ভারত।

একটি করে ছক্কা-চারে ২১ বলে ২০ রান করে পান্ডিয়াকে বোল্ড করে বিপজ্জনক হয়ে উঠা জুটি ভাঙেন হোল্ডার। অধিনায়ক পরে বিদায় করেন রবীন্দ্র জাদেজাকে।

নিজের মন্থরতম অর্ধশতক করা ধোনি আউট হন কেসরিক উইলিয়ামসকে উড়ানোর চেষ্টায়। ১০৮ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। তার আগের মন্থর অর্ধশতক ছিল ৮৮ বলে। ৫৪ রান করা ধোনিকে আউট করে ওয়ানডেতে নিজের প্রথম উইকেট নেন উইলিয়ামস।

শেষ ৩ ওভারে দরকার ছিল ১৯ রান, হাতে ছিল ৪ উইকেট। সেটাকে অসম্ভব বানিয়ে ফেলেন হোল্ডার, উইলিয়ামস। তাদের দাপুটে বোলিংয়ে শেষ ৪ উইকেটের পতন হয় মোটে ৫ রানে।

শেষ ওভারে উমেশ যাদব ও মোহাম্মদ শামিকে ফিরিয়ে দলকে দারুণ জয় এনে দেওয়ার সঙ্গে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নেন হোল্ডার (৫/২৭)। দারুণ বোলিংয়ের জন্য তিনিই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

এর আগে শুরু দুই অঙ্কে পৌঁছেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের সবাই। কিন্তু ৪০ পর্যন্ত যেতে পারেননি কেউই। রানের গতি বাড়ানোর মুহূর্তে সব সময় উইকেট হারিয়েছে দলটি।

কাইল হোপকে ফিরিয়ে ১৭.২ ওভার স্থায়ী ৫৭ রানের জুটি ভাঙেন পান্ডিয়া। আরেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান এভিন লুইসকে বিদায় করেন চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদব।

এক সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১২১। সেখান থেকে দুইশ ছাড়ানো খুব কঠিন ছিল না। তবে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের মতো শাই হোপ, রোস্টন চেইস ও মোহাম্মদও বড় ইনিংস খেলার সুযোগ নষ্ট করলে ততদূর যেতে পারেনি স্বাগতিকরা।

উদ্বোধনী জুটির পর পঞ্চাশ পর্যন্ত যেতে পারেনি আর কোনো জুটি। শেষ ৮৩ বলে আসেনি একটিও বাউন্ডারি। তারপরও স্কোর বোর্ড যে রান উঠেছে সেটাকেই যথেষ্ট বলে প্রমাণ করেছেন হোল্ডার, আলজেরি জোসেফরা।

আগামী বৃহস্পতিবার কিংস্টনে হবে পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ১৮৯/৯ (লুইস ৩৫, কাইল ৩৫, শাই ২৫, চেইস ২৪, মোহাম্মদ ২০, হোল্ডার ১১, পাওয়েল ২, নার্স ৪, বিশু ১৫, জোসেফ ৫*, উইলিয়ামস ২*; শামি ০/৩৩, উমেশ ৩/৩৬, জাদেজা ০/৪৮, পান্ডিয়া ৩/৪০, কুলদীপ ২/৩১)

ভারত: ৪৯.৪ ওভারে ১৭৮ (রাহানে ৬০, ধাওয়ান ৫, কোহলি ৩, কার্তিক ২, ধোনি ৫৪, কেদার ১০, পান্ডিয়া ২০. জাদেজা ১১, কুলদীপ ২*, উমেশ ০, শামি ১; জোসেফ ২/৪৬, হোল্ডার ৫/২৭, উইলিয়ামস ১/২৯, বিশু ১/৩১, নার্স ১/২৯, চেইস ০/১৬)

ফল: ১১ রানে জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জেসন হোল্ডার