মিরাজকে নিয়ে লড়লেন কেবল মুশফিক

গলের উইকেটে এখনও খুব ভয়ের কিছু নেই। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠে নামলে কাটিয়ে দেওয়া যায় লম্বা সময়। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম নেতৃত্ব দিলেন সামনে থেকেই। কিন্তু সতীর্থরা ব্যর্থ তাকে অনুসরণ করতে।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতগল থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2017, 10:46 AM
Updated : 9 March 2017, 01:59 PM

গল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে লড়লেন চারে উঠে আসা মুশফিক। অধিনায়ককে সঙ্গ দিলেন কেবল মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই জনের দৃঢ়তায় গল টেস্টে ফলোঅন এড়াল বাংলাদেশ। তবে বিপদ কাটেনি তাতে। প্রথম ইনিংসে ১৮২ রানের লিড নিয়ে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণে শ্রীলঙ্কা।

প্রথম ২২ রান করতে ৮৮ বল খেলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। ৮৯তম বলে হেরাথকে উড়িয়ে বিশাল ছক্কায় আসে তার প্রথম বাউন্ডারি। ১০৭ বলে অর্ধশতকে পৌঁছানোর পথে তার ব্যাট থেকে আরও চারটি চার। হেরাথকেই এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে শেষ হয় মুশফিকের ১৬১ বল স্থায়ী ৮৫ রানের ইনিংস।

স্বাগতিকদের ৪৯৪ রানের বড় সংগ্রহের জবাব দিতে নেমে তৃতীয় দিন ৩১২ রানে অলআউট বাংলাদেশ। ৪ উইকেট যায় ১৪ রানে। 

মুশফিকের দৃঢ়তা দেখা যায়নি দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন মিডলঅর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। চাইলে টিকে থাকা তাদের জন্য খুব কঠিন ছিল না। পরিস্থিতিও তাদের কাছে শট খেলার দাবি জানায়নি। তবুও খেললেন, উইকেট দিলে এলেন।

১১৮ রানের উদ্বোধনী জুটিতে ভালো শুরু পাওয়া বাংলাদেশ আগের দিনই অস্বস্তিতে পড়ে তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হকের বিদায়ে। সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, লিটন দাসদের দ্রুত বিদায়ে তৃতীয় দিন বিপদ আরও বাড়ে স্বাগতিকদের।

আগের দিন চমৎকার ব্যাটিং করা সৌম্যর বাজে শটে শুরু। লেগ স্টাম্পে সুরঙ্গা লাকমলের শর্ট বল ছেড়ে দিতে গিয়েও ছাড়েননি বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। পুলও ঠিক মতো করতে পারেননি, ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ মুঠোয় নেন লাহিরু কুমারা।

এক প্রান্তে যথারীতি মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন মুশফিক। সাকিব খেলেন নিজের মতো করেই। একবার ব্যাটের কানায় লেগে ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা পান তিনি; সেটি ফিল্ডারের হাতেও যেতে পারতো। চায়নাম্যান লাকশান সান্দাকানের গুগলিতে শেষ হয় তার টি-টোয়েন্টি মেজাজের ইনিংস।

নির্বিষ গুগলি বুঝতে পারেননি সাকিব। মিডল স্টাম্পে পড়ে লেগ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ চড়াও হন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ঠিক মতো ব্যাটে লাগেনি, ক্যাচ জমা পড়ে নিরোশান ডিকভেলার হাতে।

দুই অঙ্কে যেতে পারেননি চার থেকে ছয় নম্বরে নেমে আসা মাহমুদউল্লাহ। পেসার লাহিরু কুমারার বলে পা যায়নি তার। লাইনে না গিয়ে খেলার মাশুল দেন বোল্ড হয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটে রান পেয়ে দলে ফেরা লিটন ব্যর্থ প্রথম ইনিংসে। রঙ্গনা হেরাথের বলে আলসে শটে ধরা পড়েন স্লিপে।

তৃতীয় দিন শুরুর আগে স্টেডিয়ামের নেটে লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করেন মিরাজ। মাঠে মেলে কঠোর পরিশ্রমের প্রমাণ। তরুণ এই অলরাউন্ডার যখন ক্রিজে আসেন তখন দল ফলোঅনের শঙ্কায়। অধিনায়কের সঙ্গে তার ১০৬ রানের জুটিতে সেই শঙ্কা উড়ায় অতিথিরা।

দিনের প্রথম সেশনে ৮০ রান যোগ করতে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেটি পাঁচও হতে পারতো। বিরতির আগে শেষ ওভারে সান্দাকানের বলে স্লিপে জীবন পান সে সময়ে ৯ রানে ব্যাট করা মিরাজ। দ্বিতীয় নতুন বলের দ্বিতীয় ওভারে আম্পায়ার আলিম দার এলবিডব্লিউ দিলে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

দ্বিতীয় নতুন বলেই হয় বাংলাদেশের সর্বনাশ। প্রথম ১০ ওভার নিরাপদে কাটিয়ে দেওয়ার পর ছন্দপতন। অফ স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে মিরাজের বিদায়ে ভাঙে অতিথিদের প্রতিরোধ। ৭৭ বলে পাঁচটি চারে মিরাজের রান ৪১। পরের বলে একই পরিণতি হয় তাসকিন আহমেদের। অফ স্পিনারের হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান।

অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে সতীর্থদের আসা যাওয়া দেখা মুশফিক এই সময়ে যতটা সম্ভব দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেখানে খুব একটা সফল নন তিনি।

দ্বিতীয় সেশনেই হয়তো শেষ হতে পারতো বাংলাদেশের ইনিংস। আলোক স্বল্পতায় নির্ধারিত সময়ের চার মিনিট আগে নেওয়া হয় চা-বিরতি। তৃতীয় সেশনে ইনিংস টিকে মাত্র দুই বল। মুস্তাফিজকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেন হেরাথ।

অফ স্পিনার পেরেরা ও বাঁহাতি স্পিনার হেরাথ নেন তিনটি করে উইকেট। একটি করে উইকেট নেন লাকমল, কুমারা ও সান্দাকান।

বৃষ্টির জন্য শ্রীলঙ্কা আর দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করতে পারেনি। স্থানীয় সময় বিকাল চারটার পরই দিনের খেলার সমাপ্তি টানেন দুই আম্পায়ার। শুক্রবার চতুর্থ দিনের খেলা শুরু হবে নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগে স্থানীয় সময় সকাল পৌনে দশটায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৪৯৪

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৯৭.২ ওভারে ৩১২ (তামিম ৫৭, সৌম্য ৭১, মুমিনুল ৭, মুশফিক ৮৫, সাকিব ২৩, মাহমুদউল্লাহ ৮, লিটন ৫, মিরাজ ৪১, তাসকিন ০, শুভাশীষ ০*, মুস্তাফিজ ৪; লাকমল ১/৪২, কুমারা ১/৭০, পেরেরা ৩/৫৩, হেরাথ ৩/৭২, সান্দাকান ১/৬৯)