সেই ইংল্যান্ড, আবারও তামিম

আবারও কি সেই আকাশ ছোঁয়া লাফ হবে? বাধনহারা কোনো দৌড়? বেন স্টোকসের সঙ্গে কথার লড়াইয়ের রেশ কি থাকবে উদযাপনে? খ্যাপাটে কিছু! জল্পনা ছিল অনেক কিছুর। হলো না সেসবের কিছুই। ব্যাটিংয়ে যেমন, মানসিকতায়ও পরিণত এখন তামিম ইকবাল। সেঞ্চুরি উদযাপনও হলো পরিমিত।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিলন্ডন থেকে, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2017, 12:53 PM
Updated : 1 June 2017, 08:10 PM

ইংল্যান্ডের সঙ্গে তামিমের ‘ভালোবাসার সম্পর্ক’ বেশ পুরোনো। ক্যারিয়ারের গৌরবোজ্জ্বল একট অধ্যায় রচনা করেছিলেন এখানেই, ২০১০ সালে। লর্ডসে অসাধারণ সেঞ্চুরির পর নজর কেড়েছিলেন আকাশ ছোঁয়া লাফের সেই উদযাপনেও। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে পরের টেস্টেও আরেকটি অসাধারণ সেঞ্চুরি। এবার সেই ইংল্যান্ডেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি।

সেবার ইংল্যান্ড সফরের আগেও ইংলিশদের বেশ ভুগিয়েছিলেন তামিম। দেশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ঝড় তুলেছিলেন। তবে দুবার আশি ও আরেকবার পঞ্চাশ পেরিয়েও সেঞ্চুরি পাননি, যেটি পান ওয়ানডেতে। মিরপুরে করেছিলেন ১২০ বলে ১২৫।

সেটির পর আরও ১০ বার ব্যাট করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে। পঞ্চাশও ছুঁতে পারেননি। সব হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে নিলেন ইংল্যান্ডের মাটিতেই।

ঘোচালেন একটি আক্ষেপও। এর আগে তিনটি বিশ্বকাপ ও তিনটি এশিয়া কাপ খেললেও ওয়ানডের বড় আসরে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না তামিমের। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথম ম্যাচেই দারুণ সেঞ্চুরি করে সেই অপেক্ষার অবসান।

৭ বছর আগে ইংল্যান্ডের সেই তামিমের সঙ্গে এই তামিমের পার্থক্য অনেক। সেই সময়ের মতো শুর থেকেই খ্যাপাটে ব্যাট করেন না তামিম। নন আগের মত আগ্রাসী। বয়স আর অভিজ্ঞতা তাকে করেছে দায়িত্বশীল। এখন সময় নিয়ে থিতু হন, লম্বা সময় টেনে নেন দলকে, যার আরেকটি প্রদর্শনী মেলে ধরলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওভালে।

এখনকার তামিমের মতোই শুরুটা ছিল ভীষণ সাবধানী। প্রথম ওভার খেলেছিলেন মেডেন, প্রথম ২০ বলে ছিল ৪ রান। প্রথম বাউন্ডারি পেয়েছিলেন মার্ক উডের বল গ্লাভসে লেগে। উডের পরের ওভারেই দুর্দান্ত এক স্ট্রেট ড্রাইভে মারলেন চার। ওই শটেই ফিরল বুঝি আত্মবিশ্বাস, তামিমও ফিরলেন আপনায়।

জেইক বলকে ফ্লিক করে চার, উডকে পুল করে। দৃষ্টিনন্দন আরেকটি স্ট্রেট ড্রাইভে চার লিয়াম প্লাঙ্কেটকে। প্লাঙ্কেটকেই বাউন্ডারি মেরে অর্ধশতক ৭১ বলে।

আত্মবিশ্বাস তখন চূড়ায়, বল দেখছেন হয়ত ফুটবলের মতো। বেরিয়ে এসে মইন আলিকে ওড়ালেন লং অফ দিয়ে। প্লাঙ্কেটের বলে আরও দুটি চার পরপর দু বলে।

বেন স্টোকসের বলে একটি বাউন্ডারির পর বেশ তেঁতে গেলেন এই অলরাউন্ডার। কিছু একটা বললেন তামিমও। তামিমও দিলেন পাল্টা জবাব। চলল কথার লড়াই কিছুক্ষণ।

তবে স্টোকসের চেষ্টায় কাজ হয়নি। তামিমের মনোসংযোগে চিড় ধরেনি। ১২৪ বলে করেছেন সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে তার নবম, উপমহাদেশের বাইরে দ্বিতীয়।

সেঞ্চুরির পর ছক্কা মেরেছেন মইন ও উডকে। ছাড়িয়ে গেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ ১২৫ রানকে। একটু ক্লান্তি ভর করেছিল শেষ দিকে। প্লাঙ্কেটের বলে পুল করে আউট হলেন ১২৮ রানে। ৩ ছক্কার পাশে মেরেছেন ১২টি চার।

ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের আগের দিন তামিম বলেছিলেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের কেউ থিতু হলে তাকে ইনিংস টেনে নিতে হবে, লম্বা করতে হবে যতটা সম্ভব। দায়িত্বটি নিজের কাঁধেই নিলেন তামিম। আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন, কেন তিনি দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, কেন দলের ভরসা!