আমলা, তাহিরের নৈপুণ্যে দ. আফ্রিকার শুভ সূচনা

আঁটসাঁট বোলিংয়ের ফাঁস কেটে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছেন হাশিম আমলা। অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে তিনশ রানের লক্ষ্যকে পাহাড়সম বানিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্সরা। সঙ্গে বল হাতে জ্বলে উঠেছেন ইমরান তাহির। তাতে শ্রীলঙ্কাকে সহজেই ৯৬ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2017, 02:07 PM
Updated : 3 June 2017, 06:31 PM

শ্রীলঙ্কা হেরেছে তাদের দুই পুরানো শত্রুর কাছে। তাহির, আমলা দুই জনেরই খুব প্রিয় প্রতিপক্ষ এই দলটি।

ক্যারিয়ার গড়ের চেয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইকোনমি, গড়, স্ট্রাইক রেট সব কিছুই ভালো তাহিরের। ২৭ রানে ৪ উইকেট সেটাকে আরেকটু সমৃদ্ধ করলেন এই লেগ স্পিনার।

উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আমলা টানা দুই ইনিংসে শতক পেলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দ্বীপ দেশটির বিপক্ষে ১৫ ইনিংসে এটি তার পঞ্চম শতক। ওয়ানডেতে তার এত শতক আছে আর কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।       

লন্ডনের কেনিংটন ওভালে শনিবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ২৯৯ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ৪১ ওভার ৩ বলে ২০৩ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।

 

নিরোশান ডিকভেলা ও উপুল থারাঙ্গার ব্যাটে শ্রীলঙ্কার শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। ৮.২ ওভারের উদ্বোধনী জুটিতে দুই জনে তুলেন ৬৯ রান। প্রথম ১০ ওভারে শ্রীলঙ্কা তুলে ৮৭ রান। অমন শুরুটা শেষ পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যেতে পারেনি তারা।

ব্যাটিংয়ে বেশি কিছু করতে না পারা ডি ভিলিয়ার্স ফিল্ডিং আর বোলিং পরিবর্তনে এদিন ছিলেন দারুণ। বোলিংয়ে পরিবর্তন করে পেয়েছেন সাফল্য, নিজের প্রথম ওভারে উইকেট নিয়েছেন মর্নে মর্কেল, ক্রিস মরিস ও তাহির।

মর্কেল ফেরান বিপজ্জন ডিকভেলাকে। মরিসের বলে কুসল মেন্ডিসের অসাধারণ এক ক্যাচ নেন ডি ভিলিয়ার্স।

লেগ স্পিনার তাহির আক্রমণে আসার পরই ডি ভিলিয়ার্সের থ্রো রান আউট হয়ে যান দিনেশ চান্দিমাল। সেই ওভারেই গুগলিতে বিভ্রান্ত চামারা কাপুগেদারাকে বিদায় করে নিজের প্রথম উইকেট নেন তাহির।

নিয়মিত বোলারদের মধ্যে সবার পরে বোলিংয়ে আসা তাহিরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেন শ্রীলঙ্কার। ঝড়ো গতিতে ছুটতে থাকা দলটির রানের গতি বাধ দেওয়ার সঙ্গে উপড়ে ফেলেন বড় বড় বাধাগুলো। তার ওপর চড়াও হতে গিয়ে বিদায় নেন আসেলা গুনারত্নে।

 

তাহিরের গুগলিকে সীমানা ছাড়ার চেষ্টায় ডেভিড মিলারকে ক্যাচ নিয়ে ফিরেন শ্রীলঙ্কার আশা হয়ে টিকে থাকা থারাঙ্গা। অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া বাঁহাতি এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ৬৯ বলে খেলা ৫৭ রানের ইনিংসে হাঁকিয়েছেন ৬টি চার।

৬৯ রানের উদ্বোধনী জুটিই হয়ে থেকেছে সেরা জুটি। পরের ব্যাটসম্যানরা ব্যস্ত ছিলেন যাওয়া আর আসায়। শ্রীলঙ্কা শেষ ৯ উইকেট হারায় ১০৯ রানে। যা একটু প্রতিরোধ গড়েন কুসল পেরেরা, ৪৪ রানে অপাজিত থাকেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।

