প্রাপ্তির আলোয় উদ্ভাসিত জয়

হারানোর ছিল কিছু। পাওয়ার ছিল অনেক কিছু। সেই আশায় বাংলাদেশ ছুটল। বাংলাদেশ জিতল।অসাধারণ এই জয়ের মালায় প্রাপ্তির দারুণ সব ফুলের মনমাতানো সুবাস!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2017, 01:49 PM
Updated : 24 May 2017, 06:44 PM

ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচে ডাবলিনে বুধবার নিউ জিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। 

প্রথম ওভারেই সহজ ক্যাচ হাতছাড়ায় শুরু ম্যাচের অনেকটা সময় জুড়ে বাংলাদেশ ছিল বিবর্ণ। কিন্তু বল হাতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে কিউইদের আটকে রাখে তারা ২৭০ রানে।

রান তাড়ায় ভিত গড়ে দেয় তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। মাঝপথে তবু হড়কেছে পা, ঘিরে ধরেছে শঙ্কা। কিন্তু কালো মেঘ সরিয়ে জয়ের আলো এনেছেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় এক ট্র্যাজেডিতে নাম লেখা আছে এই দুজনের। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৩ বলে ২ রান নিতে পারেননি তারা। এদিন সেই দুজনই দারুণ পেশাদারী ব্যাটিংয়ে দলকে পার করালেন শেষের বৈতরণী।

বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়া প্রথম ম্যাচটির জন্য এখন আফসোস করতেই বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচ জিতলে এখন হয়ত ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপাও থাকত মাশরাফির হাতে।

তবে প্রাপ্তির পাল্লা তার পরও কম নয়। দেশের মাটিতে দুবার হোয়াইটওয়াশ করা নিউ জিল্যান্ডকে প্রথমবার বিদেশের মাটিতে হারাল বাংলাদেশ। এই জয়ই নিশ্চিত করেছে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথমবারের মতো ছয়ে ওঠা।

এসবের বাইরে বড় প্রাপ্তি আত্মবিশ্বাস। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে এমন জয়ে দারুণ চাঙা হয় ইংল্যান্ডে যাবে দল।

বাংলাদেশের রান তাড়ার শুরুটা ছিল চোখধাঁধানো। ইনিংসের প্রথম বলেই বেরিয়ে এসে অফ স্পিনার জিতান প্যাটেলকে উড়য়ে মারেন তামিম ইকবাল। বল যায় হারিয়ে।

ওই ওভারেই জোর ধাক্কা। আগের দুই ম্যাচে দারুণ খেলা সৌম্য সরকার আউট প্রথম বলেই।

এরপরই দল পেয়েছে সেরা জুটি। তিন নম্বরে নিজেকে প্রমাণের শেষ সুযোগ ছিল হয়ত সাব্বিরের। সেটা তিনি কাজে লাগিয়েছেন ভালোই। তামিম ছিলেন বরাবরের মতোই নির্ভরতার প্রতীক। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনের জুটি ১৩৬ রানের।

কিন্তু হঠাৎই দুযোর্গ। মিচেল স্যান্টনারকে স্লগ সুইপ খেলে ফিরেন তামিম। খানিক পর রান নিতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে একই প্রান্তে সাব্বির ও মোসাদ্দেক! ফিরতে হলো সাব্বিরকে। দুজনই করেছেন ৬৫। ৮০ বলে তামিম, তিন বল বেশি খেলেছেন সাব্বির।

চারে প্রমোশনটা কাজে লাগাতে পারলেন না মোসাদ্দেক। ১ উইকেটে ১৪৩ থেকে বাংলাদেশ হয়ে গেল ৪ উইকেটে ১৬০।

মুশফিক ও সাকিবের জুটি যখন আশার আলো দেখতে শুরু করেছে, তখনই হতাশার ছায়া। হামিশ বেনেটের শরীর তাক করা বাউন্সারে আরও এক উইকেট উপহার দিয়ে ফিরলেন সাকিব।

হাত থেকে জয় ফেলে দেওয়ার আরও একটি আক্ষেপের গল্প যেমন তৈরি হচ্ছিলো। দারুণ ব্যাটিংয়ে গল্পের রঙ বদলে দিলেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ।

শুরুতে একটু সময় নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, রান বাড়ানোর কাজটি তখন করেছেন মুশফিক। তবে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটই ছিল বেশি ধারালো। দারুণ সব শটে ছাড়িয়ে গেছেন মুশফিককেও।

