ভারতকে হারিয়ে শ্রীলঙ্কার লক্ষ্য তাড়ার রেকর্ড

ভারতের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাঁচা-মরার ম্যাচে জ্বলে উঠেছেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। কুসল মেন্ডিস, দানুশকা গুনাথিলাকা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের তিন অর্ধশতকে ওভালে লক্ষ্য তাড়ার রেকর্ড গড়েছে শ্রীলঙ্কা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2017, 02:07 PM
Updated : 8 June 2017, 06:55 PM

ভারতের ছুড়ে দেওয়া ৩২২ রানের লক্ষ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ৮ বল বাকি রেখে পৌঁছেছে ম্যাথিউসের দল। 

শ্রীলঙ্কার এই জয়ে ‘বি’ গ্রুপের শেষ দুটি ম্যাচ হয়ে গেল ‘কোয়ার্টার-ফাইনাল’। চার দলেরই পয়েন্ট ২ করে। শেষ দুই ম্যাচে যারা জিতবে তারাই যাবে সেমি-ফাইনালে।

আগামী রোববার ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলবে ভারত। পরদিন কার্ডিফে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা।

ওভালে ওয়ানডেতে এর আগে সর্বোচ্চ ৩১৭ রানের লক্ষ্য তাড়ার রেকর্ড ছিল ভারতের অধিকারে। ২০০৭ সালের সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডকে দুই বল বাকি রেখে ২ উইকেটে হারিয়েছিল তারা।

তারচেয়ে অনেক সহজেই জিতেছে শ্রীলঙ্কা। আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভয়ঙ্কর মনে হওয়া ভারতীয় বোলারদের এদিন খুব সহজেই সামলেছেন মেন্ডিস-গুনাথিলাকা-ম্যাথিউসরা।

 

স্লো ওভার রেটের জন্য আগের ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের উপুল থারাঙ্গার দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে এই ম্যাচ দিয়ে। তার জায়গায় একাদশে এসেই আলো ছড়িয়েছেন চামারা কাপুগেদারার চোটে স্কোয়াডে আসা গুনাথিলাকা। আঁটসাঁট বোলিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় উইকেটে মেন্ডিসের সঙ্গে উপহার দিয়েছেন দারুণ এক জুটি।

শ্রীলঙ্কার শুরুটা ছিল মন্থর। পঞ্চম ওভারেই দলের ১১ রানে নিরোশান ডিকভেলার বিদায়ে চাপ আরও বাড়ে। সেটা দূর হয়েছে গুনাথিলাকা-মেন্ডিসের পেশাদারি ব্যাটিংয়ে। খুব বেশি ঝুঁকি না নিয়েও দ্রুত রান তুলেছেন দুই জনে।

শট খেলায় ঝুঁকি না নিলেও ‘রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে’ ঝুঁকি নিয়েছেন তারা। তার মাসুলও দিয়েছেন রান আউট হয়ে। ১৫৯ রানের চমৎকার জুটি ভেঙে ফিরেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলা গুনথিলাকা। ৭২ বলে খেলা তার ৭৬ রানের ইনিংসটি গড়া ৭টি চার ও দুটি ছক্কায়।

খানিক পরেই ভুবনেশ্বর কুমারের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে যান ম্যাচ সেরা মেন্ডিস। টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান ৯৩ বলে খেলা ৮৯ রানের ইনিংসে হাঁকান ১১টি চার ও একটি ছক্কা।

রান আউটে দুই থিতু ব্যাটসম্যানের বিদায়ের স্বস্তি বেশিক্ষণ থাকেনি। নতুন দুই ব্যাটসম্যান কুসল পেরেরা ও ম্যাথিউসকে চেপে ধরতে পারেনি ভারতীয় বোলাররা। দুই ব্যাটসম্যানের ১০৫ রানের জুটিতে দল এগিয়ে যায় সহজ জয়ে পথে।

হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগায় ৪৩তম ওভার শেষে মাঠ ছাড়েন কুসল পেরেরা। ৪৪ বলে ৫টি চারে ৪৭ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের জায়গায় এসে ভারতীয় বোলারদের ওপর চড়াও হন আসেলা গুনারত্নে।

 

ছক্কায় রানের খাতা খোলা অলরাউন্ডার গুনারত্নে ম্যাথিউসকে দেন নির্ভার খেলার সুযোগ। চোট কাটিয়ে ফেরা অধিনায়ক ৪৫ বলে ৬টি চারে অপরাজিত থাকেন ৫২ রানে। তার সঙ্গে ৫.৪ ওভার স্থায়ী ৫১ রানের জুটিতে গুনারত্নের অবদান ২১ বলে ৩৪ রান।

