দ্বিতীয় দিন শেষে অতিথিদের স্কোর ২১৪/৫, এখনও পিছিয়ে ১২৪ রানে। পি সারা ওভালে আগের তিন টেস্টেই বাংলাদেশ হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। এবারই প্রথম ফলোঅন এড়াতে পারলো দলটি।
এক সময়ে স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১৯২ রান। বাংলাদেশের চোখে বড় লিডের স্বপ্ন। ৭ বলের মধ্যে ইমরুল কায়েস, তাইজুল ইসলাম, সাব্বির রহমানের বিদায়ে শেষ বেলায় চাপে পড়ে বাংলাদেশ। পাগলাটে ব্যাটিংয়ে সাকিব আল হাসান ১৮ ও মুশফিকুর রহিম ২ রানে অপরাজিত।
দ্বিতীয় সেশনে ব্যাটিং শুরু করা বাংলাদেশ উইকেট হারাতে পারতো তৃতীয় ওভারেই। সুরঙ্গা লাকমলের বলে এলবিডব্লিউর জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয়নি শ্রীলঙ্কা। হেরাথ রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত নিলে ১ রানে ফিরতে হতে পারতো তামিম ইকবালকে।
২৩ রানে আবার একইভাবে বেঁচে যান তামিম। অফ স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরার বলে এলবিডব্লিউ হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আম্পায়ারের সাড়া মিলেনি, এবারও রিভিউ নেননি হেরাথ। নিলে ভাঙত উদ্বোধনী জুটি।
তৃতীয়বার আর টিকেননি তামিম। তিনি তখন অর্ধশতকের সীমানায়। এবার বোলার ছিলেন হেরাথ নিজেই। অল্পের জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি বল, আঘাত হানলো প্যাডে। আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেন লঙ্কান অধিনায়ক। ৯১ বলে ৬টি চারে ৪৯ রান করে ফিরে যান তামিম।
ভাঙে ৯৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। কিছুক্ষণ পর ৯৬ বলে পাঁচটি চারে অর্ধশতকে পৌঁছান সৌম্য। তামিমের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা তিন ইনিংসে অর্ধশতক করলেন এই বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।
প্রথম শতকের অপেক্ষায় থাকা সৌম্য আবার ফিরেন হতাশা নিয়ে। লাকশান সান্দাকানের বল এগিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরেন তিনি। ১২১ বলে ৬টি চারে সৌম্যর রান ৬১।
মনে হচ্ছিল দিনের বাকি সময়টা কাটিয়ে দেবেন ইমরুল ও সাব্বির। পারেননি, তাদের সঙ্গে আউট হয়ে ফিরেন নাইটওয়াচম্যান তাইজুল।
নিউ জিল্যান্ডে যে ভুল করেছিলেন ইমরুল, তার পুনরাবৃত্তি দেখা গেছে কলম্বোয়। শর্ট বল দিয়ে পাতা ফাঁদে পা দেন মুমিনুল হকের জায়গায় তিন নম্বরে ব্যাট করা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। শ্রীলঙ্কার একমাত্র পেসার সুরঙ্গা লাকমলের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে সহজ ক্যাচ ছেড়ে তাকে জীবন দেন দিনেশ চান্দিমাল।
২৫ রানে জীবন পাওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ইমরুল। চায়নাম্যান সান্দাকানের রং-ওয়ান বুঝতে না পেরে আউট হন এলবিডব্লিউ হয়ে। পরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন তাইজুল। আম্পায়ার আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নিয়ে তাকে বিদায় করে শ্রীলঙ্কা।
টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলা সাকিব জীবন পেয়েছেন একবার, আরেকবার বেঁচে গেছেন আউট হতে হতে। তবুও পাল্টাননি খেলার ধরন। ৮ বলের ইনিংসে এসেছে তিনটি চার। প্রতিটি বল সীমানার বাইরে পাঠানোর পণ করে যেন নেমেছিলেন এই অলরাউন্ডার।
সান্দাকানের হ্যাটট্রিক ঠেকানো সাকিব সুইপ করে চার হাঁকান প্রথম বলে। পরের ওভারে তার উইকেট পেতে পারতেন বাঁহাতি লেগ স্পিনার। স্লগ করে উপুল থারাঙ্গাকে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান সাকিব।
লাকমলের করা ম্যাচের শেষ ওভারে পুল করতে গিয়ে আবার ক্যাচ দেন কিন্তু একটুর জন্য ফিল্ডারের হাতে যায়নি বল।
তার আগেই বিদায় নেন লিটন দাসের চোটে দলে আসা সাব্বির। প্রথমবারের মতো চার নম্বরে নেমে খেলেন ওয়ানডে মেজাজে। চার হাঁকিয়ে শুরু, এরপর সারাক্ষণ ব্যস্ত ছিলেন রানের সন্ধানে। স্কুপ করতে গিয়ে শেষ সময় সিদ্ধান্ত পাল্টে কাট করেছেন, রান করতে নিয়েছেন ঝুঁকি। ফিরেছেন তেমন ঝুঁকি নিতে গিয়েই।
৫৪ বলে সাব্বিরের ৪২ রানের ইনিংস শেষ হয়েছে বাজে এক শটে। লাকমলের শর্ট বলে লেগ গালিতে ‘ক্যাচিং অনুশীলন’ করিয়ে ফিরেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
৬৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার সান্দাকান। হেরাথ ও লাকমল নেন একটি করে উইকেট।
এর আগে দিনের শুরুতে ১৩৮ রানের চমৎকার এক ইনিংসে চান্দিমাল শ্রীলঙ্কাকে এনে দেন ৩৩৮ রানের সংগ্রহ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩৩৮
বাংলাদেশ: ১ম ইনিংস: ৬০ ওভারে ২১৪/৫ (তামিম ৪৯, সৌম্য ৬১, ইমরুল ৩৪, সাব্বির ৪২, তাইজুল ০, সাকিব ১৮*, মুশফিক ২*; লাকমল ১/৩২, পেরেরা ০/৫০, হেরাথ ১/৩৪, গুনারত্নে ০/২৫, সান্দাকান ৩/৬৫)