মিরাজের স্পিনে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ

দিনের দ্বিতীয় বলে কুসল মেন্ডিসের শট সীমানার ঠিক সামনে কোনোমতে ফেরালেন ফিল্ডার, এলো তিন রান। চতুর্থ বলে উড়ালেন নিরোশান ডিকভেলা, মিডউইকেট দিয়ে বিশাল ছক্কা। আগের দিন যেখান শেষ করেছিলেন তারা শুরু করলেন ঠিক সেখান থেকেই। বাংলাদেশের জন্য এমন হতাশার শুরুর পরও মেহেদী হাসান মিরাজের নৈপুণ্যে শেষটায় হাসিমুখেই মাঠ ছাড়ল অতিথিরা। 

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতগল থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2017, 09:37 AM
Updated : 8 March 2017, 03:10 PM

১১৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মিরাজ। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান আর বুধবার অর্ধশতক পাওয়া দিলরুয়ান পেরেরাকে ফিরিয়েছেন তরুণ এই স্পিনার।

দ্বিতীয় দিন লাঞ্চের পর ৬৫ মিনিট টিকে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস। গল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৪ উইকেটে ৩২১ রান নিয়ে দিন শুরু করা দলটি গুটিয়ে যায় ৪৯৪ রানে। দিনের প্রথম ঘণ্টায় যেভাবে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন মেন্ডিস আর ডিকভেলা তাতে পাঁচশ’ রানের আগে স্বাগতিকদের থামানো সাফল্যই।

এক সময়ে চার উইকেটে শ্রীলঙ্কার রান ছিল ৩৯৮। সেখান থেকে ৯৬ রানে স্বাগতিকদের শেষ ৬ উইকেট তুলে নেয় মুশফিকুর রহিমের দল। প্রচুর বাজে বল করে সহজ রান উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলারা। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা উপহার দিয়ে এসেছেন উইকেট, নয়তো সংগ্রহ হতে পারতো আরও বড়।

এক প্রান্তে আটঁসাঁট বল করছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। তার প্রথম স্পেল এমন ৫-১-৫-০। রান নিতে শুভাশীষ রায় চৌধুরীর ওপর চড়াও হয়েছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। সুযোগ এসেছিল ডানহাতি পেসারের বলেই। কিন্তু মেন্ডিসের হুকে সীমানায় ক্যাচ ধরতে দিয়ে ছক্কায় পরিণত করেন মুস্তাফিজ। আগের সেরা ১৭৬ রান ছাড়িয়ে যান মেন্ডিস। ম্যাচে দ্বিতীয়বার শুভাশীষের বলে বেঁচে গেলেন শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।

সেই ছক্কা হাঁকাতে গিয়েই ফিরেন মেন্ডিস। মিরাজকে উড়িয়ে দ্বিশতকে পৌঁছতে গিয়ে সীমানাতেই তামিম ইকবালের চমৎকার ক্যাচে পরিণত হন এই তরুণ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। চমৎকার সব কাভার ড্রাইভ খেলা মেন্ডিস স্পিনারদের সামলেছেন দারুণ ফুটওয়ার্কে। তার বিদায়ে ভাঙে ডিকভেলার সঙ্গে ১১০ রান স্থায়ী পঞ্চম উইকেট জুটি।

২৮৫ বলে ১৯টি চার আর ৪টি ছক্কায় মেন্ডিস ফিরেন ১৯৪ রানে।

ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করে দ্রুত রান সংগ্রহ করা ডিকভেলাও ফিরেন লাঞ্চের আগেই। ৫১ বলে অর্ধশতক পাওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান মিরাজের চাতুর্যের শিকার। বেরিয়ে আসতে দেখে তরুন অফস্পিনার বল টেনে ও ব্যাটসম্যান থেকে দূরে করেন। তাতেই টাইমিংয়ের গড়বড়, মিডউইকেট দিয়ে খেলতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যানে মাহমুদউল্লাহর কাছে সহজ ক্যাচ।

৭৬ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ডিকভেলা ফিরেন ৭৫ রানে।

সেখান থেকে দলকে পাঁচশ’ রানের কাছাকাছি নিয়ে যান দিলরুয়ান পেরেরা। ৭৭ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় আসে ৫১ রান। তৃতীয় অর্ধশতক পাওয়া এই অলরাউন্ডারকেও ফেরান মিরাজ। একটু ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার পর রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি পেরেরা।

তার আগে দারুণ এক বলে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথকে বিদায় করেন মুস্তাফিজ। সুরঙ্গা লাকমলের রান আউটের পর শ্রীলঙ্কা ইনিংসের ইতি টানেন আবার আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের অলরাউন্ডারদের শীর্ষে উঠে আসা সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে চমৎকার এক ক্যাচ তালুবন্দি করেন মিরাজ।

রান দেওয়ার শতক হয়ে গেছে শুভাশীষ (১/১০৩) ও সাকিবের (১/১০০)। স্কোর কার্ড যা দেখাচ্ছে তারচেয়ে অনেক ভালো বোলিং করেছেন শুভাশীষ। সবচেয়ে আঁটসাঁট বোলিং করেছেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি এই পেসার ২ উইকেট নিয়েছেন ৬৮ রানে। আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ ৭৭ রানে নেন ১ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১২৯.১ ওভারে ৪৯৪ (করুনারত্নে ৩০, থারাঙ্গা ৪, মেন্ডিস ১৯৪, চান্দিমাল ৫, গুনারত্নে ৮৫, ডিকভেলা ৭৫, পেরেরা ৫১, হেরাথ ১৪, লাকমল ৮, সান্দাকান ৫, কুামারা ০; মুস্তাফিজ ২/৬৮, তাসকিন ১/৭৭, শুভাশীষ ১/১০৩, সাকিব ১/১০০, সৌম্য ০/৯, মাহমুদউল্লাহ ০/১০)