ভারতের কোনো বোলারই খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। বোলারদের পাওয়া একমাত্র উইকেটটি নেন ভুবনেশ্বর। ঝড় বয়ে গেছে বিশেষজ্ঞ স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার ওপর দিয়ে। ৬ ওভারে তিনি দেন ৫২ রান।

এর আগে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে বৃহস্পতিবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৩২১ রান করে ভারত।

রোহিতের সঙ্গে ১৩৮ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে চমৎকার সূচনা এনে দেন ধাওয়ান। উদ্বোধনী জুটি তো বটেই ভারতের হয়ে যে কোনো জুটিতে প্রথমবারের মতো টানা তিন ইনিংসে শতরান পেলেন দুই জনে।

রানের গতি বাড়ানোর দিকে বেশি মনোযোগী ছিলেন রোহিত, একটু সাবধানী ব্যাটিং করছিলেন ধাওয়ান। ৫৮ বলে অর্ধশতকে পৌঁছানো রোহিত ফিরেন বেশি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে।

লাসিথ মালিঙ্গার আগের বলটি ঠিকঠাক টাইমিং না হলেও ছক্কা পান রোহিত। পরের বলে আবার উড়ানোর চেষ্টায় ফিরেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৭৯ বলে ৬টি চার ৩টি ছক্কায় তার রান ৭৮।

২০১৪ সালের পর প্রথমবারের মতো শূন্য রানে ফিরেন কোহলি। নুয়ান প্রদিপের বল গ্লাইড করতে গিয়ে ডিকভেলার গ্লাভসবন্দি হন তিনি।

 

আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় যুবরাজ খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না। ধাওয়ানের সঙ্গে ৪০ রানের জুটিতে তার অবদান মাত্র ৭।

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে খানিকটা চাপে পড়া ভারত স্বস্তিতে ফেরে ধাওয়ান-ধোনির ব্যাটে। ছক্কায় রানের খাতা খোলা ধোনি খেলেন নিজের মতোই। শুরু থেকেই তাকে মনে হয়েছে থিতু।

ধাওয়ানের সঙ্গে আক্রমণাত্মক ৮২ রানের জুটিতে সমান অবদান ধোনির। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের ৪০, ধোনির ৩৯। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি ভাঙে মালিঙ্গার সাদামাটা এক বলে সীমানায় ধাওয়ানের ক্যাচে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ ছন্দে থাকা ধাওয়ান শেষ চার ইনিংসেই পেরিয়েছেন পঞ্চাশ। এর দুটিকে আবার পরিণত করেছেন শতকে। ফেরার আগে ১২৮ বলে ১৫টি চার আর একটি ছক্কায় খেলেন ১২৫ রানের চমৎকার এক ইনিংস। ক্যারিয়ারে এটা তার দশম শতক।

 

দলকে তিনশ রানে নিয়ে শেষ ওভারে বিদায় নেন ধোনি। ৫২ বলে খেলা ৬৩ রানের ইনিংসটি গড়া ৭টি চার ও দুটি ছক্কায়। শেষের দিকে ১৩ বলে অপরাজিত ২৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন কেদার যাদব।

২ উইকেট নিতে মালিঙ্গা খরচ করেন ৭০ রান। অন্য পেসাররাও ছিলেন খরুচে। তবে ব্যাটসম্যানদের দারুণ ব্যাটিংয়ে শেষ হাসি লঙ্কানদেরই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৫০ ওভারে ৩২১/৬ (রোহিত ৭৮, ধাওয়ান ১২৫, কোহলি ০, যুবরাজ ৭, ধোনি ৬৩, পান্ডিয়া ৯, যাদব ২৫*, জাদেজা ০*; মালিঙ্গা ২/৭০, লাকমল ১/৭২, প্রদিপ ১/৭৩, থিসারা ১/৫৪, গুনাথিলাকা ০/৪১, গুনারত্নে ১/৭)

শ্রীলঙ্কা: ৪৮.৪ ওভারে ৩২২/৩ (ডিকভেলা ৭, গুনাথিলাকা ৭৬ মেন্ডিস ৮৯, কুসল পেরেরা ৪৭ আহত অবসর, ম্যাথিউস ৫২*, গুনারত্নে ৩৪*; ভুবনেশ্বর ১/৫৪, উমেশ ০/৬৭, বুমরাহ ০/৫২, পান্ডিয়া ০/৫১, জাদেজা ০/৬২, কেদার ০/১৮, কোহলি ০/১৭)