‘অবসরের কথা কখনোই কাউকে বলিনি’

গত এক বছরে বেশ কবারই তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের এপিটাফ লিখে ফেলেছেন অনেকে। অথচ মাশরাফি বিন মুর্তজার দাবি, কখনোই কাউকে অবসর নেবেন বলে কিছু জানাননি। বরং এখনও স্বপ্ন আছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে শনিবারই উড়াল দেবেন শ্রীলঙ্কায়। তার আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শোনালেন টি-টোয়েন্টি নিয়ে স্বপ্ন আর ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে আশার কথা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2017, 10:22 AM
Updated : 18 March 2017, 03:33 PM

প্র্যাকটিস ম্যাচ তো খেললেন, কেমন মনে হলো?

মাশরাফি বিন মুর্তজা: ইনজুরি কাটিয়ে ফিরলে কিছু জড়তা থাকেই। বোলিংয়ের শুরুটায় কিছু ওয়াইড-নো হয়েছে, পরে ঠিক হয়ে গেছে। ব্যাটিংয়ে কিছু সময় উইকেটে কাটাতে পারায় দারুণ হয়েছে। আঙুলের ব্যাপার তো, ব্যাট ধরায় অস্বস্তি ছিল। সব মিলিয়ে ভালোই হয়েছে প্রস্তুতি।

র‌্যাঙ্কিংয়ে জায়গা ধরে রাখতে তো শ্রীলঙ্কায় ওয়ানডে সিরিজে একটি ম্যাচ জিততেই হবে। ২০১৯ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার শেষ সময়টাও এগিয়ে আসছে…

মাশরাফি:
হ্যাঁ, প্রতিটি ম্যাচই এখন ‍গুরুত্বপূর্ণ। জায়গা ধরে রাখতে একটি ম্যাচ যে জিততে হবে, জানি। তবে জিততেই হবে ভাবলে কাজটা কঠিন হয়ে যাবে। অস্থিরতা কাজ করবে। তার চেয়ে যাই, গিয়ে নির্ভার হয়ে খেলার চেষ্টা করি।

আগে চাইব জয়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে। এরপর সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে সেটা কাজে লাগাতে। গত কিছুদিনে বেশ কিছু ম্যাচে সুযোগ পেয়েও জিততে পারিনি। কয়েকটি জেতা ম্যাচ হেরে বসেছি। ব্যাপারটা থামাতে হবে আমাদের। বারবার সুযোগ পেয়েও হারলে দলের মোরাল ডাউন হয়ে যায়। বিশেষ করে কোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টের শুরুতে সুযোগ সৃষ্টি করেও জিততে না পারলে তার পর কাজটা কঠিন হয়ে যায়। ব্যাপারটা মানসিক।

র‌্যাঙ্কিং ভাবলে দল অস্থির হবে বলছেন, গত কিছুদিনের ঘটনাপ্রবাহে মনে হচ্ছে ড্রেসিং রুম অস্থির হয়েই আছে!

মাশরাফি: ঘটনা-টটনা জানি না। তবে নিউ জিল্যান্ড সিরিজ থেকে একটি ম্যাচও জিততে পারিনি। ওসব ঘটনার চেয়ে ম্যাচ না জেতাটাই ক্রিকেটারদের বেশি অস্থির করে তোলে। এই টেস্ট ভালো খেললে, একটি ম্যাচ জিতলে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করবে।

অধিনায়ক হিসেবে আপনার নিজেরও হয়ত কিছু কাজ করার থাকবে!

মাশরাফি: আমার কাজ কি, এতটা ভেবে কাজ করি না। পরিস্থিতি যেটা দাবি করে, সেভাবেই করার চেষ্টা করি। ওখানে যাওয়ার পর পরিস্থিতি যেমন থাকবে, যদি সামলানোর প্রয়োজন হয়, অবস্থা বুঝে চেষ্টা করব।

তবে কিছু হয়নি। হলেও সব ঠিক হযে যাবে। বললাম না, একটা ম্যাচ জিতলেই সব ঠিক হবে।

বছরটি চ্যালেঞ্জিং হবে, জানাই ছিল। দেশের বাইরে অনেক খেলা। সেই চ্যালেঞ্জ দল কতটা নিতে পারছে? কতটা পারবে সামনে?

মাশরাফি:
বাইরে খেলা আমাদের জন্য কঠিন শুধু কন্ডিশনের কারণে নয়। আরও বাস্তবতা আছে। টানা বাইরে থাকলে বা একের পর এক সফর থাকলেও কঠিন হয়ে পড়ে। অজুহাতের মতো শোনাতে পারে। কারণ আমরা খেলা বেশি পাই না। তার পরও কিন্তু এটাই সত্যি!

এটা আমাদের ধরণ। পরিবার ছেড়ে দিনের পর দিন বাইরে থাকার অভ্যাস আমাদের কখনোই ছিল না। আমরা বলতে শুধু ক্রিকেটার নয়, সবার কথা বলছি। আমাদের দেশের ধরণটাই এরকম। অন্যান্য জায়গায় যেমন সবাই অনেক ট্র্যাভেল করে। ক্রীড়াবিদরা ছাড়াও সবাই ঘুরে বেড়ায়। আমাদের দেশে তো সেই সংস্কৃতি নেই। আমরা একটু ঘরকুনো। গ্রামের মানুষ ঢাকায় আসে না বছরের পর বছর।

আবারও বলছি, অজুহাত দিচ্ছি না। আমি বলছি যে এটা প্রভাব ফেলতে পারে। এটাও চ্যালেঞ্জ। এটা থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। কাটিয়ে উঠতে হবে। দেশের বাইরে কঠিন সময় গেলে কাজটা আরও কঠিন হয়ে ওঠে। এই ব্যাপারগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।

ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টোয়েন্টিও আছে। টস করবেন তো?

