ডাম্বুলায় শেষ হাসি বৃষ্টির

স্থানীয় সময় রাত সাড়ে আটটার দিকে থেমেছিল বৃষ্টি। দর্শকদের তুমুল করতালির মধ্যে মাঠে এসেছিলেন আম্পায়াররা। মাঠকর্মীরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কাভার সরানোর। পাঁচ মিনিট পর আবার শুরু হল বৃষ্টি, এবার হাল ছেড়ে দিতে হল।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতডাম্বুলা থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2017, 02:17 PM
Updated : 28 March 2017, 03:41 PM

রাত পৌনে নয়টার সময় এল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, পরিত্যক্ত শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের দ্বিতীয় ওয়ানডে। প্রথম ম্যাচ ৯০ রানে জিতে সিরিজে এগিয়ে বাংলাদেশ। সমতায় শেষ করতে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে জিততেই হবে শ্রীলঙ্কার।

২০১৩ সালেও শ্রীলঙ্কা সফরে বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল দ্বিতীয় ওয়ানডে। সেবার শেষ ম্যাচ জিতে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজ ড্র করেছিল বাংলাদেশ। এবার উল্টো পরিস্থিতিতে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।   

জয়ের জন্য কুসল মেন্ডিসের প্রথম শতকে তিনশ ছাড়ানো লক্ষ্য দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ইনিংস বিরতিতে যে বৃষ্টি নামলো তার জন্য আর তাড়ায় মাঠে নামার সুযোগই মেলেনি মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের।

ইনিংসের শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক করেছেন তাসকিন আহমেদ। তার দারুণ বোলিংয়ে এক বল আগেই ৩১১ রানে অলআউট হয়েছে শ্রীলঙ্কা। ডাম্বুলাতে স্বাগতিকদের এটি দ্বিতীয় তিনশ ছাড়ানো স্কোর। প্রথমটিও ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেই।

রনগিরি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার টস জিতে ব্যাটিং নেন স্বাগতিক অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গা। প্রথম ম্যাচে তিনি ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন অতিথিদের।

ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে শুরুতে লঙ্কানদের বেধে রাখেন মাশরাফি ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তৃতীয় ওভারেই আঘাত হানেন অধিনায়ক। তার কাটার বুঝতে পারেননি দানুশকা গুনাথিলাকা। পুল করতে গিয়ে ঠিক মতো পারেননি, ছুটে গিয়ে স্কয়ার লেগে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ গ্লাভসে জমান মুশফিকুর রহিম।

থারাঙ্গা ছিলেন শুরুতে সতর্ক, মেন্ডিস নড়বড়ে। দুই জনকে দ্রুত ফেরাতে পারেনি বাংলাদেশ। পরে দিতে হয় তার মাশুল। ৬১ বলে আসে দুই জনের দ্বিতীয় উইকেটে অর্ধশতক, ১২৭ বলে শতক। শ্রীলঙ্কা পায় বড় সংগ্রহের ভিত।

নিজের দুইশতম ম্যাচে ৬৮ বলে অর্ধশতকে পৌঁছান থারাঙ্গা। তার ব্যাটে ছিল আরও বড় ইনিংসের আভাস। মুস্তাফিজুর রহমানের বিমারে রান নিতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহর সরাসরি থ্রোয়ে রান আউটে থামতে হয় অনেক আগেই।

৭৬ বলে ৯টি চারে থারাঙ্গা ফিরেন ৬৫ রানে, ভাঙে ২২ ওভার স্থায়ী ১১১ রানের জুটি।

অধিনায়কের বিদায়ের পরই অন্য চেহারায় দেখা যায় মেন্ডিসকে। সে সময় ৬১ বলে ৪২ রানে ছিলেন তিনি। পরের ৪৬ বলে আসে ৬০ রান। মুস্তাফিজের ফ্রি হিটে ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু পাল্টা আক্রমণের। তাতে বাধ দিতে পারেননি অতিথিদের কোনো বোলার।

সে সময় খুনে মেজাজে ব্যাট করা মেন্ডিসকে স্ট্রাইক দেওয়ার দিকেই ছিল নতুন ব্যাটসম্যান দিনেশ চান্দিমালের নজর। দুই জনের জুটির অর্ধশতক আসে ৩৪ বলে। তাতে মেন্ডিসের অবদান ২৪ বলে ৪২ রান!

