প্রথম সেমি-ফাইনালে পাকিস্তান জিতেছে ৮ উইকেটে, ৭৭ বল হাতে রেখে।
প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে বিধ্বস্ত হওয়া সরফরাজ আহমেদের দলের জন্য গ্রুপ পর্বের পরের দুটি ম্যাচ ছিল বাঁচা-মরার। সেখানে নিজেদের মেলে ধরার পর এবারও আরও উজ্জ্বল পাকিস্তান। স্বাগতিকদের গুঁড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো উঠলো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে। এর আগে তিনবার শেষ চার থেকে বিদায় নিয়েছিল দলটি।
২০০৩ সালের বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে আইসিসির কোনো ওয়ানডে টুর্নামেন্টে খেলেনি ইংল্যান্ড। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তো খেলল প্রথমবারের মতো। অনেকের মতো টুর্নামেন্টে ফেভারিটরা পাত্তাই পেল না সরফরাজের দলের কাছে।
২১.১ ওভার স্থায়ী ১১৮ রানের জুটিতে অগ্রণী ছিলেন জামান। আদিল রশিদের বলে স্টাম্পড হয়ে শেষ হয় তার ৫৭ রানের ইনিংস।
দ্বিতীয় উইকেটে বাবর আজমের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটিতে ফাইনালের পথে দলকে আরও এগিয়ে নেন আজহার। শতকের পথে থাকা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ফিরেন জেইক বলের স্লোয়ার বলে বোল্ড হয়ে। ১০০ বলে খেলা ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ৭৬ রানের ইনিংসটি গড়া ৫টি চার ও একটি ছক্কায়।
জস বাটলারের ব্যর্থতায় ১ রানে জীবন পাওয়া মোহাম্মদ হাফিজকে নিয়ে বাকিটুকু সহজেই সেরেছেন বাবর আজম। চার হাঁকিয়ে দলকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়া টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ৩৮ রানে। তার সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৪২ রানের জুটিতে হাফিজের অবদান ২৭ রান।
এর আগে মাঠে নামার আগেই পাকিস্তান শিবিরে বড় ধাক্কা; চোটের জন্য ইংল্যান্ড ম্যাচে নেই মোহাম্মদ আমির। তবে দলের সেরা বোলারকে ছাড়াই স্বাগতিকদের কম রানে বেঁধে রাখেন হাসান, জুনায়েদ, রাইস।
গত বছরের শুরু থেকে ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করলে তিনশ রান যেন ইংল্যান্ডের জন্য ডাল ভাত। এই ম্যাচের আগে ১৭ ম্যাচে মাত্র চারবার প্রতিপক্ষকে তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য দিতে পারেনি। বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানে ঠাসা ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেঁধে রাখে পাকিস্তানের বোলাররা। ফিল্ডিংয়েও ছিল উন্নতির স্পষ্ট ছাপ।
স্বাগতিকদের চার ব্যাটসম্যান ছাড়িয়েছেন ত্রিশের কোটা কিন্তু কেউই পারেননি নিজের ইনিংস বড় করতে। নেই কোনো অর্ধশতক, অর্ধশত রানের জুটি।
ওয়াহাব রিয়াজের চোটে দলে জায়গা মেলা রাইস একাদশে আসেন আমিরের চোটে। টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হওয়া রাইসের বলে এলবিডব্লিউ হলে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন অ্যালেক্স হেলস।
তবে বেশিদূর যায়নি উদ্বোধনী জুটি, ভাঙে ৩৪ রানেই। ভাগ্যকে পাশে পাওয়া বেয়ারস্টো ছিলেন অর্ধশতকের পথে। আজহারকে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে ফেরান হাসান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে ৫৭ বলে ৪টি চারে ৪৩ রান করেন বেয়ারস্টো।
দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে হারানো ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান জো রুট ও ওয়েন মর্গ্যান। লেগ স্পিনার শাদাব খানের বলে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া অধিনায়ককে নিয়ে দলকে দৃঢ় অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছিলেন রুট।
শাদাবের বলে কাট করতে গিয়ে রুট সরফরাজের গ্লাভসবন্দি হলে ভাঙে ইংলিশদের সেরা জুটি। ৫৬ বলে মাত্র দুটি চারে ৪৬ রান করে ফিরেন ডানহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
তৃতীয় উইকেটের ৪৮ ছাপিয়ে যেতে পারেনি আর কোনো জুটি। রুটের ৪৬ রানকে পেছনে ফেলতে পারেননি আর কেউ।
দলের বিপদের সময় ডানা মেলতে পারেননি জস বাটলার, মইন আলি। শেষের দুই ভরসাকে বিদায় করেন জুনায়েদ। বদলি ফিল্ডার আহমেদ শেহজাদের দারুণ থ্রোয়ে রান আউট হয়ে বিদায় নেন আদিল রশিদ।
স্বভাব বিরুদ্ধ ব্যাটিংয়ে দলকে দুইশ রানে নিয়ে যান অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান পড়ে ছিলেন মাটি কামড়ে। হাসানের স্লোয়ার উড়ানোর চেষ্টায় ফিরেন ৩৪ রান করে। তার ৬৪ বলের ইনিংসে নেই কোনো চার-ছক্কা!
৩৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সেরা বোলার হাসান। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন জুনায়েদ ও রাইস।
আগামী রোববার ওভালে হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পাকিস্তান খেলবে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে জয়ী দলের বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৪৯.৫ ওভারে ২১১ (বেয়ারস্টো ৪৩, হেলস ১৩, রুট ৪৬, মর্গ্যান ৩৩, স্টোকস ৩৪, বাটলার ৪, মইন ১১, রশিদ ৭, প্লানকেট ৯, উড ৩, বল ২*; জুনায়েদ ২/৪২, রাইস ২/৪৪, ওয়াসিম ০/১৬, শাদাব ১/৪০, হাসান ৩/৩৫, হফিজ ০/৩৩)
পাকিস্তান: ৩৭.১ ওভারে ২১৫/২ (আজহার ৭৬, জামান ৫৭, বাবর ৩৮*, হাফিজ ২৭*; উড ০/৩৭, বল ১/৩৭, স্টোকস ০/৩৮, প্লানকেট ০/৩৩, রশিদ ১/৫৪, মইন ০/১৫)
ফল: পাকিস্তান ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: হাসান আলি (পাকিস্তান)