হ্যাটট্রিক জয়ে অধিনায়ক হেরাথের রেকর্ড
শেষের আগে যা একটু খেলছিলেন মিরাজ। তাকে ফিরিয়েই বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দিল শ্রীলঙ্কা। হেরাথ নিলেন ইনিংসে ষষ্ঠ উইকেট।
২৮ রানে ফিরলেন মিরাজ। বিনা উইকেটে ৬৭ রান নিয়ে শুরু করা দিনে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল ১৯৭ রানে। শ্রীলঙ্কার জয় ২৫৯ রানে।
প্রথম ৫ উইকেট পড়েছিল ৩৭ রানের মধ্যে। শেষ পাঁচটি পড়ল ৩৯ রানে। মাঝে মুশফিক ও লিটনের ৫৩ রানের জুটি।
৫৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে শেষ করলেন হেরাথ। ইতিহাসের সফলতম বাঁহাতি স্পিনার হওয়ার দিনটি স্মরণীয় করে রখলেন দলের জয় আর নিজের আরেকটি অর্জনে। প্রথম শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক হিসেবে জিতলেন নেতৃত্বের প্রথম তিন টেস্টই। আগের দুটি জয় ছিল জিম্বাবুয়েতে।
বাংলাদেশের জন্য আরও একটি হতাশার টেস্ট। পরের ম্যাচটিই বাংলাদেশে শততম টেস্ট। তবে উপলক্ষ উদযাপনের চেয়ে দুর্ভাবনাই অনেক বেশি!
বুধবার থেকে সেই টেস্ট কলম্বোর পি সারা ওভালে।
হেরাথের পঞ্চমে বাংলাদেশের নবম
তাসকিনের বিদায়ের পর দিলরুয়ান পেরেরার এক ওভারেই দুটি চার ও একটি ছক্কা মারলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু হেরাথকে থামাবে কে?
মুস্তাফিজকে বোল্ড করে লঙ্কান অধিনায়ক পূর্ণ করলেন পঞ্চম উইকেট। বাংলাদেশ ৯ উইকেটে ১৯৪।
চতুর্থ ইনিংসে রেকর্ড ১০ বার ৫ উইকেট হলো হেরাথের। ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে ২৯ বার। ছুঁলেন গ্লেন ম্যাকগ্রাকে। অস্ট্রেলিয়ান পেস কিংবদন্তিও ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ২৯ বার।
শেষের ক্ষণ গণনা
মুশফিক-লিটন দুজনই বিদায়ের পর এখন কেবল ম্যাচ শেষের ক্ষণ গণনা। দুই থিতু ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর তাসকিন আহমেদকে ফেরালেন রঙ্গনা হেরাথ।
বল সোজা আসবে ভেবেই হয়ত ডিফেন্স করেছিলেন তাসকিন। একটু টার্ন করে বল ব্যাটের কানায় লেগে প্যাড ছুঁয়ে শর্ট লেগের হাতে। তাসকিন ফিরলেন ৫ রানে। বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ১৮০।
লিটনকে ফিরিয়ে চূড়ায় হেরাথ
লড়াইয়ের সঙ্গীকে হারিয়ে যেন লড়াই ভুলে গেলেন লিটন দাস। ফ্লাইটেড বলটিকে উড়িয়ে মারতে গেলেন। বল জমা পড়ল কাভারের ফিল্ডারে হাতে। উল্লাসে মাতলেন রঙ্গনা হেরাথ। বাংলাদেশ এগোলো শেষের কাছে। হেরাথ উঠলেন চূড়ায়। বাঁহাতি স্পিনে সবচেয়ে বেশি উইকেটের দারুণ রেকর্ড!
লিটনকে আউট করেই হেরাথ ছাড়িয়ে গেলেন ড্যানিয়েল ভেটোরিকে। ৩৬৩ উইকেট নিয়ে টেস্ট ইতিহাসের সফলতম বাঁহাতি স্পিনার এখন হেরাথ!
৩৫ রানে ফিরলেন লিটনের ফেরার সময় বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ১৬৬।
আবারও বিরতির পর উইকেট
প্রথম সেশনের পুনরাবৃত্তি দ্বিতীয় সেশনে। সাকিবের আউটের আবার দৃশ্যায়ন মুশফিকের আউটে!
লাঞ্চের আগের ঘণ্টায় সামান্য আশা জাগিয়েছিল যে জুটি, সেটি শেষ লাঞ্চের পরই। ঠিক প্রথম সেশনের মতোই দ্বিতীয় বলেই উইকেট। লাকশান সান্দাকানের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল বেরিয়ে যাচ্ছিল আরও বাইরে। মুশফিক খেলতে গেলেন সেটিই। ব্যাটের কানায় সামান্য লেগে বল কিপারের গ্লাভসে। দারুণ ক্যাচ নিলেন ডিকভেলা। প্রথম ইনিংসে সান্দাকানের বলে ঠিক এভাবেই আউট হয়েছিলেন সাকিব।
৩৪ রানে ফিরলেন মুশফিক। বাংলাদেশ ডুবল আরেকটু। রান তখন ৬ উইকেটে ১৫৮।
বিভীষিকার পর একটু স্বস্তি
বেলস তুলে লাঞ্চের ঘোষণা দিলেন আম্পায়ার আলিম দার। টিভি পর্দায় ভেসে উঠল স্কোরকার্ড। ধারাভাষ্য কক্ষে রাসেল আর্নল্ড বললেন, “মুশফিকুর রহিম দা রক।”
এক ঘণ্টা আগেই স্কোরকার্ডের চেহারা ছিল ভয়াবহ। সেটি একটু ভদ্রস্থ ওই মুশফিকের সৌজন্যে। শেষ দিনের প্রথম ঘণ্টা ছিল দু:স্বপ্নের মত। দ্বিতীয় ঘণ্টায় একটু স্বস্তির সুবাতাস। টালমাটাল ইনিংসটা একটু থিতু হয়েছে মুশফিক ও লিটন দাসের ব্যাটে।
প্রথম ইনিংসের মতই চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় লড়াই করছেন মুশফিক। অধিনায়ক পাশে পেয়েছেন লিটন দাসকে। দিনের প্রথম ১৩ ওভারেই বাংলাদেশ হারিয়েছিল ৫ উইকেট। লাঞ্চের আগের ১৯ ওভারে আর উইকেট পড়েনি এই দুজনের দৃঢ়তায়।
লাঞ্চের সময় মুশফিকের রান ৩৪, লিটনের ৩২। দুজনের জুটিতে এসেছে ৫৩ রান। বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ১৫৭।
লাঞ্চের পর দিনের খেলা বাকি ৬৭ ওভার। উইকেটে আগে চেয়ে টার্ন একটু বেশি মিলছে বটে; তবে খুব ভয়ঙ্কর নয়। চাইলেই টিকে থাকা যায়। দিনটা পার করে দেওয়া সেই দিক থেকে অসম্ভব নয়। তবে বাংলাদেশের সর্বনাশ তো সকালেই হয়ে গেছে!
এবার জোড়া ধাক্কা
সাকিব ও মুশফিকে ব্যাটে কেবলই একটি জুটি গড়ে ওঠার সম্ভাবনা। কিন্তু সেটিও শেষ জমে ওঠার আগেই। রঙ্গনা হেরাথ ফেরালেন সাকিবকে। সেটি যদি যথেষ্ট না হয়, এক বল পরই নেই মাহমুদউল্লাহও!
এবার অবশ্য বাজে শটে ফেরেননি সাকিব। হেরাথের বল তাকে টেনে এনেছিল বাইরে। লম্বা পায়ে ডিফেন্স করেছিলেন। বল তার গ্লাভসে চুমু দিয়ে লেগ স্লিপে। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নিলেন করুনারত্নে। সাকিব করেছেন ৮।
জায়গা বাঁচাতে লড়তে থাকা মাহমুদউল্লাহ এলেন আর গেলেন। হেরাথের আর্ম বলে এলবিডব্লিউ শূন্য রানে। বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ১০৪।
মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে হেরাথ ছুঁলেন ড্যানিয়েল ভেটোরিকে। বাঁহাতি স্পিনে সবচেয়ে বেশি উইকেট এখন যৌথভাবে এই দুজনের, ৩৬২টি।
বাজে থেকে আরও বাজে
দ্বিতীয় বলেই সৌম্যকে হারানো যদি বাজে শুরু হয়, সময়ের সঙ্গে সেটি হয়েছে বাজে থেকে আরও বাজে। ফিরেছেন মুমিনুল। সেটির রেশ না কাটতেই নেই তামিম ইকবালও!
বোলার আবারও দিলরুয়ান পেরেরা। অফ স্টাম্পে পিচ করা বল একটু লাফিয়ে টার্ন করেছিল। বলটি অবশ্য ভালো ছিল, তবে এমন নয় যে সামলানোই যাবে না। তামিম পারলেন না। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল স্লিপে। ৫৫ বলে ১৯ করে ফিরলেন তামিম।
বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ৮৩। ৪৫৭ রানে লক্ষ্য বা পুরো দিন টিকে থাকা, দুটিই এখন দূর আকাশের তারা!
মুমিনুলের ‘দেজাভু’
দেখলে যে কেউ ধন্দে পড়ে যেতে পারেন। এটা কি প্রথম ইনিংসেরই আউট নয়? ঠিক একই রকম। প্রথম ইনিংসের মতোই একইভাবে আউট হলেন মুমিনুল হক। একই বোলার, প্রায় একই বল, একই আউট!
দিলরুয়ান পেরেরার ফ্লাইটেড বল। সামনে খেলার বল মুমিনুল খেললেন পেছনে। আবারও ফ্লাইটে বিভ্রান্ত এবং বলের লাইন মিস। প্রথম দেখাতেই মনে হয়েছে আউট। আম্পায়ারও আঙুল তুললেন। তামিমে সঙ্গে কথা বলে মুমিনুল চাইলেন রিভিউ। কিন্ত রিভিউ চেয়েও আবার হাঁটা দিলেন ড্রেসিং রুমের দিকে। মনে হয় নিজেই বিভ্রান্ত!
তবে আগেই রিভিউ চাওয়ায় সেটা থাকলই। মুমিনুল ফিরলেন ৫ রানে। রিভিউও একটা শেষ হলো। বাংলাদেশ আরও বিপদে পড়ল। রান ২ উইকেটে ৮১।
শুরুতেই নেই সৌম্য
দিনটা বুঝি এর চেয়ে বাজেভাবে শুরু হতে পারত না বাংলাদেশের জন্য। দিনের দ্বিতীয় বলেই বোল্ড সৌম্য সরকার!
আউট হতে পারতেন প্রথম বলেই। আসেলা গুনারত্নে স্লো মিডিয়াম বোলার হলেও ছুটে এসে করলেন অফ স্পিনের মতো। পুরোপুরি বিভ্রান্ত সৌম্য, সুইপ করতে গিয়ে আবার ঠেকাতে চাইলেন। ক্যাচ উঠল, শর্ট লেগ ফিল্ডার পারল না ধরতে।
পরের বলে ফিল্ডার লাগল না। এবার বেশ ফ্লাইট দেয়া বল। সৌম্য ডিফেন্স করেছিলেন, বল একটু বেরিয়ে তার ব্যাটের পাশ দিয়ে চুমু দিল স্টাম্পে। এত ‘সফট ডিসমিসাল’ যে বোলার আবেদন করেছিলেন, সৌম্যও রিভিউ চেয়ে বসেছিলেন। কেউই শুরুতে বুঝতে পারেননি কি হয়েছে।
আগের দিনের ৫৩ রানেই সৌম্যর বিদায়। বাংলাদেশ ১ উইকেটে ৬৭। লক্ষ্য ৪৫৭ রান বা ৯৮ ওভার টিকে থাকা।