শেষ পর্যন্ত ৩৬ বলে ৪৬ রানে অপরাজিত মাহমুদউল্লাহ; ৪৫ বলে অপরাজিত ৪৫ মুশফিক। দুজনের ৭২ রানের জুটি এসেছে ১০ ওভারে। দল জিতেছে ১০ বল বাকি রেখে।

দিনের এমন পূর্বাভাস কিন্তু দিতে পারেনি প্রভাত। টস জিতে হাসলেও মাশরাফির সেই হাসি মিলিয়ে যায় শিগগিরই। প্রথম ওভারেই তার বলে টম ল্যাথামের সহজ ক্যাচ ছাড়েন দলে ফেরা নাসির হোসেন।

আরেক ওপেনার লুক রনকিকে দ্রুত তুলে নেন মুস্তাফিজ। কিন্তু জীবন পেয়ে কজে লাগান ল্যাথাম, সঙ্গী পান নিল ব্রুমকে।

মাঠে বাংলাদেশের শরীরী ভাষাও এই সময়টায় ছিল বাজে। আরও ক্যাচ মিস তো ছিলই। শূন্য রানের পর ৫০ রানে আবার জীবন পান ল্যাথাম, নিজের বলে ক্যাচ নিতে পারেননি মোসাদ্দেক।

৫৬ রানে নিল ব্রুমের ক্যাচ নিতে পারেননি সৌম্য, ৫৭ রানে সাব্বির।

শেষ পর্যন্ত কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত করেন নাসির। বল হাতে ফিরিয়ে দেন থিতু দুই ব্যাটসম্যানকেই। শুরু ব্রুমকে ফিরিয়ে। স্কয়ার লেগে দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন মাশরাফি। ৭ চারে ৬৩ করেছেন ব্রুম।

ল্যাথাম এগিয়ে যাচ্ছিলেন টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু ৮৪ রানে বোল্ড হলেন লাইন মিস করে। ৯২ বলের ইনিংসে চার ১১টি।

কোরি অ্যান্ডারসনকে নিয়ে এরপর জুটি গড়ার চেষ্টা করেছেন রস টেইলর। ৩৮ ওভারে দুশ ছাড়িয়ে যায় নিউ জিল্যান্ড, লক্ষ্য তিনশর দিকে। কিন্তু দুপাশ থেকে দারুণ বোলিংয়ে খেলার মোড় পাল্টে দেন সাকিব ও মাশরাফি।

অ্যান্ডারসনকে ফেরানোর পর অসাধারণ এক ডেলিভারিতে স্যান্টনারকে বোল্ড করেন সাকিব। শেষ দিকে ঝড় তুলতে পারেন যে দুজন, সেই জিমি নিশাম ও কলিন মানরোকে ফিরিয়েছেন মাশরাফি। স্লগ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন রুবেল হোসেনও।

১৮ রানের মধ্যে বাংলাদেশ তুলে নেয় ৪ উইকেট। সামনে বাধা তখন কেবল টেইলর। শেষ পর্যন্ত তিনিই টেনেছেন নিউ জিল্যান্ডকে। অপরাজিত ছিলেন ৫৬ বলে ৬০ রানে।

তবে শেষ ভাগে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ তখন টগবগ করে ফুটছে জয়ের নেশায়। সেটির প্রতিফলন রান তাড়ায়। ধরা দিল অনেক পাওয়ার এক জয়!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
 
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৭০/৮ (ল্যাথাম ৮৪, রনকি ২, ব্রুম ৬৩, টেইলর ৬০*, অ্যান্ডারসন ২৪, নিশাম ৬, স্যান্টনার ০, মানরো ১, হেনরি ৫, প্যাটেল ৭*; মাশরাফি ২/৫২, মুস্তাফিজ ১/৪৬, রুবেল ১/৫৬, নাসির ২/৪৭, সাকিব ২/৪১, মোসাদ্দেক ০/১৪)

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭১/৫ (তামিম ৬৫, সৌম্য ০, সাব্বির ৬৫, মোসাদ্দেক ১০, মুশফিক ৪৫*, সাকিব ১৯, মাহমুদউল্লাহ ৪৬*; প্যাটেল ২/৫৫, হেনরি ০/৪৯, বেনেট ১/৪৭, অ্যান্ডারসন ০/৩৭, স্যান্টনার ১/৫৩, নিশাম ০/২৮)।

ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম

ম্যান অব দা সিরিজ: টম ল্যাথাম