বাংলাদেশের একাদশ, বোলি-ফিল্ডিংয়ে শরীরী ভাষা বলে দিচ্ছিল ম্যাচটিকে খুব গুরুত্ব দেয়নি দল। তাই বলে এমন হতশ্রী ব্যাটিং! ব্যাটিংয়ে তো গা ছাড়া থাকার সুযোগই নেই। কিন্তু এখানেই দেখা গেল ছাড়াছাড়ির চূড়ান্ত। বাজে ব্যাটিংয়ে ভারতের কাছে উড়ে গেল বাংলাদেশ।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি ম্যাচে ভারত জিতেছে ২৪০ রানে। ওভালে ভারতের ৩২৪ রান তাড়ায় বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ৮৪ রানেই।
শুরতে যা অবস্থা ছিল, তাতেই মনে হচ্ছিলো তিন অঙ্ক ছোঁয়া কঠিন। ইনিংসের বয়স ৮ ওভার না হতেই বাংলাদেশ ৬ উইকেট হারিয়েছিল ২২ রানে!
সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত এইটুকু আসতে পারাও আসলে লড়াই করে নয়। স্রেফ ম্যাচের দৈর্ঘ্য বেড়েছে খানিকটা। তার পরও বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ২৩.৫ ওভারেই।
শুরুটা সৌম্য সরকারকে দিয়ে। পাকিস্তানের বিক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের মতোই আউট হলেন শরীর থেকে দূরে খেলে। কট বিহাইন্ডের সিদ্ধান্তটি নিয়ে অবশ্য সন্তষ্ট মনে হয়নি সৌম্যকে।
তবে সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবার সুযোগও দেননি পরের ব্যাটসম্যনরা। উমেশ যাদবের ওই ওভারেই ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড সাব্বির। শুরু আসা-যাওয়ার মিছিল।
পুল করতে গিয়ে ফিরলেন এই ম্যাচের অধিনায়ক সাকিব। মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেক স্কোরারকে কষ্ট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। খানিকটা টিকে বিদায় মুশফিকও।
শেষদিকে মিরাজ ও সানজামুল একটু এগিয়ে নিলো দলকে। কিন্তু আসলে মুখ থুবড়েই পড়েছে দলের ব্যাটিং।
বল হাতে শুরুটা তবু ছিল ভালো। ইনিংসের দ্বিতীয় আর রুবেল হোসেনের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই ফিরে গেছেন রোহিত শর্মা। ছুটির কারণে আগের প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলা ওপেনার রুবেলের বাইরের বল টেনে এনেছেন স্টাম্পে।
অজিঙ্কা রাহানেও আউট একইভাবে। স্টাম্পে টেনেছেন মুস্তাফিজের বল। সপ্তম ওভারে ভারত ২ উইকেটে ২১।
তবে তাসকিন বোলিংয়ে আসতেই আলগা হয় ফাঁস। স্পিন আসার পর শিখর ধাওয়ান আর দিনেশ কার্তিক পা রাখেন রান প্যাডেলে। তৃতীয় উইকেটে ৯৯ বলে ১০০ রানের জুটি গড়েন দুজন।
সানজামুলের এক নির্বিষ বল বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ধাওয়ান। গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের শিরোপা জয়ের নায়ক এবারও শুরুর আগে ফিরলেন ছন্দে।
পরে ঝড় তুলেছেন হার্দিক পান্ডিয়া। অপরাজিত ছিলেন ৫৪ বলে ৮০ রানে। রান পেয়েছেন কেদার যাদব, রবিন্দ্র জাদেজারাও।
দল ম্যাচটিকে গুরুত্ব না দিলেও অবশ্য ব্যক্তিগত কিছু চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপার ছিল। এই ম্যাচে দারুণ কিছু করে নিজেদের দাবিটা জানিয়ে রাখতে পারতেন তাসকিন আহমেদ ও সানজামুল ইসলাম। তবে তারা উল্টো সহজ করে দিয়েছেন টিম ম্যনেজমেন্টের কাজ। দুজনই ছিলেন খরুচে।
৬ ওভারে ৪৫ দিয়েছেন তাসকিন। দুটি উইকেট উপহার পেলেও সানজামুল ৯ ওভারে রান দিয়েছেন ৭৪। মিরাজ অবশ্য ছিলেন বেশ নিয়ন্ত্রিত।
দারুণ শুরু করেও পরে ধরে রাখতে পারেননি মুস্তাফিজ। সেরা বোলার রুবেল। শেষ দিকে কিছু রান গুণেছেন। তবে পাকিস্তান ম্যাচে বিশ্রাম পাওয়া পেসার এদিনও ঝরিয়েছেন আগুন। ইনিংসের শেষ দিকেও স্পিন চালিয়েছে বাংলাদেশ।
কিন্তু ব্যাটিং ভুলিয়ে দিল আর সবকিছুই। ব্যাটিং নিয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিল দল। হয়ত মন্দের ভালো, এই ম্যাচ জানিয়ে দিল জেগে ওঠার বার্তা!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ৩২৪/৭ (রোহিত ১, ধাওয়ান ৬০, রাহানে ১১, কার্তিক ৯৪, কেদার ৩১, পান্ডিয়া ৮০*, জাদেজা ৩২, অশ্বিন ৫, ভুবনেশ্বর ১ ; মুস্তাফিজ ১/৫৩, রুবেল ৩/৫০, তাসকিন ০/৪৫, সৌম্য ১/১০, মিরাজ ০/৩৯, সানজামুল ২/৭৪, মোসাদ্দেক ০/২৯, সাকিব ০/২৩)।
বাংলাদেশ: ২৩.৫ ওভারে ৮৪ (ইমরুল ৭, সৌম্য ২, সাব্বির ০, মুশফিক ১৩, সাকিব ৭, মাহমুদউল্লাহ ০, মোসাদ্দেক ০, মিরাজ ২৪, সানজামুল ১৮, তাসকিন ১*, রুবেল ০ , ভুবম্বেল ৩/১৩, উমেশ ৩/১৬, শামি ১/১৭, বুমরাহ ১/৩২, পান্ডিয়া ১/২, অশ্বিন ১/২)।
ফল: ভারত ২৪০ রানে জয়ী