বদলে যাওয়া কার্ডিফ থেকেই বদলাতে চায় বাংলাদেশ

“ওই যে র‌্যাডিশ জায়গাটা দেখছেন…”, মাঠের উল্টো প্রান্তের বিজ্ঞাপনী বোর্ডের দিকে দেখালেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, “ওখান দিয়েই ছিল গিলেস্পির বলে আফতাবের ছক্কা। আর এপাশে সিঙ্গেল নিয়ে আশরাফুলের সেঞ্চুরি…।” স্মৃতিময় কার্ডিফে ফিরে মাশরাফি ফিরে যান ১২ বছর আগে, “সব মনে আছে। এই বড় বড় গ্যালারির কিছু ছিল না। বেশিরভাগই ছিল ঘাসের গ্যালারি, ছিল গাছ। ড্রেসিং রুমও এত বড় ছিল না। কার্ডিফ বদলে গেছে অনেক…।”

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিকার্ডিফ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2017, 01:41 PM
Updated : 7 June 2017, 02:12 PM

১২ বছর অনেক লম্বা সময়। বদলে যাওয়ারই কথা। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের বছর দুয়েক পর থেকেই এই মাঠের খোলনলচে পাল্টে যাওয়ার শুরু। মাঠে থেকে সেই জয়ের একমাত্র সাক্ষী মাশরাফি তাই চিনতেই পারছেন না স্মৃতির মাঠ।

২০০৯ অ্যাশেজকে সামনে রেখে ২০০৭ সাল থেকে মাঠ সংস্কার কাজ শুরু হয়। বাড়ানো হয় দর্শক ধারণ ক্ষমতা। সাজানো হয় ঢালাওভাবে। সেই সংস্কারের হাত ধরেই কার্ডিফ পায় টেস্ট ক্রিকেটের স্বাদ। ২০০৯ ও ২০১৫ অ্যাশেজের ম্যাচ হয়েছে এখানে। হয়েছে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আরেকটি টেস্টও।

কয়েক দফায় বদলে গেছে মাঠের নামও। বাংলাদেশের জয়ের সময় ছিল সোফিয়া গার্ডেন্স। ২০০৮ সালে গ্ল্যামরগন কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে স্পন্সরের ১০ বছরের চুক্তির পর স্পন্সরের নামে নাম হয় সোয়েলেক স্টেডিয়াম। এরপর আবারও নাম বদলে এখন ‘দ্য এসএসই সোয়েলেক’। 

বদলে যাওয়া ড্রেসিংরুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েই বুধবার অনুশীলনের আগে মাশরাফির সঙ্গে কথা বলছিলেন চন্দিকা হাথুরুসিংহে। দলের বাকিরা তখন মাঠে, গা গরমের প্রস্তুতি চলছে। ব্যালকনিতে কোচের সঙ্গে অধিনায়কের আলাপচারিতা চলল অনেকক্ষণ।

সভা এরপর ব্যালকনি থেকে নেমে এলো মাঠের ভেতরে। গোল হয়ে দাঁড়িয়ে মাঠেই টিম মিটিং। মাঠেই এভাবে মিটিং হয় নিয়মিতই, তবে এদিন একটু বেশিই লম্বা হলো। শেষ নয় ওখানেই, টিম মিটিং শেষে নেটের পাশে দাঁড়িয়ে আবারও কথা চলল কোচ ও অধিনায়কের। সঙ্গে এবার তামিম ইকবালও।

টিম মিটিংয়ের বিষয়বস্তু সব সর্বসাধারণের শোনার জন্য নয় অবশ্যই। তবে একটু দূর থেকে যা দেখা গেল, কোচ ছাড়াও কথা বলেছেন অধিনায়কসহ দলের কয়েকজন। জানা গেল, অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে দলের পারফরম্যান্সে বেশ ক্ষুব্ধ কোচ। দেশ তার শ্রীলঙ্কা হলেও এখন থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। নিউ সাউথ ওয়েলসে বেশ কিছুদন কোচিং করানোর সুবাদে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট মহলেও একটা জায়গা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলের বাজে ব্যাটিংয়ে তাই চোট একটু বেশিই পেয়েছে কোচ।

এমনিতে ম্যাচের পর তাৎক্ষনিক দলকে কিছু বলেন না কোচ। কাটাছেড়া, প্রশংসা-সমালোচনা, তালি বা ক্ষোভ, জমা রাখেন পরের জন্য। ওভালের ম্যাচ নিয়ে তা বিশ্লেষণ, ক্ষোভ তাই কোচ জানলেন কার্ডিফে।

তবে ওভালেই পড়ে থাকেননি কোচ। থাকতে চানও না। বরং তাকাচ্ছেন সামনে, দলকে দেখাচ্ছেন নতুন দিগন্ত। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সেই দিগন্ত উন্মোচনটা করতে চান বর্তমানের কার্ডিফ থেকেই। মাঠের ভেতরে-বাইরে কোচের ও দলের আলোচনার এই অংশটুকুই শুধু বলতে চাইলেন মাশরাফি।

“দেখুন, আমরা এখন আর তলানির দল নই। আমাদের চিন্তা ভাবনাও সেরকম হতে হবে। ওপরের দিকে তাকাতে হবে। পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, এসব দলকে এখন আমরা নিয়মিতই হারাতে পারব, খেলা যেখানেই হোক। কিন্তু আমাদের তাকাতে হবে অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের দিকে।”

“র‌্যাঙ্কিংয়ে চার বা পাঁচ থাকা দলকে দেখুন, আমাদের ঠিক ওপরে হলেও রেটিং পয়েন্টে ওরা বেশ এগিয়ে। এই ব্যবধানটাই কমাতে হবে। মাঠে ব্যবধান কমলে র‌্যাঙ্কিংয়েও কমবে। দেশের মাটিতে পারলেও দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ডকে নিয়মিত হারানোর জায়গাটায় যেতে হবে আমাদের। শুরুটা এখনই কেন নয়? সেমি-ফাইনাল খেলা নিয়ে ভাবছি না। আমরা জিততে চাই। সেই মানসিকতা দেখাতে চাই।”

অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটিই যেমন একটা বাস্তবতার শিক্ষা দিয়েছে বাংলাদেশ দলকে।

“অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমরা অনেক অনেক দিন পর খেললাম। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে হয়ত ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলাই হবে না। এই সব দলের সঙ্গে খেললে নিজেদের অবস্থাটা বোঝা যায়। ওই কন্ডিশনে স্টার্ক-কামিন্স-হেইজেলউডকে নিয়ে গড়া বোলিং খেলাটা যেমন শিক্ষা। আমি নিশ্চিত, এখনই আবার ওদের বিপক্ষে খেলা হলে আমরা অনেক ভালো করব।”

তবে কোচ যেটা দলকে বলেছেন, আক্ষেপটাই শেষ নয়। বরং হতাশা থেকেই নতন আশার শুরু। র‌্যাঙ্কিংয়ের মাঝামাঝি থেকে আরও উঁচু দিগন্তে ডানা মেলার স্বপ্ন। আপাতত নিউ জিল্যান্ড ম্যাচটিই সেই আশার ঠিকানা। এক যুগ আগে যেখানে রচিত হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঝলমলে এক অধ্যায়, সেই কার্ডিফ থেকেই শুরু হোক না নতুন স্বপ্নের পথে হাঁটা!