আমলার কাছ থেকে শিখে কোহলির অপেক্ষায় তামিম

দল হারলে ম্লান হয়ে যায় ব্যক্তিগত অনেক প্রাপ্তিই। ভালো লাগার রেশটাও যায় মিলিয়ে। তামিম ইকবালের সেঞ্চুরির তৃপ্তিতেও তাই গ্রহণ লেগেছে দলের হারে। তবে একটা স্বস্তি তো আছেই। আরও একটা সেঞ্চুরি বলেই শুধু নয়, ওয়ানডের বড় আসরে এই প্রথম সেঞ্চুরি।

ক্রীড়া প্রতিবেদক লন্ডন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2017, 03:11 PM
Updated : 2 June 2017, 03:11 PM

শিখর পানে ছুটে চলা তামিমের নতুন একটি মাইলফলক। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই বলেছিলেন, শুরুটা ভালো করতে পারলে ইনিংস টেনে নিতে চান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে করেছেন সেটিই। করেছেন ১২৮, আউট হয়েছেন ৪৫তম ওভারে।

ইনিংসটি যেভাবে গড়েছেন, সেটিও তামিমের পরিণত ব্যাটিংয়ের একটি প্রমাণ। নিজের কাজটা ঠিকভাবে করতে পারায় নিজেকে ভাবছেন ভাগ্যবান।

“গত দু বছর ধরেই আমার বেশ ভালো সময় কাটছে, নিজের জন্য যেমন, দলের জন্যও। আমি চেষ্টা করি শুরু পেলে সেটিকে বড় করতে যেন দলের কাজে লাগে। সেদিকেই মন থাকে আমার। আমি ভাগ্যবান যে সেটি করতে পেরেছি।”

২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে বড় ইনিংস খেলার ক্ষেত্রে তামিমের অসাধারণ উন্নতির প্রমাণ হয়ে আছে পরিসংখ্যান। বিশ্বকাপ পর্যন্ত ১৫১ ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি ছিল ৪টি, হাফসেঞ্চুরি ২৮টি। বিশ্বকাপের পর থেকে ২৯ ম্যাচেই সেঞ্চুরি করে ফেললেন ৫ সেঞ্চুরি। হাফ সেঞ্চুরি আরও ৮টি।

এই সময়ে টেস্টেও পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছেন প্রথম সেঞ্চুরি।

তামিমের মতে, মানসিকতা বদলে ফেলার প্রতিফলনই পড়ছে তার ব্যাটিংয়ে। আর মানসিকতার বদলটি এসেছে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে কথা বলে।

“টেকনিক নিয়ে আমার কখনোই সমস্যা ছিল না। ব্যাপারটি ছিল মানসিক। সুযোগ পেলেই আমি অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার, কোচ, দেশের বাইরের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলি। আমি কথা বলতে পছন্দ করি, কারণ শেখার কোনো শেষ নেই।”

“হাশিম আমলার সঙ্গে কথা বলে যেমন অনেক শিখেছি। কয়েকজন ভারতীয় ক্রিকেটারের সঙ্গেও কথা বলেছি। আগে যখন শচিনের সঙ্গে কথা বলেছি, সে যেভাবে কথা বলে, একটি-দুটি টিপসই আরও ভালো ক্রিকেটার হতে সাহায্য করে। সুযোগ পেলে আমি বিরাট কোহলির সঙ্গেও কথা বলতে চাই। কারণ সে শুরুটাকে বড় স্কোরে রূপ দেওয়ার ওস্তাদ।”

অথচ ২০১৫ বিশ্বকাপের সময়ও সমালোচনায় ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে তাকে। বরাবরই তিনি সমালোচকদের প্রিয় লক্ষ্যবস্তু। ভালো সময়ে সেই সময়ের কথাও ভোলেননি তামিম।

“আমি অবশ্যই নিখুঁত নই। আমাকেও ভীষণ রকম বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তবে আমি সবসময় খেলা নিয়ে কাজ করে যেতে চেয়েছি। অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি যে বাজে সময়টা তারা কিভাবে কাটিয়েছে। চেষ্টা করেছি, সেসব জেনে উন্নতি করে যেতে।”

মানসিকতা বদলের লড়াইয়ে বড় একটা জয় ছিল ফিটনেস নিয়ে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া। ফিটনেসটা আগের চেয়ে অনেক ভালো বলেই ব্যাটিং ভালো হচ্ছে।

“ফিটনেসের ওপর এই সময়ে অনেক মনোযোগ দিয়েছি। গত দু বছরে প্রায় ১০ কেজির মতো ওজন কমিয়েছি। সেটা অবশ্যই সাহায্য করেছে। আগের চেয়ে তাই বড় ইনিংস বেশি খেলতে পারি। এখনও হয়ত অনেক সময় উইকেট বিলিয়ে আসব, এখনও ৫০-৬০ রানে আউট হই, তবে আগের চেয়ে সুযোগ এখন বেশি কাজে লাগাতে পারি।”

শরীরের ওজন কমেছে, বেড়েছে মনের ওজন। ভারী হয়ে উঠছে তার রানের পাল্লা। বাংলাদেশের সেরা হয়ে আছেন বেশ আগে থেকেই। হাঁটছেন এখন বিশ্বসেরাদের একজন হওয়ার পথে, যেটির প্রতিশ্র্রতি নিয়েই শুরু করেছিলেন ক্যারিয়ার।