সবুজ গালিচায় দ্যুতিময় বাংলাদেশ

মাঠ যেন সবুজ মখমল। উইকেটও সবুজের গালিচা। আয়ারল্যান্ডের জার্সিও সবুজ। এই সবুজের সমারোহেও উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠল বাংলাদেশের সবুজ জার্সি। মাশরাফিদের সেই দ্যুতিতে ঝলসে গেল আইরিশরা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2017, 01:45 PM
Updated : 19 May 2017, 04:12 PM

আগের ম্যাচের হতাশা সরিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। ডাবলিনে উইকেট-কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ তুড়ি মেরে উড়িয়ে বাংলাদেশ জিতেছে ৮ উইকেটে।

বল হাতে দুর্দান্ত মুস্তাফিজুর রহমান। ৪ উইকেট নিয়ে খাবি খাওয়ালেন আইরিশদের। সঙ্গত ধরলেন অন্য বোলাররাও। আয়ারল্যান্ড শেষ ১৮১ রানেই।

বোলারদের গড়ে দেওয়া মঞ্চে এরপর টপ অর্ডারের আনন্দ নৃত্য। দুর্দান্ত উদ্বোধনী জুটির পর পঞ্চাশের কাছে গিয়ে ফিরেছেন তামিম। কিন্তু স্টাইলিশ সৌম্য স্ট্রোকের ফুলঝুরি সাজিয়েছেন, মাতিয়েছেন। আগের ম্যাচে ৬১ রানে ফেরা হতাশা ভুলে এদিন দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফিরছেন ৬৮ বলে ৮৭ রানে। বাংলাদেশ ম্যাচ শেষ করেছে ১৩৭ বল বাকি রেখেই!

আগের ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার জয়টি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হলেও তৃপ্তি দেবে জয়ের ধরন। ব্যাটি-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে প্রায় পরিপূর্ণ পারফরম্যান্স হয়ে থকবে আত্মবিশ্বাসের টনিক।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচটির মতোই ম্যালাহাইডের ২২ গজকে মাঠ থেকে আলাদা করা কঠিন। টস রিপোর্টে সাবেক আইরিশ স্পিনার কাইল ম্যাককালান বললেন, আগের দিনের চেয়ে এদিন বরং ঘাস আরেকটু বেশি তরতাজা, আরেকটু লম্বা।

বাংলাদেশের প্রাপ্তির শুরু টস দিয়ে। মুস্তাফিজের সৌজন্যে দাপটের শুরুও প্রথম ওভার থেকেই। বাঁহাতি পেসারের ছোবলে শেষ বিপজ্জনক পল স্টার্লিং। লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বলে শূন্য রানেই ক্যাচ দিলেন ওয়াইড স্লিপে।

আরেক পাশে রুবেলের শুরুটাও ছিল ভালো। প্রথম রানের দেখা পেতে আইরিশদের অপেক্ষা করতে হয় ১৫ বল।

সবুজ আর শুরুর সাফল্যে অতি উত্তেজনায়ই কিনা, এরপর একটু এলোমেলো ছিল লাইনলেংথ। বিশেষ করে রুবেল ফুল লেংথের বদলে লেংথ বলই করছিলেন বেশি।

এই সুযোগে জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড ও এড জয়েস। সেই জুটি ভেঙেছে স্পিনে। যদিও উইকেট নিতে পারতেন মাশরাফি। অধিনায়কের বলে পোর্টারফিল্ডের যে ক্যাচ হাতে জমাতে পারলেন না মোসাদ্দেক, সেটি ইচ্ছে করেও মিস করা কঠিন!

তবে প্রায়শ্চিত্ত করেছেন দ্রুতই। পরের ওভারেই মোসাদ্দেকের হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি। ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ফেরান পোর্টারফিল্ডকেই।

অ্যান্ডি বালবার্নি উইকেটে গিয়েই ছক্কা মেরেছিলেন সাকিবকে। এই অলরাউন্ডার জবাব দিয়েছেন দারুণ এক আর্ম ডেলিভারিতে তাকে বোল্ড করে।

আয়ারল্যান্ড একটু গুছিয়ে ওঠে এরপরই। চোট কাটিয়ে ফেরা জয়েস ও আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান নায়াল ও’ব্রায়েন গড়ে তোলেন জুটি। উইকেটও ততক্ষণে অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে। সবুজ ঘাসের উইকেটও মনে হচ্ছিলো খানিকটা মন্থর।

ত্রাতা আবারও মুস্তাফিজ। নায়াল ও’ব্রায়েনকে (৩০) ফিরিয়ে ভাঙলেন ৫৫ রানের জুটি। সেটির হাত ধরে টপাটপ আরও কিছু উইকেট। দুর্দান্ত স্পেলে আরও দুটি উইকেট নিলেন মুস্তাফিজ। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম ওভারেই সানজামুল ফেরালেন জয়েসকে। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান করেছেন ৭৪ বলে ৪৬।

