বৃষ্টির ফোঁটায় স্বস্তির পরশ
চা বিরতির আগেই ঘন কালো মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। চা-বিরতি দেওয়া হয় একটু আগেই। ২৫ মিনিট পর খেলা শুরু হতে দুই বলেই নেই বাংলাদেশের শেষ উইকেট। শ্রীলঙ্কা পেল ১৮২ রানের লিড। কিন্তু সেই লিড আর বাড়ানো হলো না তৃতীয় দিনে।
বৃষ্টিতে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়েই নামতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। বিকেল সোয়া চারটার দিকে দিনের খেলা সমাপ্তির ঘোষণা আসে। চতুর্থ দিনে খেলা শুরু হবে ১৫ মিনিট আগে।
বিরতির পরই শেষ বাংলাদেশ
লেগ স্টাম্পে পিচ করা বল ফ্লিক করেছিলেন মুস্তাফিজ। শর্ট লেগে ফিল্ডার নিজেকে বাঁচাতে সরতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বল আটকে যায় তার কোলে!
প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ৪৯৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ৩১২ রানে। স্বাগতিকদের লিড ১৮২ রানের।
শেষ উইকেটসহ হেরাথের উইকেট তিনটি। তিনটি নিয়েছেন দিলরুয়ান পেরেরাও। দ্বিতীয় দিনে প্রথম ৪০ ওভারে তাকে বোলিংয়েই আনেননি হেরাথ। কিন্তু তিনিই ভেঙেছেন মুশফিক ও মিরাজের শতরানের জুটি।
বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন সান্দকান। তবে এই চায়নাম্যান বোলার উইকেট নিয়েছেন একটি।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৯৭.২ ওভারে ৩১২ (তামিম ৫৭, সৌম্য ৭১, মুমিনুল ৭, মুশফিক ৮৫, সাকিব ২৩, মাহমুদউল্লাহ ৮, লিটন ৫, মিরাজ ৪১, তাসকিন ০, শুভাশীষ ০*, মুস্তাফিজ ৪; লাকমল ১/৪২, কুমারা ১/৭০, পেরেরা ৩/৫৩, হেরাথ ৩/৭২, সান্দাকান ১/৬৯)
হলো না মুশফিকের সেঞ্চুরি
শতরানের জুটির পর জোড়া ধাক্কা
একই বোলার, একইরকম ভুল। মুমিনুলের মতোই দিলরুয়ান পেরেরার সামনে খেলার বল পেছনে খেললেন মিরাজ। ফলও একই, এলবিডব্লিউ!
আউট হওয়ার আগে অবশ্য দারুণ খেলেছেন মিরাজ। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে তার শতরানের জুটিতেই ফলো অনের শঙ্কা দূর করতে পেরেছে বাংলাদেশ।
তবে মিরাজের উইকেট বয়ে এনেছে আরও একটি উইকেট। পরের বলেই এলবিডব্লিউ তাসকিন আহমেদ। আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে জিতে যায় শ্রীলঙ্কা।
আগেই টেস্টই অর্ধশতক করা মিরাজ এদিনও খেলেছেন দারুণ কিছু ড্রাইভ। রেখেছেন লড়াইয়ের ছাপ। শেষ পর্যন্ত ফিরলেন ৪১ রানে। সপ্তম উইকেটে দুজনের জুটি রান ১০৬।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশর রেকর্ড জুটি মুশফিক ও সাকিবের ১১১, মিরপুরে।
বাংলাদেশের রান ৮ উইকেটে ২৯৮। ৭৫ রানে খেলছেন মুশফিক।
লাঞ্চের পর অন্য মুশফিক
লাঞ্চের সময় দলের আলোচনা কি ছিল কে জানে। লাঞ্চের পর থেকেই দেখা যাচ্ছে অন্য মুশফিককে!
বিরতি পর প্রথম ওভারেই বেরিয়ে এসে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারলেন হেরাথকে। ৮৮ বল খেলার পর মুশফিকের প্রথম বাউন্ডারি!