২ ওভারের প্রথম স্পেলে ১৭ রান দেওয়া মুস্তাফিজ ৩ ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে দেন ২৬ রান। তৃতীয় স্পেলে মিলে সাফল্য। ২ ওভারের স্পেলে ১১ রান দিয়ে ফিরিয়ে দেন চান্দিমালকে। ভাঙেন ১২.১ ওভার স্থায়ী ৮৩ রানের জুটি।

পরের ওভারে মেন্ডিসকে বিদায় করেন তাসকিন। জোরালো শট তরুণ এই পেসারের বাঁ হাতের ওপরের দিকে লেগে আরও ওপরে উঠে যায়। প্রথমে বুঝতে পারেননি বল কোথায় যাচ্ছে, পরে দিশা পেলেন, নিজেই হাতে জমালেন।

১০৭ বলে খেলা মেন্ডিসের ১০২ রানের ইনিংসটি গড়া ৯টি চার ও একটি ছক্কায়।   

দ্রুত চান্দিমাল-মেন্ডিসকে ফেরানো বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল স্বাগতিকদের চেপে ধরার। ফিল্ডিং ব্যর্থতায় হয়নি। ১৩ রানে আসেলা গুনারত্নের স্টাম্পিং মিস করেন মুশফিক। ২৪ রানে মিলিন্দা সিরিবর্দনেকে জীবন দেন মিরাজ।

গুনারত্নে-সিরিবর্দনের ৮ ওভারের জুটিতে উঠে ৫৫ রান। তাতে তিনশ রানের পথে এগিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। বোলিংয়ে ফিরে সিরিবর্দনেকে ফিরিয়ে নিজের ভুল সংশোধন করেন মিরাজ। দুই পেরেরা, থিসারা ও নুয়ান ফিরেন ঝড় তোলার আগেই। দুই জনই রান আউট হন উইকেটের পেছন থেকে মুশফিকের দুর্দান্ত থ্রোয়ে।

৫০তম ওভারে পরপর তিন বলে গুনারত্নে, সুরঙ্গা লাকমল ও নুয়ান প্রদিপকে ফিরিয়ে দিয়ে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণের সঙ্গে শ্রীলঙ্কাকে গুটিয়ে দেন তাসকিন। শাহাদাত হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, রুবেল হোসেন ও তাইজুল ইসলামের পর বাংলাদেশের পঞ্চম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেলেন তিনি।

৪৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তাসকিনই বাংলাদেশের সেরা বোলার। মিরাজ, মাশরাফি ও মুস্তাফিজ নেন একটি করে উইকেট। বল হাতে বাজে দিন কাটানো বাঁহাতি পেসার ৮ ওভারে খরচ করেন ৬০ রান। এর মধ্যে এক ওভারে তার এক ওভার থেকে আসে ২০ রান। সাকিব আল হাসান ৫৯ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৪৯.৫ ওভারে ৩১১ (গুনাতিলাকা ৯, থারাঙ্গা ৬৫, মেন্ডিস ১০২, চান্দিমাল ২৪, গুনারত্নে ৩৯, সিরিবর্ধনে ৩০, থিসারা ৯, দিলরুয়ান ৯, কুলাসেকারা ২*, লাকমল ০, প্রদিপ ০; মাশরাফি ১/৫৫, মিরাজ ১/৫০, মুস্তাফিজ ১/৬০, তাসকিন ৪/৪৭, সাকিব ০/৫৯, মোসাদ্দেক ০/২৬)

ফল: ম্যাচ পরিত্যক্ত।