১৩৪ রানে আয়ারল্যান্ড হারায় ৭ উইকেট। স্বীকৃত কোনো ব্যাটসম্যান নেই। দুই বোলার ব্যারি ম্যাককার্থি ও জর্জ ডকরেল তবু চেষ্টা করেছেন লড়াইয়ের। গড়েছেন গুরুত্বপূর্ণ একটি জুটি।

লেজের ব্যাটিং আবারও যখন মাথব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, উইকেট ধরা দেয় তখনই। নিজে বল হাতে নিয়েও কী মনে করে আবার সানজামুলকে আনেন মাশরাফি। বাঁহাতি স্পিনার আস্থার প্রতিদান দেন ৩৫ রানের জুটি ভেঙে।

শেষটা করেছেন মাশরাফি। ম্যাচ জুড়ে দারুণ সব অফ কাটার করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এক ওভারে তুলে নিয়েছেন শেষ দুই উইকেট। শেষটিতে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন মুশফিক।

আগের ম্যাচে বিবর্ণ মাশরাফি কিপটে বোলিংয়ে নিয়েছেন দুই উইকেট। সানজামুল ইসলামের অভিষেকটাও স্বস্তির হয়েছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেটে।

রান তাড়া জয়-পরাজয়ের ফয়সালা উদ্বোধনী জুটিতেই এরকম সেরে ফেলেছে বাংলাদেশ। শুরুটা ছিল তামিমের ব্যাটে। প্রথম ওভার থেকেই খেলেছেন শট।

সৌম্য তখনও দর্শক। প্রথম ৭ ওভারে স্ট্রাইক পেয়েছিলেন মাত্র ৮ বল। অষ্টম ওভারে টিম মারটাগকে আছড়ে ফেললেন মাঠের বাইরে। সেই যে ডানা মেললেন, উড়তেই থাকলেন সৌম্য। তার ডানার ঝাপটায় এলোমেলো আইরিশ বোলিং।

পাল্লা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন সব শট খেলেছেন দুই ওপেনার। দল যখন সেঞ্চুরির কছে, পঞ্চাশের কাছে তামিম, তখনই একটু ছন্দপতন। ৫৪ বলে ৪৭ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন বাঁহাতি ওপেনার।

তাতে রানের স্রোত থামেনি। বরং শুরুতে একটু সময় নিয়ে নতুন জোয়ার তুলেছেন সাব্বির।

সৌম্য ছিলেন তার সেরা চেহারায়। সেই ট্রেডমার্ক ‘পিক আপ’ শট খেলেছন অনায়াসে, ড্রাইভগুলো ছিল চোখধাঁধানো। ৪০ বলে স্পর্শ করেন অর্ধশতক।

একমাত্র খানিকটা অপ্রাপ্তি বলতে সাব্বির রহমান। তিনে জায়গা নিয়ে প্রশ্নের মধ্যেই খেলছিলেন দারুণ। কিন্তু আবারও পারলেন না শেষ করে আসতে। ৩৪ বলে ৩৫ করে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফিরলেন জয়ের কাছে গিয়ে।

সৌম্য সে পথে হাঁটেননি। শেষ করে এসেছেন ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত ১১ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৬৮ বলে ৮৭।

আত্মবিশ্বাসের এই ঝলকানি এবার পরের ম্যাচে বয়ে নেওয়ার পালা। শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড। কে না জানে, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
 
আয়ারল্যান্ড: ৪৬.৩ ওভারে ১৮১ (জয়েস ৪৬, স্টার্লিং ০, পোর্টারফিল্ড ২২, বালবার্নি ১২, নায়াল ও’ব্রায়েন ৩০, কেভিন ও’ব্রায়েন ১০, উইলসন ৬, ডকরেল ২৫, ম্যাককার্থি ১২, মারটাঘ ৫*, চেইস ০; রুবেল ০/৪১, মুস্তাফিজ ৪/২৩, মাশরাফি ২/১৮, মোসাদ্দেক ১/২১, সাকিব ১/৩৮, মাহমুদউল্লাহ ০/১৩, সানজামুল ২/২২)।

বাংলাদেশ: ২৭.১ ওভারে ১৮২/২ (তামিম ৪৭, সৌম্য ৮৭*, সাব্বির ৩৫, মুশফিক ৩*; চেইস ০/৫৫, মারটাগ ০/২৬, ম্যাককার্থি ১/৪২, স্টার্লিং ০/১৪, কেভিন ১/২২, ডকরেল ০/২০)।

ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মুস্তাফিজুর রহমান