পরের চার ওভারে এল আরও চারটি চার। ৮৪ বলে ২২ রান নিয়ে লঞ্চে গিয়েছিলেন মুশফিক। পরের ২৩ বলে ২৮ রান করে স্পর্শ করলেন অর্ধশতক। কিপিং ছেড়ে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম ইনিংসেই সাফল্য। এবার এটি আরও বড় করার পালা।
আরেক পাশে মিরাজ সঙ্গ দিচ্ছেন ভালোই। সপ্তম উইকেট জুটির রানও পঞ্চাশ ছাঁড়িয়েছে।
দুঃস্বপ্নের প্রথম সেশন
ফিরলেন লিটন, ডাকছে ফলো অন!
সময় যত গড়াচ্ছে, তৃতীয় দিনের সকাল বাংলাদেশে জন্য হয়ে উঠছে বিভীষিকা। মাহমুদউল্লাহর ধাক্কা সামাল না দিতেই আউট লিটন কুমার দাস।
কুমারাকে দারুণ এক শটে চার মেরে শুরু করেছিলেন লিটন। কিন্তু ফিরলেন বাজে শটে। রঙ্গনা হেরাথের বলে জায়গা বানিয়ে ড্রাইভ করতে গেলেন জায়গায় দাঁড়িয়ে, বলের লাইনে পা না নিয়েই। বল গেল স্লিপে। দলে ফেরার ইনিংসে লিটন ফিরলেন ৫ রানে।
মেহেদী হাসান মিরাজ অবশ্য শুরু করেছেন জোড়া চার মেরে। তবে বাংলাদেশ এখন ভালোমতোই আছে ফলো অনের শঙ্কায়। ২০০ রান ছুঁতেই নেই ৬ উইকেট!
উড়ল মাহমুদউল্লাহর বেলস
বাজে বল, সাকিবের আরও বাজে শট
আগের দিন থেকেই শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার ছিলেন লাকশান সান্দাকান। ব্যাটিং উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যনদের যা একটু ভুগিয়েছেন তিনিই। পরাস্ত করেছেন কয়েকবার। অথচ উইকেট পেলেন সম্ভবত সবচেয়ে বাজে বলেই!
লেগ স্টাম্পে পিচ করা বল বেরিয়ে যাচ্ছিল আরও অনেক বাইরে দিয়ে। নির্বিষ, নিরীহ বলটি খেলতে গিয়েই আউট সাকিব আল হাসান। ব্যাটে লাগলো আলতো ছোঁয়া। দ্রুত লেগ স্টাম্পে চলে আসা ডিকভেলা নিলেন দারুণ ক্যাচ। ক্যারিয়ারে আরও একবার উইকেট উপহার দিয়ে ফিরলেন সাকিব। করেছেন ১৯ বলে ২৩ রান। বাংলাদেশ তখন ৪ উইকেটে ১৭৪ রান।
রান-বলের হিসাবই বলছে সাকিবের খেলার ধরণ। শুরু থেকেই খেলেছেন শট। বেঁচেও গেছেন। একটি মিসহিটে ছক্কা পেয়েছেন, যেটি অনায়াসেই যেতে পারত ফাইন লেগ ফিল্ডারের হাতে। আরেকবার অল্পের জন্য ফিরতি ক্যাচ হননি লাকমলের কাছে। শেষ পর্যন্ত পারলেন না টিকতে।
সৌম্যকে হারিয়ে বাংলাদেশের শুরু
পরিকল্পনা বদলে রাউন্ড দা উইকেটে গেলেন সুরাঙ্গা লাকমল। কাজ করল ম্যাজিকের মতো! লেগ স্টাম্পে পিচ করা শরীর তাক করা শর্ট বল। সৌম্য সরকার যেন হকচকিয়ে গেলেন। না খেলতে পারলেন ঠিক ভাবে পুল শট, না পারলেন এড়াতে। বল ফাইন লেগে লাহিরু কুমারার হাতে!
আগের ওভারের শেষ বলে দারুণ এক চার মেরেছিলেন সৌম্য। এবার শেষ বলে আউট। দিনের তৃতীয় ওভারেই শ্রীলঙ্কার সাফল্য। ৭১ রানে সৌম্যর বিদায়। বাংলাদেশ তখন ৩ উইকেটে ১৪২।
দ্বিতীয় দিন শেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৪৯৪
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৬ ওভারে ১৩৩/২ (তামিম ৫৭, সৌম্য ৬৬*, মুমিনুল ৭, মুশফিক ১*; লাকমল ০/১৫, কুমারা ০/৩৮, পেরেরা ১/৩২, হেরাথ ০/৩০, সান্দাকান ০/১৭)