শততম টেস্ট স্মরণীয় করার স্বপ্ন

নিজের চার ওভারের মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমান নিলেন ৩ উইকেট, সাকিব আল হাসান ২ উইকেট। ঘুরে গেল ম্যাচের মোড়। কলম্বো টেস্টের চালকের আসনে বসলো বাংলাদেশ। দুই বাঁহাতির দারুণ বোলিংয়ে নিজেদের শততম টেস্টে জয়ের আশায় বাংলাদেশ।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতকলম্বো থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2017, 12:54 PM
Updated : 18 March 2017, 03:31 PM

চতুর্থ দিনের খেলা শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৮ উইকেটে ২৬৮ রান। দলটি এগিয়ে ১৩৯ রানে। দিলরুয়ান পেরেরা ২৬ ও সুরঙ্গা লাকমল ১৬ রানে অপরাজিত। অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেটে দুই জনে গড়েছেন ৩০ রানের জুটি।

মাটি কামড়ে পড়ে থাকা অলরাউন্ডার পেরেরা ২৬ রান করতে খেলেছেন ১২৬ বল। লাকমল অবশ্য এসেই চড়াও হয়েছেন বোলারদের ওপরে।

পি সারা ওভালে এদিন স্বাগতিকদের অলআউট করতে না পারলেও আঁটসাঁট বোলিংয়ে বেশি রানও করতে দেয়নি মুশফিকুর রহিমের দল। সারা দিনে শ্রীলঙ্কা ৮৭ ওভারে তুলে ২১৪ রান। তাই লিডটাও বড় হয়নি।

বিনা উইকেটে ৫৪ রান নিয়ে শনিবার খেলা শুরু করা শ্রীলঙ্কা শুরুতেই হারায় উপুল থারাঙ্গাকে। দিনের দ্বিতীয় ওভারে নিজের প্রথম বলে আঘাত হানেন মেহেদী হাসান মিরাজ। স্বপ্নের এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন গল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে শতক করা বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে।

শুরুর এই সুবিধা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। অতিথিদের ভাগ্যটাও সঙ্গে ছিল না। ব্যাটের কানা নেওয়া বল কয়েকবার একটুর জন্য হাতে যায়নি। এর মাঝে ব্যক্তিগত ১২ রানে একবার জীবন পান কুসল মেন্ডিস। মিরাজের বলে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ফিল্ডার ধরতে পারেননি ক্যাচ। ১ উইকেটে ১৩৭ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় শ্রীলঙ্কা।

খেলার চিত্রটা পাল্টায় দ্বিতীয় সেশনে। লাঞ্চের আগে ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া স্বাগতিকরা এলোমেলো হয়ে যায় এক সেশনে। মুস্তাফিজ ও সাকিবের দারুণ বোলিংয়ে ৪৭ রানের মধ্যে ৫ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ।

শ্রীলঙ্কার প্রতিরোধ গড়া ৮৬ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটির বিদায় অবাক করা এক রিভিউয়ে। মুস্তাফিজের চমৎকার বলে মেন্ডিসের ব্যাট ছুঁয়ে আসা ক্যাচ গ্লাভসে জমিয়ে শুরুতে আবেদন করেননি মুশফিক। বোলার নিজেও বোঝেন দেরিতে। আম্পায়ার আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেন অধিনায়ক। পাল্টায় সিদ্ধান্ত, ফিরে যান মেন্ডিস। বাংলাদেশ পেয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত ‘ব্রেক থ্রু’।    

পরের তিন ওভারে আরও দুই উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ। দিনেশ চান্দিমাল ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ফিরেন অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে। দুই জনই ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক মুশফিককে। 

মাঝে সাকিবের শিকার আসেলা গুনারত্নে। অতটা টার্ন হবে বুঝতে পারেননি ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। শট না খেলে পা দিয়ে ঠেকিয়ে ফিরেন এলবিডব্লিউ হয়ে। সাকিবের বলেই নিরোশান ডিকভেলার দারুণ এক ক্যাচ গ্লাভসবন্দি করে ডিসমিসালের শতকে পৌঁছান মুশফিক। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম।

ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মধ্যে প্রায় একাই লড়াই করেন দিমুথ করুনারত্মে। আগের দিন ১১ রানে জীবন পাওয়া বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের প্রতিরোধ ভাঙেন সাকিব। দ্বিতীয় নতুন বলে স্লিপে সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত করেন। ২৪৪ বলে খেলা করুনারত্নের দারুণ ইনিংসটি গড়া ১০টি চার ও একটি ছক্কায়।

করুনারত্নে কত বড় কাঁটা হয়ে ছিলেন সেটা বোঝা গেল সাকিবের প্রতিক্রিয়া থেকেই। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের উইকেট নিয়ে তিনি যে চিৎকার দিলেন সেটা শোনা গেল গ্যালারি থেকে।

২৭ রানের জুটি গড়তে ২২.২ ওভার খেলেছিলেন করুনারত্নে-পেরেরা। সেঞ্চুরিয়ানকে ফিরিয়ে স্বস্তি আনেন সাকিব। তার জায়গাতেই বোলিংয়ে এসে অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথকে এলবিডব্লিউ করেন তাইজুল ইসলাম।

দিনের শেষ সময়টা লাকমলকে নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন পেরেরা।

তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ ও সাকিব। তাইজুল ও মিরাজের শিকার একটি করে। ভালো বল করলেও উইকেট মেলেনি শুভাশীষ রায় চৌধুরীর। 

লঙ্কানদের লেজ শেষ বেলায় গুটিয়ে দিতে চেষ্টার কমতি ছিল না বাংলাদেশের। কিন্তু শেষ দুটি উইকেট আর পাওয়া হয়নি। কিন্তু জয়ের সুবাস ঠিকই পাচ্ছেন তারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩৩৮

বাংলাদেশ: ১ম ইনিংস: ৪৬৭

শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ১০০ ওভারে ২৬৮/৮ (করুনারত্নে ১২৬, থারাঙ্গা ২৬, মেন্ডিস ৩৬, চান্দিমাল ৫, গুনারত্নে ৭, ডি সিলভা ০, ডিকভেলা ৫, পেরেরা ২৬*, হেরাথ ৯, লাকমল ১৬*; শুভাশীষ ০/৩৬, মিরাজ ১/৬৭, মুস্তাফিজ ৩/৫২, সাকিব ৩/৬১, মোসাদ্দেক ০/১০, তাইজুল ১/৩১)