মাশরাফি: এই প্রশ্ন কেন?

সেদিন ঢাকায় বোর্ড প্রধানের সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন হলো, টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব বদলে আনার ভাবনা আছে কিনা। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই তো বলাবলি, লেখালেখি হলো অনেক জায়গায়। “আজই কি শেষ মাশরাফি?” বা অমুক সিরিজে শেষ, তমুক ম্যাচের পর শেষ…

মাশরাফি:
জানি না এসব কেন হয় বা হয়েছে। আমি কিন্তু কখনোই কাউকে ব্যক্তিগতভাবে বলিনি যে অবসর নেব বা নিতে চাই। কখনোই না। অনেক সময় নিজের মনে হয়েছে। সেটাও অবসর নেব, তেমনটি নয়। অবসরের চিন্তা করা যায় বা করতে পারি, সেরকম ভেবেছি। সেটা তো করতেই হবে, আজ হোক বা কাল। কিন্তু কখনোই সেটা বলিনি কাউকে। চিন্তা-ভাবনা করব বা করতে হবে, এটাকেই যদি কেউ বানিয়ে ফেলে যে অবসর নিয়ে ফেলব, তাহলে তো কিছু করার নাই!

লোকের এত আগ্রহ কেন আপনার অবসর নিয়ে, এসবে বিব্রত, বিরক্ত লাগে না?

মাশরাফি: সবসময়ই বলে আসছি, চিন্তা করার হলে আমিই করব। আমার মত না শুনে, আমার সঙ্গে কথা না বলেই কেউ বলে দিলে বা লিখে দিলে তো ঠিক হয় না। অথচ এটাই হয়ে আসছে। যারাই বলাবলি করেছে, আমার সঙ্গে কথা না বলে সবাই সবার মতো বলে ফেলছে।

যদি সিদ্ধান্ত নেই, সবার আগে অবশ্যই বোর্ড প্রেসিডেন্টকে জানাব। আমি যখন অধিনায়ক হই, উনিই দিয়েছিলেন। আর দশটা দিনের মতোই অনুশীলনে এসেছিলাম। উনি ডেকে বললেন যে তোমাকে ক্যাপ্টেন্সি দিতে চাই। তো আমি মনে করি, ছাড়ার সময়ও সেই সম্মান উনাকে আমার দেওযা উচিত। ফ্রম নো হোয়ার, উনি আমাকে অধিনায়কত্ব দিয়েছিলেন। আমি সিদ্ধান্ত নিলে সবার আগে উনাকে জানাব। তার পর বাকি সবাইকেও জানাব। সিদ্ধান্তের কারণও জানাব।

কিন্তু কেউ নিজে থেকে বললে বলতেই পারে। যার যার ব্যপার। আমার সঙ্গে এসবের সম্পর্ক নেই। জানিও না কেন বলে। আমার থেকে সিদ্ধান্ত গেলে আমি প্রেসিডেন্টকে জানাব আগে। কিন্তু উনার সঙ্গে এটা নিয়ে আমার কখনও কথা হয়নি। উনিও কিছু বলেননি।

নিউ জিল্যান্ড সফরে বোর্ড প্রধান মন্তব্য করলেন আপনার অবসর নিয়ে। পরে বদলে ফেললেন কথা…!

মাশরাফি:
দেখুন, আমরা দুজনই খোলামেলাই আছি। যে কোনো সময় উনি বলতে পারেন, আমিও পারি। কিন্তু কখনও আলোচনা হয়নি। নিউ জিল্যান্ডে একটা কথা উঠেছিল। ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল হয়ত উনার কোনো কথার সুত্রে। পরে উনি আমাকে নিজেই ফোন দিয়েছিলেন। আমি তখনও তাকে খোলামেলা বলে রেখেছি যে, “যদি কোনো সিদ্ধান্তও নেই, আপনাকে সবার আগে জানাব”।

টি-টোয়েন্টি নিয়ে আপনার ভাবনাটা কি?

মাশরাফি: টি-টোয়েন্টিতে আমরা এখনও সেভাবে দাঁড়াতে পারিনি। বছর দুয়েক আগেও আমরা ভাবতাম টেস্টে কবে দাঁড়াব আমরা। এখন পারফরম্যান্স গ্রাফ একটু হলেও বদলেছে। খুব দারুণ কিছু করিনি। ১৭ বছরে অবশ্যই আরও এগোনো উচিত ছিল। নানা কারণে হয়নি, সেটা অন্য বিতর্ক। কিন্তু হচ্ছে উন্নতি।

আমি চাই, টি-টোয়েন্টিতেও একটা পর্যায়ে যেতে। সেটির জন্য আরেকটু সময় লাগবে আমাদের। আমি এখনও খেলছি সেই কারণেই। টি-টোয়েন্টি দলটাকে আরেকটু দাঁড় করাতে চাই। দলটা আরেকটু শক্ত হোক। এখনও স্বপ্ন আছে, দলটাকে আরেকটু থিতু করতে চাই। সে জন্যই খেলছি, খেলে যেতে চাই। এরপর কখনও পরিস্থিতি দাবি করলে বা নিজের মনে হলে সিরিজ বাই সিরিজ ভাবার সুযোগ তো আছেই।