কুসল ঝড়ে এলোমেলো বাংলাদেশ

এলোমেলো দিনে হারলো বাংলাদেশ। টসের সময় আচমকা অবসরের ঘোষণা দিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বড় সংগ্রহের আশা জাগিয়ে মাঝপথে খেই হারাল দল। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন অধিনায়ক, কিন্তু সঙ্গী পেলেন না কোনো। অতিথিদের ভুল লাইন-লেংথে বোলিংয়ের ফায়দা তুলে শ্রীলঙ্কা জিতেছে সহজেই।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতকলম্বো থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2017, 06:15 PM
Updated : 4 April 2017, 07:47 PM

আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৬ উইকেটে জিতে দুই ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। চোট কাটিয়ে ফেরা কুসল পেরেরার সঙ্গেই পেরে উঠেনি অতিথিরা। বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কা জিতেছে ৭ বল বাকি থাকতে।

দুটি ৫৭ রানের জুটি, একটি ৪.৫ ওভারে, অন্যটি ৭ ওভারে। এই দুই জুটির বাইরে আর তেমন কোনো গল্প নেই বাংলাদেশের ইনিংসে। তাই লক্ষ্যটাও বড় হয়নি। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৫৫ রান। মেন্ডিস ঝড়ে শ্রীলঙ্কা ১৮ ওভার ৫ বলে ছাড়িয়ে যায় ৪ উইকেটে।   

আগের দিন তামিম ইকবালের ওপর অগাধ আস্থা থাকার কথা জানিয়েছিলেন মাশরাফি। বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি এদিন। আউট হয়েছেন শূন্য রানে। লাসিথ মালিঙ্গার ফুল লেংথে বলে উপড়ে গেছে তার স্টাম্প।

সাব্বির রহমানের সঙ্গে শুরুর সেই ধাক্কা সামাল দেন তরুণ সৌম্য। দুই সহজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানের দৃঢ়তায় তরতর করে এগিয়ে চলে বাংলাদেশ।

মালিঙ্গাকে সহজেই সামলালেন, পাত্তাই পেলেন না নুয়ান কুলাসেকারা। ৫ ওভারে স্কোর বোর্ডে জমা হল ৫৭ রান। এরপরই ছন্দপতন, ৭ ওভারে ২৮ রান যোগ করতে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।

ছোটোখাটো ধসের শুরুটা সাব্বিরের রান আউট দিয়ে। ডাইভ দিলে হয়তো বেঁচে যেতেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। সেই ওভারেই ভিকুম সঞ্জয়াকে উইকেট উপহার দিয়ে আসেন সৌম্য। ২০ বলে তিনটি চার আর বাংলাদেশ ইনিংসের একমাত্র ছক্কা হাঁকানো বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান সহজ ক্যাচ দেন মিডঅনে।

জোড়া উইকেট হারানোর ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই বিদায় মুশফিকুর রহিমের। আসেলা গুনারত্নেকে স্কুপ করতে গিয়ে দৃষ্টিকটুভাবে বোল্ড চার নম্বরে নামা এই উইকেটক্ষক-ব্যাটসম্যান।

বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব ফিরেন সিকুগে প্রসন্নকে কাভার দিয়ে খেলতে গিয়ে। টাইমিং হয়নি, উঠে যায় সহজ ক্যাচ। বাংলাদেশ ১ উইকেটে ৫৭ থেকে ৫ উইকেটে ৮২।

সে সময়ে দেড়শ রানকে মনে হচ্ছিল অনেক দূরের পথ। তবে মোসাদ্দেক হোসেন ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে শেষ পর্যন্ত দেড়শ ছাড়ায় বাংলাদেশের সংগ্রহ।

মালিঙ্গার লেগ স্টাম্পের বাইরের বল সরে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ। ভাঙে ৭ ওভার স্থায়ী ৫৭ রানের জুটি। ৩০ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক, অধিনায়ক মাশরাফি ৫ বলে ৯ রানে।

মাঝের ওভারগুলোতে প্রসন্ন, গুনারত্নে ও সঞ্জয়ার বলে খুব একটা রান নিতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। লেগ স্পিনার প্রসন্নর চার ওভার থেকে আসে মাত্র একটি চার।

লক্ষ্য তাড়ায় অধিনায়ক থারাঙ্গার সঙ্গে ৬৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন কুসল। ৬.৫ ওভার স্থায়ী বিপজ্জনক হয়ে উঠা এই জুটি ভাঙেন মাশরাফি। তার বলে শর্ট থার্ড ম্যানে মুস্তাফিজুর রহমানের তালুবন্দি হন লঙ্কান অধিনায়ক।

পরের ওভারে ফিরে বাংলাদেশের অধিনায়ক ফিরতি ক্যাচে বিদায় করেন দিলশান মুনাবিরাকে। দ্রুত দুই উইকেট হারানোর ধাক্কা দলের ওপর পড়তে দেননি পেরেরা। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে সবসময়ই এগিয়ে ছিল শ্রীলঙ্কা।

অভিষিক্ত মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের বলে আসে সুযোগ। শর্ট থার্ড ম্যানে কুসল পেরেরার ক্যাচ জমাতে পারেননি তাসকিন আহমেদ। পরের বলে সাব্বিরের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ফিরেন গুনারত্নে।

তাসকিন ফিরে বিদায় করেন কুসল পেরেরাকে। ততক্ষণে ৫৩ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কায় ৭৭ রান করে ফেলেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। জয়ও তখন শ্রীলঙ্কার নাগালে।

বাকিটুকু থিসারা পেরেরাকে নিয়ে সহজেই সেরেছেন প্রসন্ন। ১২ বলে দুটি ছক্কা ও একটি চারে অপরাজিত ছিলেন ২২ রানে। 

৩২ রানে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মাশরাফি। তাসকিন ৩৩ রানে পেয়েছেন এক উইকেট। মুস্তাফিজ, সাকিব, সাইফ উইকেটশূন্য।

আগামী বৃহস্পতিবার একই মাঠে হবে দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি। দেশের হয়ে বাংলাদেশের অধিনায়কের সেটাই হবে এই সংস্করণে শেষ ম্যাচ।   

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৫/৬ (তামিম ০, সৌম্য ২৯, সাব্বির ১৬, মুশফিক ৮, সাকিব ১১, মোসাদ্দেক ৩৪*, মাহমুদউল্লাহ ৩১, মাশরাফি ৯*; মালিঙ্গা ২/৩৮, কুলাসেকারা ০/৪৪, সঞ্জয়া ১/২৪, গুনারত্নে ১/২৪, প্রসন্ন ১/১৯)

শ্রীলঙ্কা: ১৮.৫ ওভারে ১‌৫৮/৪ (কুসল ৭৭, থারাঙ্গা ২৪, মুনাবিরা ৮, গুনারত্নে ১৭, প্রসন্ন  ২২*, থিসারা ৪*; মাহমুদউল্লাহ ০/৬, তাসকিন ১/৩৩, মাশরাফি ২/৩২, মুস্তাফিজ ০/২৪, সাকিব ০/২৯, সাইফ ০/২৩, মোসাদ্দেক ০/৭)

ফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী