উইকেট মন্থর হয়ে এসেছে। স্পিনাররা সুবিধা পেতে শুরু করেছে। সাত সকালেই ফিরে গেছেন আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার। তখন কেমন ব্যাটিং দরকার ছিল, সতীর্থদের সামনে উদাহরণ হয়ে ক্রিজে ছিলেন মুশফিক। মেহেদী হাসান মিরাজ ছাড়া আর কেউই অনুসরণ করেননি অধিনায়ককে।
আগের দিন ১৪ বলে ১ রান করা অধিনায়ক তৃতীয় দিন সকালেও লড়াই করেন বুক চিতিয়ে। প্রথম ২২ রান করতে খেলেন ৮৮ বল। একটাও উল্টা-পাল্টা শট খেলতে দেখা যায়নি ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে। ৮৯ বলে আসে তার প্রথম বাউন্ডারি, এগিয়ে এসে রঙ্গনা হেরাথের মাথার ওপর দিয়ে বিশাল ছক্কা।
বাজে বলের জন্য অপেক্ষা করেছেন, ভালো বল সামলে গেছেন। ছয় নম্বর থেকে চার নম্বরে উঠে আসা অধিনায়কের ব্যাটিং দারুণ পরিণত। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা সৌম্যর ভাষায়, ‘প্রপার টেস্ট ব্যাটিং’।
“মুশফিক ভাইয়ের ব্যাটিং থেকে শেখার তো অনেক কিছুই আছে। শুরুতে সময় নিয়ে উইকেটে মানিয়ে নিয়েছেন। অন্যরা প্রথম দিকে চার মারলেও তিনি অনেকক্ষণ টিকে একটা চার মেরেছেন। উনি অনেক অভিজ্ঞ একজন খেলোয়াড়, আমাদের অধিনায়ক। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।”
সেই শেখার ব্যাপারটি খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। টানা দুই টেস্টে শতক করা মুশফিক ছিলেন তৃতীয়টির পথে। পরপর দুই বলে মিরাজ-তাসকিনের আউটের পর বিদায় হন অতিরিক্ত চড়াও হতে গিয়ে। বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের কেউ একজন তাকে সঙ্গ দিলে গল টেস্টের চেহারাটা ভিন্ন রকম হতে পারতো।
ভালো বলের চেয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বাজে বলেই বেশি আউট হতে দেখা যায় ইদানিং। ভালো বল সামলাতে সামলাতে বাজে বল পেলে অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে দিয়ে আসেন উইকেট। গল টেস্টের তৃতীয় দিনে যেমন, লেগ স্টাম্পে পড়ে আরও বাইরে যাওয়া বলে আউট হন সাকিব আল হাসান।
বাংলাদেশ দলের এই ব্যাটিংয়ে পেশাদারিত্বের অভাব দেখেন অনেকেই।
“পেশাদারিত্বের অভাব, সে তো বলতেই পারেন। টেস্টে সবাই বাজে বলের জন্য অপেক্ষা করে। সাকিব ভাই হয়তো বাজে বল ভেবেই মারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কানেক্ট করতে পারেননি। সেই জন্য উনি আউট হয়ে গেছেন।”
নিজেদের টেস্ট মানসিকতায় কোনো সমস্যা দেখেন না তরুণ সৌম্য। আগের দিন চমৎকার ব্যাটিং করা এই তরুণ জানান, টেস্টে সব সময়ই বাজে বলের জন্য অপেক্ষা করেন তারা। সেই বাজে বলে গড়বড় হয়ে যাওয়াটা তার ভাষায় দুর্ভাগ্য, অভিজ্ঞতার অভাব বা টেকনিকের কোনো গলদ নয়।
গল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বৃহস্পতিবারের প্রথম সেশনের ব্যাটিং দেখে বোঝার উপায় নেই তাদের লক্ষ্যটা ঠিক কি ছিল। সৌম্য জানান, মূল ব্যাটসম্যানদের দিয়ে পুরো দিন কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তারা। সেখানে প্রথম সেশনেই নেই সৌম্য, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, লিটন দাস। ফল- ফলোঅনের শঙ্কা। ব্যাটসম্যানদের প্রতিনিধি হিসেবে তার দায় নিলেন সৌম্য।
“যেহেতু ব্যাটিং আমরাই করি দায় তো আমাদেরই নিতে হবে। এছাড়া অন্য কেউ তো ব্যাটিং করবে না। সবাই চেষ্টা করে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জন্য। যে যতটুকু পারছে দিচ্ছে। ছোটো ভুলগুলো যদি না হতো দিনটা হয়তো আমাদের পক্ষেই যেত। আমরা ভালো অবস্থানে থাকতাম, দিনটাও ভালোভাবে শেষ হতো।”
দিনটা ভালো কাটেনি বাংলাদেশের। ৪৯৪ রানের জবাব দিতে গিয়ে গুটিয়ে গেছে ৩১২ রানে। ১৮২ রানে পিছিয়ে থাকা দলটি বিপদেই আছে। সেখান থেকে উত্তরণের পথটাও জানা অতিথিদের।
“শুরুতে যা দিয়েছিলাম, এখন থেকে তার চেয়ে আরও অনেক বেশি দিতে হবে। আগে যদি ১০০ ভাগ দিতাম তাহলে এখন থেকে ১২০/১৫০ শতাংশ দিতে হবে। পরিকল্পনা থাকবে ম্যাচ যত তাড়াতাড়ি নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসা যায়।”
হায়দরাবাদ টেস্টের পর বাংলাদেশের অধিনায়ক বলেছিলেন, কেবল ডিফেন্স করে ম্যাচ বাঁচানো যায় না। বৃহস্পতিবার তিনি নিজেই দেখিয়েছেন, পরিস্থিতি আর বল অনুযায়ী খেললে কতক্ষণ টিকা যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে সতীর্থরা তার পথ ধরে হাঁটলে ম্যাচ বাঁচানোর ভালো সম্ভাবনা থাকবে বাংলাদেশের।