শ্রীলঙ্কার ইনিংসের শেষটা ম্যাচ সেরা তাহিরের হাত ধরে। তাকে উড়ানোর চেষ্টায় জেপি দুমিনির হাতে ধরা পড়েন নুয়ান প্রদিপ।

এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ছিল মন্থর। লাসিথ মালিঙ্গা, সুরঙ্গা লাকমল ও প্রদিপের আঁটসাঁট বোলিংয়ে রানের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছিল আমলা ও কুইন্টন ডি কককে।

ডি কককে উইকেটরক্ষকের ক্যাচে পরিণত করে দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন প্রদিপ। পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলে যাচ্ছিলেন আমলা, পা দেননি কোনো ফাঁদে। 

দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা জুটি হয় এরপরেই। মাত্র ১৫ রানেই দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙার সুযোগ এসেছিল। প্রদিপের বলে সীমানায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফাফ দু প্লেসির ক্যাচ ছেড়ে দেন মালিঙ্গা।

৮ রানে জীবন পাওয়া দু প্লেসি ফিরেন সেই প্রদিপের বলে। ততক্ষণে দ্বিতীয় উইকেটে উঠেছে ১৪৫ রান। ৭০ বলে ৬টি চারে ৭৫ রান করে চান্দিমালের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন দু প্লেসি।

১ উইকেটে ১৮৯ রানের দৃঢ় ভিত পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার নজর ছিল তিনশ ছাড়িয়ে আরও দূরে। শেষের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তাদের তার আগেই থামায় লঙ্কান বোলাররা। 

 

লেগ স্পিনার সিকুগে প্রসন্নকে পুল করতে গিয়ে দ্রুত ফিরেন ডি ভিলিয়ার্স। চার দিয়ে শুরু করা ডেভিড মিলার ফিরেন থিতু হয়ে। দলের ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে রান আউট হয়ে ফিরেন আমলা (১০৩)। ডানহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের ১১৫ বলের ইনিংসটি সাজানো ৫টি চার ও দুটি ছক্কায়।  

কদিন আগেই বিরাট কোহলির কাছ থেকে দ্রুততম ৭ হাজার রানে পৌঁছানোর রেকর্ড কেড়ে নিয়েছিলেন আমলা। ভারতের তারকা ব্যাটসম্যানকে (১৬২) পেছনে ফেলে সবচেয়ে কম ১৫১ ইনিংসে ২৫ শতক করার কীর্তিও ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি।

দ্রুত তিন উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকা তিনশ রানের খুব কাছে যায় দুমিনি ও ক্রিস মরিসের ব্যাটে। শেষ দুই বলে চার-ছক্কা হাঁকানো বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান দুমিনি অপরাজিত থাকেন ৩৮ রানে।

৫৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার প্রদিপ। ৫৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন মালিঙ্গা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ২৯৯/৬ (আমলা ১০৩, ডি কক ২৩, দু প্লেসি ৭৫, ডি ভিলিয়ার্স ৪, মিলার ১৮, দুমিনি ৩৮*, মরিস ২০, পার্নেল ৭*; মালিঙ্গা ০/৫৭, লাকমল ১/৫১, প্রদিপ ২/৫৪, গুনারত্নে ০/৬৪, প্রসন্ন ১/৭২)

শ্রীলঙ্কা: ৪১.৩ ওভারে ২০৩ (ডিকভেলা ৪১, থারাঙ্গা ৫৭, মেন্ডিস ১১, চান্দিমাল ১২, কাপুগেদারা ০, পেরেরা ৪৪*, গুনারত্নে ৪, প্রসন্ন ১৩, লাকমল ০, মালিঙ্গা ১, প্রদিপ ৫; রাবাদা ১/৪৬, পার্নেল ০/৫৪, মর্কেল ১/৩১, মরিস ২/৩২, তাহির ৪/২৭, দুমিনি ০/৭)    

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৯৬ রানে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ইমরান তাহির