অনুশীলনের এই ফুরফুরে মেজাজ অবশ্য মাঠে ধরে রাখার জো নেই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উইকেটগুলোর যা অবস্থা, তাতে শুধু তাসকিন বা মুস্তাফিজ নয়, বৃন্দাবনে নির্বাসনে যেতে চাইতে পারেন সব পেসারই।
উইকেট পেসারদের জন্য কতটা কঠিন? প্রসঙ্গ উঠতেই মুস্তাফিজের মুখ অন্ধকার। কথাই বলতে চান না উইকেট নিয়ে। শুধু বললেন, “কঠিন, খুব কঠিন…।”
প্রথম ম্যাচে একই অভিজ্ঞতা হয়েছে রুবেল হোসেনের। সেদিন না খেললেও বাইরে থেকে দেখে একই উপলব্ধি তাসকিন আহমেদের। এরকম উইকেটে পেসারদের কাজ খুব, খুব কঠিন।
কতটা কঠিন, সেটির বিশদ ব্যখ্যা দিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। দলনেতা তো বটেই, পেসারদেরও নেতা তিনি। পেসারদের দুঃখটা ভালোই পোড়াচ্ছে দেশের সফলতম ওয়ানডে বোলারকে।
শুধু ওভাল নয়, মাশরাফির মতে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডে পেসাররা এখন এরকমই অসহায়।
“এজবাস্টনে দেখুন, মিচেল স্টার্ক সুবিধা করতে পারেনি। হেইজেলউড শেষ ওভারে ৩টি নিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন বটে, তবে শুরুতে রান দিয়েছেন অনেক। দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড সিরিজে কত কত রান হলো। ওদের পেস আক্রমণ তো আমাদের চেয়ে কত ভালো। তবু পারছে না। ইংল্যান্ডে সাড়ে তিনশও এখন নরম্যাল হয়ে গেছে।”
“আমি অপেক্ষায় আছি ভারতীয় পেসারদের দেখতে। ওদের পেস আক্রমণ দুর্দান্ত। সবাই খুব স্কিলফুল পেসার। দেখব ওরা কতটা কি করতে পারে।”
ইংল্যান্ড ম্যাচে পেছন ফিরে তাকিয়ে অধিনায়ক বোলারদের দায় খুব বেশি দিতে পারছেন না।
“বোলাররা সবাই চেষ্টা করেছে। মুস্তাফিজের বলেই কিছু হচ্ছিল না। ২-৩টা বল মাত্র একটু গ্রিপ করে। আর কিছু করেনি। রুবেল খারাপ বল করেনি, আমি চেষ্টা করেছি। রান আরও বেশি হলে হয়ত রান রেটের চাপ ওরা অনুভব করত, তখন কিছু হতে পারত। সেটা হয়নি। এমনকি সাকিব পর্যন্ত সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও কিছু করতে পারেনি। বারবার বলেছে, “ভাই, এই উইকেটে কিছুই হচ্ছে না।”
“বড় রানের ম্যাচ হলে আমাদের জন্য কাজটা কঠিন। যদি উইকেট একটু গ্রিপ করত, কিংবা যদি স্পোর্টিং হতো, ২৮০ বা ৩০০ রানের উইকেট হলে আমাদের দারুণ সম্ভাবনা থাকত। আমরা ওদের আটকে রাখতে বা তাড়া করতে পারতাম। কিন্তু সাড়ে তিনশর খেলা হলে আমাদের জন্য অনেক কঠিন।”
তাহলে কি অসহায় বসে থাকা ছাড়া কিছু করার নেই? নেই কোনো সমাধান? পেসারদের নেই কোনো উপায়? মাশরাফি দেখালেন মন্দের ভালো উপায়।
“উপায় আছে, ১০ ওভারে ৬০ বলের ৪০টিই ইয়র্কার করতে হবে! তবু দেখা যাবে ৫০ রান হয়ে গেছে। এসব উইকেটে আসলে ৫০ কেন, ৬০ রানও বেশ ভালো। ৫ বোলার ৬০ রান করে দেওয়া মানে ৩০০ রান, যেটি বেশ ভালো বোলিং। আমাদেরও সেটিই করতে হবে। একটু বৈচিত্র দিয়ে, ব্যাটসম্যান বুঝে জায়গামত বল ফেলে রানটা যত সম্ভব আটকে রাখতে হবে।”
ওভারপ্রতি ৬ রান দেওয়াও এখন বেশ ভালো বোলিং! মাশরাফির কথায় ফুটে উঠল সময়ের বাস্তবতা। ক্রিকেট খেলাটাই বদলে গেছে অনেক। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে বদলাতে হবে বাংলাদেশকেও!