প্রত্যাশার ভার নাকি উপভোগের আনন্দ?

কেন ব্যারিংটন ক্রিকেট সেন্টার থেকে বেরিয়ে আইসিসির গাড়িতে উঠছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সেদিকে এগিয়ে যেতেই অধিনায়ক হাসতে হাসতে বললেন, “ইংল্যান্ড নাকি চাপে আছে! তাহলে আমাদের ওপর কি? ওদের হয়ত মিডিয়ার প্রেশার আছে, লোকজন তো অত ভাবেও না। আর আমাদের তো লোকের আশা আকাশচুম্বী…!”

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিলন্ডন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2017, 04:31 PM
Updated : 31 May 2017, 04:31 PM

আগের দিন ম্যাচ খেলায় বুধবার অনুশীলন করেনি বাংলাদেশ দল। সংবাদ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে অধিনায়ক ফিরে যাচ্ছিলেন হোটেলে। সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গই বলছিলেন অধিনায়ক, যেখানে বারবার উঠে এসেছে প্রত্যাশা, সম্ভাবনা, চাপ, বাস্তবতা, এই শব্দগুলো।

টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এই শব্দগুলির ওড়াউড়ি এমনিতে অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু প্রত্যাশা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে! এক ইংলিশ সংবাদকর্মীর প্রশ্নের জবাবে অধিনায়ক যেমন একটু ব্যঙ্গ করার মত করে বললেন, “লোকে তো ভাবছে আমরা এবার ট্রফি নিয়ে ফিরব!”

ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশার ব্যাপারটিই এমন। প্রত্যাশার ঘোড়া ছুটিয়ে দাও, লাগাম টানার দরকার নেই! কিন্তু অধিনায়ক তো জানেন, লাগামহীন ঘোড়া যখন দিশা হারায়, সেটির দায় নিতে হয় ক্রিকেটারদের। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে হার নিয়েও যেমন দেশে প্রায় তুলকালাম বাধার জোগাড়। অনেকটা আক্ষেপের সুরে যেমন বললেন, “আমাদের ওপর অনেক চাপ। একটা ম্যাচ হারলেও দেখা যাবে অনেক কথা হবে।”

আর একটা ম্যাচও না জিতলে? তীরবিদ্ধ ছবি সহজই অনুমেয়। প্রত্যাশা, সম্ভাবনার কথা তাই যতবার উঠেছে, ততবারই মাশরাফি বোঝাতে চেয়েছেন বাস্তবতা। কি সেই বাস্তবতা?

প্রথমেই গ্রুপ। ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ছয়ে উঠেছে বটে। কিন্তু গ্রুপের তিন দলই বাংলাদেশের ওপরে। তার পর কন্ডিশন। ইংল্যান্ড তো স্বাগতিকই, অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের জন্যও এই কন্ডিশন ততটা সহজ, যতটা কঠিন বাংলাদেশের জন্য।

বাস্তবতা তাই বলছে, ট্রফি নেওয়া বহুদূর, গ্রুপ পর্ব উতরানোও বাংলাদেশের জন্য কঠিন।

তাই বলে এমন ভাবার কারণ নেই, সব ম্যাচ হারবে ধরে নিয়েই বসে আছেন অধিনায়ক। বাস্তবতা বোঝানোর চেষ্টা আসলে প্রত্যাশার আঁচ থেকে দলকে রক্ষার বর্ম। মজার ব্যাপার হলো, অধিনায়ক আসলে প্রত্যাশা পূরণ করতেই চান! তবে লোকের লাগামহীন প্রত্যাশা নয়, নিজেদের কাছে নিজেদের প্রত্যাশা।

“আমি মনে করি আমাদের ভালো সুযোগ আছে। যোগ্যতা বলে আমরা খেলছি এখানে। এখন আমাদের এটা সারা বিশ্বকে দেখানোর সুযোগ যে দেশের বাইরেও প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে পারি। নিজেদের স্কিল দেখানোর দারুণ সুযোগ এটি।”

“আমরা এখনে শুধু খেলার জন্য আসিনি। লোকের কথা বাদ দিলাম, নিজেদের কাছে নিজেদের যে প্রত্যাশা আছে, সবাইকে দেখিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। হার-জিত অবশ্যই আগে বলতে পারি না। আমার বিশ্বাস আছে, নিজেদের কাছে নিজেদের প্রত্যাশাটা পূরণ করতে পারলে সারা বিশ্ব দেখবে যে আমরা উন্নতি করছি।”

একসময় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে চাওয়াটাও বাংলাদেশের জন্য ছিল বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানোর ব্যাপার। আজ উন্নতির নভোযানে চড়ে চন্দ্রপিষ্ঠে পা রেখেছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক বললেন, সেই গর্বই হবে এই টুর্নামেন্টে তার দলের মূল অনুপ্রেরণা ও চালিকাশক্তি।

“আমরা র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করে এখানে খেলতে এসেছি। দেড়-দু বছর আগেও বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীও হয়ত ভাবতে পারেনি যে আমরা এই টুর্নামেন্ট খেলব। আমরা ভালো খেলে এই পর্যন্ত এসেছি। এই জন্যই আমাদের গর্ব হয়ত বেশি। দু বছর ধরে ম্যাচ জিতে এসেছি, গর্ব অনুভব করাই স্বাভাবিক।”

“প্রথমবার আমরা সত্যিকার যোগ্যতা বলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলছি। ছেলেরা তাই দারুণ রোমাঞ্চিত। ওরা সেরাটাই ঢেলে দেবে।”

আর সেরাটা দিতে পারলে? এই দল দেখিয়েছে তারা আপাত অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারে। প্রত্যাশার বেলুন আগেই না ফুলিয়ে তাই ধাপে ধাপে দম দেওয়াই শ্রেয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে পারাও বড় অর্জন। ক্রিকেটারারা তাই উদযাপন করুক সেই অর্জন, উপভোগ করুক খেলা।

‌একটা দল যদি নিজেদের খেলা উপভোগ করতে থাকে, সেটি দেখার চেয়ে উপভোগ্য কিছু আর নেই!