বড় ম্যাচ নয়, বড় সুযোগ

সকালে গা গরমের ফুটবল খেলা। এরপর দীর্ঘ ও একাগ্র ফিল্ডিং সেশন। বিরতি খুব বেশি নেই, লম্বা নেট সেশন। এরপর খানিক বিরতি দিয়ে নিজের মত করে আবার খানিকটা ব্যাটিং-বোলিং। স্লিপ ক্যাচিং ও কিপিং অনুশীলন। সকাল ৯টায় হোটেল থেকে বেরিয়েছিল বাংলাদেশ দল। এজবাস্টন ছাড়তে ছাড়তে দুপুর গড়িয়ে যায়!

ক্রীড়া প্রতিবেদক বার্মিংহাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2017, 03:06 PM
Updated : 13 June 2017, 03:43 PM

প্রথমবারের মত এত বড় টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনাল। হাতছানি আছে আরও বড় প্রাপ্তির। প্রতিপক্ষ ভারত, সাম্প্রতিক লড়াইয়ের ইতিহাসটাই তাতিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সব মিলিয়েই বুঝি অনুশীলনে এতটা একাত্ম বাংলাদেশ দল!

চন্দিকা হাথুরুসিংহের সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে এটিই উঠল বারবার। বাংলাদেশের জন্য কত বড় ম্যাচ এটি? ছেলেরা কি ভাবছে? কতটা রোমাঞ্চিত? নাকি চাপ! ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালের প্রতিশোধ হবে? ১৬ মিনিটের সংবাদ সম্মেলনের অনেকটা জুড়েই থাকল এসব প্রসঙ্গ।

খেলোয়াড়ী জীবনে বাংলাদেশ কোচ ছিলেন ঠাণ্ডা মাথার, ধীরস্থির, সাবধানী ব্যাটসম্যান। এদিন মাইক্রোফোনের সামনেও বেশ সতর্ক। চটকদার শটের লোভে পা না বাড়িয়ে ছেড়ে দিলেন কিছু, কিছু খেললেন একদম মাঝব্যাটে সলিড ডিফেন্স।

ইদানিং ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ মানেই প্রায় যুদ্ধাবস্থা। এটি তো আরও সেমি-ফাইনাল! তবে যুদ্ধ তো বহুদূর, বড় ম্যাচের আবহটাতেই সায় দিলেন না বাংলাদেশ কোচ। তার ভাবনাটাই ভিন্ন। সেই দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে দিয়েছেন ড্রেসিং রুমে।

“দলের সবাই বেশ রিল্যাক্সড। অবশ্যই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে ছেলেরা। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বলেছিলাম যে যা কিছুই অর্জন করি এখানে, সেটিই হবে বড় কিছু। যে জায়গায় এসেছি, তাতে আমরা দারুণ খুশি। আমরা আত্মবিশ্বাসী। ম্যাচটিকে যে কোনো ম্যাচের মতোই দেখছি।”

“এই বার্তাই দিয়েছি দলকে, এটি বড় ম্যাচ নয়, খুব বড় সুযোগ। এই ধরনের সুযোগ পাওয়ার জন্য, কাজে লাগানোর জন্যই ক্রীড়াবিদরা খেলে, অপেক্ষায় থাকে। ছেলেদের প্রতি আমার বার্তা, সুযোগটা দুহাতে নাও!”

ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তবু একই প্রশ্ন আসে। ম্যাচের বিশেষত্ব, উপলক্ষ্যের বিশালত্ব। লোভনীয় সব ডেলিভারি। হাথুরুসিংহে তবু চার-ছক্কার চেষ্টা করেন না। আলতো খেলে সিঙ্গেল নেন।

“আমরা প্রতিপক্ষ আর উপলক্ষ্য নিয়ে ভাবছি না। শুধু ভাবছি এটা একটি সুযোগ। বিশ্বকে দেখানোর সুযোগ যে আমরা কি করতে পারি, কতটা এগিয়েছি। আমাদের চাওয়া স্রেফ খেলাটা উপভোগ করা।”

“আমার মনে হয় না আমরা নার্ভাস। সেমি-ফাইনাল খেলছি, এই অনুভূতিটা উপভোগ করছি আমরা। ক্রিকেটার, কোচ সবার জন্যই এটি সুযোগ। আমাদের প্রথম সেমি-ফাইনাল, নিজেদের ফুটিয়ে তোলার দারুণ সুযোগ এটি।”

গত দুই বছরে এই দুদলের লড়াই নাটকীয়তা, রোমাঞ্চ আর বিতর্কের যে শাখা-প্রশাখা ছুঁয়েছে যে চাইলেও সেসবকে এড়ানো কঠিন। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনাল চলে আসে; আসে গত বছর এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি ফাইনাল বা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১ রানের হার। তিনটিই বাংলাদেশের শেষ হয়েছে হতাশায়। এবারের ম্যাচ তাই অনেকের কাছে অনেক হিসাব চুকানোর ম্যাচ।

তবে বারুদের গন্ধ গায়ে মাখছেন না হাথুরুসিংহে। বরং তার চাওয়া শিষ্যরা উপভোগ করুক সময়টা। কোচ জানেন, বাংলাদেশের ছেলেরা উপভোগ করলে, প্রতিপক্ষের কাজটিও হবে কঠিন।

“প্রতিশোধ ধরনের কোনো অনুভুতি আমাদের নেই। স্রেফ খুব ভালো একটি ভারতীয় দলের বিপক্ষে ভালো ক্রিকেট খেলার ব্যাপার। জিততে পারলে আমাদের জন্য হবে দারুণ আত্মবিশ্বাসের। আমরা শুধু লড়াই করা, নিজেদের সেরাটা দেওয়া নিয়েই ভাবছি। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে চাই। নিজেদের সামর্থ্যে আস্থা রেখে মাঠে উজার করে দিতে চাই।”

“টুর্নামেন্টের শুরুতে জিজ্ঞেস করলে বলতাম অন্যতম ফেভারিট ভারত। এখনও ফেভারিট ভারত। কিন্তু যেটা বললাম, নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে কোনো দলই আমাদের কাছে সহজে পার পাবে না।”

সামর্থ্য অনুযায়ী খেলা সবার সব দিন হয় না। সেটির নিশ্চয়তাও নেই। তবে কোনো দল মাঠে নেমে উপভোগ করলে সামর্থ্যের সেরাটা বেরিয়ে আসার সম্ভাবনাও বেশি। হাথুরুসিংহে কেন উপভোগের মন্ত্র জপছেন, বোঝাটা খুব কঠিন নয়!