‘৬০ বলের ৪০টি ইয়র্কার করতে হবে’

অনুশীলন তখন শেষ পর্যায়ে। মাঠের এক পাশে মজা করে ব্যাটিং-বোলিং ‘খেলছিলেন’ মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ। বাঁহাতি লেগ স্পিন করছিলেন মুস্তাফিজ, তাসকিন চেষ্টা করছিলেন কল্পিত ফিল্ডারদের ফাঁক গলিয়ে চার মারতে। একটি শট খেলতে গিয়ে ব্যাটে-বলে হলো না তাসকিনের। আকর্ণ বিস্তৃত হাসিতে মুস্তাফিজ বললেন, “এটা ব্যাটে লাগলেই বল আকাশে উঠত। বৃন্দাবনে চলে যেতে তুমি…!”

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিলন্ডন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2017, 03:48 PM
Updated : 3 June 2017, 03:56 PM

অনুশীলনের এই ফুরফুরে মেজাজ অবশ্য মাঠে ধরে রাখার জো নেই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উইকেটগুলোর যা অবস্থা, তাতে শুধু তাসকিন বা মুস্তাফিজ নয়, বৃন্দাবনে নির্বাসনে যেতে চাইতে পারেন সব পেসারই।

উইকেট পেসারদের জন্য কতটা কঠিন? প্রসঙ্গ উঠতেই মুস্তাফিজের মুখ অন্ধকার। কথাই বলতে চান না উইকেট নিয়ে। শুধু বললেন, “কঠিন, খুব কঠিন…।”

প্রথম ম্যাচে একই অভিজ্ঞতা হয়েছে রুবেল হোসেনের। সেদিন না খেললেও বাইরে থেকে দেখে একই উপলব্ধি তাসকিন আহমেদের। এরকম উইকেটে পেসারদের কাজ খুব, খুব কঠিন।

কতটা কঠিন, সেটির বিশদ ব্যখ্যা দিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। দলনেতা তো বটেই, পেসারদেরও নেতা তিনি। পেসারদের দুঃখটা ভালোই পোড়াচ্ছে দেশের সফলতম ওয়ানডে বোলারকে।

“এই যে, এখানকার উইকেট দেখুন…” পাশেই নেটের উইকেটের দিকে ইঙ্গিত করলেন মাশরাফি। শনিবার বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ছিল লন্ডন শহরের বাইরে, বেরিল্যান্ডে লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকসের স্পোর্টস গ্রাউন্ডে। ফুলহ্যাম ফুটবল ক্লাবের একাডেমি মাঠও এটি। এখানকার নেটে খানিকটা ঘাসের ছোঁয়া। মাশরাফি বলে চলেন, “এরকম উইকেট হলে তবু চলে। নেটের উইকেটগুলোও ব্যাটিং উইকেট, কিন্তু বোলারদের জন্যও কিছু আছে। ওভালে কিচ্ছু নেই।”

শুধু ওভাল নয়, মাশরাফির মতে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডে পেসাররা এখন এরকমই অসহায়।

“এজবাস্টনে দেখুন, মিচেল স্টার্ক সুবিধা করতে পারেনি। হেইজেলউড শেষ ওভারে ৩টি নিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন বটে, তবে শুরুতে রান দিয়েছেন অনেক। দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড সিরিজে কত কত রান হলো। ওদের পেস আক্রমণ তো আমাদের চেয়ে কত ভালো। তবু পারছে না। ইংল্যান্ডে সাড়ে তিনশও এখন নরম্যাল হয়ে গেছে।”

“আমি অপেক্ষায় আছি ভারতীয় পেসারদের দেখতে। ওদের পেস আক্রমণ দুর্দান্ত। সবাই খুব স্কিলফুল পেসার। দেখব ওরা কতটা কি করতে পারে।”

ইংল্যান্ড ম্যাচে পেছন ফিরে তাকিয়ে অধিনায়ক বোলারদের দায় খুব বেশি দিতে পারছেন না।

“বোলাররা সবাই চেষ্টা করেছে। মুস্তাফিজের বলেই কিছু হচ্ছিল না। ২-৩টা বল মাত্র একটু গ্রিপ করে। আর কিছু করেনি। রুবেল খারাপ বল করেনি, আমি চেষ্টা করেছি। রান আরও বেশি হলে হয়ত রান রেটের চাপ ওরা অনুভব করত, তখন কিছু হতে পারত। সেটা হয়নি। এমনকি সাকিব পর্যন্ত সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও কিছু করতে পারেনি। বারবার বলেছে, “ভাই, এই উইকেটে কিছুই হচ্ছে না।”

সোমবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটিও এই ওভালেই। উইকেট অন্যরকম হওয়ার সম্ভাবনা সামান্যই। বাংলাদেশ অধিনায়ক এই ম্যাচেও বোলারদের কঠিন সময় দেখতে পাচ্ছেন।

“বড় রানের ম্যাচ হলে আমাদের জন্য কাজটা কঠিন। যদি উইকেট একটু গ্রিপ করত, কিংবা যদি স্পোর্টিং হতো, ২৮০ বা ৩০০ রানের উইকেট হলে আমাদের দারুণ সম্ভাবনা থাকত। আমরা ওদের আটকে রাখতে বা তাড়া করতে পারতাম। কিন্তু সাড়ে তিনশর খেলা হলে আমাদের জন্য অনেক কঠিন।”

তাহলে কি অসহায় বসে থাকা ছাড়া কিছু করার নেই? নেই কোনো সমাধান? পেসারদের নেই কোনো উপায়? মাশরাফি দেখালেন মন্দের ভালো উপায়।

“উপায় আছে, ১০ ওভারে ৬০ বলের ৪০টিই ইয়র্কার করতে হবে! তবু দেখা যাবে ৫০ রান হয়ে গেছে। এসব উইকেটে আসলে ৫০ কেন, ৬০ রানও বেশ ভালো। ৫ বোলার ৬০ রান করে দেওয়া মানে ৩০০ রান, যেটি বেশ ভালো বোলিং। আমাদেরও সেটিই করতে হবে। একটু বৈচিত্র দিয়ে, ব্যাটসম্যান বুঝে জায়গামত বল ফেলে রানটা যত সম্ভব আটকে রাখতে হবে।”

ওভারপ্রতি ৬ রান দেওয়াও এখন বেশ ভালো বোলিং! মাশরাফির কথায় ফুটে উঠল সময়ের বাস্তবতা। ক্রিকেট খেলাটাই বদলে গেছে অনেক। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে বদলাতে হবে বাংলাদেশকেও!