মেন্ডিসের দৃঢ়তায় চাপে বাংলাদেশ

মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন কুসল মেন্ডিস। ‘নো’ বলের কল্যাণে বেঁচে গেলেন তরুণ এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ষষ্ঠ ওভারে ক্রিজে এসে টিকে থাকলেন সারা দিন। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনই ম্যাচের লাগাম হাতে নিল শ্রীলঙ্কা।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতগল থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2017, 01:31 PM
Updated : 7 March 2017, 02:55 PM

গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে টেস্টের প্রথম দিন গড় স্কোর ২৮৯। মেন্ডিসের দৃঢ়তা ভরা ব্যাটিংয়ে স্বাগতিকরা ছাড়িয়ে গেল গড় রান। তিন সেশনে অতিথিরা নিতে পারলো মাত্র চার উইকেট। প্রথম দিন শেষে শ্রীলঙ্কার স্কোর ৩২১/৪।  

মাহেলা জয়াবর্ধনের পর শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ২২ বছর বয়সে দুটি দেড়শোর্ধ ইনিংস খেলা মেন্ডিস অপরাজিত ১৬৬ রানে। ২৪২ বলের দুর্দান্ত ইনিংসে আছে ১৮ চার ও দুটি ছক্কা। এর আগে গত জুলাইয়ে পালেকেল্লেতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেছিলেন ১৭৬ রান। আর নিরোশান ডিকভেলা খেলছেন ১৪ রানে।

তিন পেসার আর সাকিব আল হাসানসহ দুই স্পিনার নিয়ে বোলিং আক্রমণ সাজানো বাংলাদেশ মঙ্গলবার পারেনি খুব বেশি সুযোগ তৈরি করতে। সারা দিনে নিতে পারেনি একটিও রিভিউ। প্রথম সেশনে উইকেটে কিছুটা সুবিধা ছিল, কিন্তু সেটা ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারেনি টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে।

ম্যাচের আগে উইকেটের গুড লেংথ এরিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের চন্দিকা হাথুরুসিংহে ও কোর্টনি ওয়ালশ পেসারদের বলে দিয়েছিলেন ঠিক কোন লেংথে বল করে যেতে হবে। সেই জায়গায় টানা বল করে যেতে পারেননি তিন পেসার। বিক্ষিপ্ত কয়েকটা ভালো বল ছাড়া তেমন কোনো পরীক্ষায়ই ফেলতে পারেননি তারা।

পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি আর বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে পেছনে ফেলে গল টেস্টে খেলা শুভাশীষ রায় চৌধুরী আঘাত হানেন নিজের প্রথম ওভারেই। স্কিড করা বলে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হন উপুল থারাঙ্গা। 

লাঞ্চের মিনিট চারেক আগে ফিরেন অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান দিমুথ করুনারত্নে। অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের সাদামাটা বল স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হন তিনি। প্রস্তুতি ম্যাচে ১৯০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলা দিনেশ চান্দিমাল ছন্দহীন প্রথম ইনিংসে।

এক সময়ে টানা ২৩ বল ডট দিয়ে সিঙ্গেল নেন চান্দিমাল। ড্রাইভগুলো ছিল সব নিষ্ফলা। চাপ কাটাতে গিয়ে সেই ড্রাইভেই ফিরেন, মুস্তাফিজুর রহমানের অফ কাটারে গালিতে মিরাজের চমৎকার ক্যাচে পরিণত হয়ে। ৫ রান করতে উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান খেলেন ৫৪ বল। ৯২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে শ্রীলঙ্কা।

প্রথম ৪০ ওভারে ৯৬ রান যোগ করা স্বাগতিকরা শেষ ৪৮ ওভারে যোগ করে ২২৫ রান। এর মধ্যে শেষ সেশনে ৩৩ ওভারে আসে ১৬৬ রান।

আসেলা গুনারত্নে ক্রিজে আসার পর বাড়ে রানের গতি। প্রথম সেশনে আড়াই করে রান সংগ্রহ করা দলটি দ্বিতীয় সেশনে যায় তিনের কাছাকাছি। দিন শেষ ওভার প্রতি রান ৩.৬৪ করে। এর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব মেন্ডিসের সঙ্গে গুনারত্নের ৪৩ ওভার স্থায়ী ১৯৬ রানের বিশাল চতুর্থ উইকেট জুটির। টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের এই উইকেটে এটাই সর্বোচ্চ রান।

কোনো ঝুঁকি নেননি গুনারত্নে-মেন্ডিস। ধৈর্যের পরীক্ষার হারিয়েছেন অতিথিদের। এক সময় জুটি ভাঙতে অনিয়মিত বোলার সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তাতেও কাজ হয়নি, বাজ বল কাজে লাগিয়ে দলকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দিয়েছেন দুই ব্যাটসম্যান।

শেষের দিকে নতুন বল নেওয়ার অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ দল। সেই দ্বিতীয় নতুন বলেই আসে সাফল্য। বাজে এক শটে ফিরেন গুনারত্নে, ভাঙে বিপজ্জনক হয়ে উঠা জুটি। ততটা না উঠা শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে বোল্ড হন গুনারত্নে। ১৩৪ বলে খেলা ৮৫ রানের ইনিংসটি গড়া ৭টি চারে।

প্রথম বলে যে ভুল করেছিলেন মেন্ডিস সারাদিনে করেননি তার পুনরাবৃত্তি। দারুণ ফুটওয়ার্কে সামলেছেন স্পিন। পেসের বিপক্ষে ছিলেন সাবলীল। ভালো কোনো স্পেল হলে সামলে রেখেছেন নিজেকে। বাজে বল পেলে চড়াও হয়ে সুবিধা কাজে লাগিয়েছেন। ১০১ বলে আসে পঞ্চাশ, রান তিন অঙ্কে নিতে খেলে ১৬৫ বল। দেড়শ’ ছুঁতে লেগেছে ২১৫ বল।

ডিকভেলাকে নিয়ে দিনের শেষ বেলা নিরাপদেই কাটিয়ে দেওয়া মেন্ডিসের সামনে প্রথম দ্বিশতকের সুযোগ। উইকেটে বোলারদের জন্য এখন তেমন কিছু নেই। দ্বিতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টা নিরাপদে কাটিয়ে দিতে পারলে রানের পাহাড় গড়তে পারে স্বাগতিকরা।

একটি করে উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ, তাসকিন, শুভাশীষ ও মিরাজ। সবচেয়ে বেশি ২৪ ওভার বল করে উইকেটশূন্য সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি এই স্পিনার আঁটসাঁট বোলিংয়ে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের বেঁধে রাখলেও পাননি কোনো সাফল্য।

বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলা এই টেস্টে নেতৃত্ব মুশফিকের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। বোলারদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করেছেন। উইকেটের পেছনে লিটন দাস ছিলেন দুর্দান্ত।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ বলে গেলেন, তৃতীয় দিনের আগে উইকেট থেকে খুব একটা টার্ন আসা করছেন না তারা। দ্বিতীয় সেশন থেকেই উইকেট থেকে ধুলা উড়তে দেখা গেল। সম্ভাব্য সময়ের আগেই হয়তো ঘুরতে পারে বল। সেক্ষত্রে মুশফিকদের সামনে কঠিন পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩২১/৪ (করুনারত্নে ৩০, থারাঙ্গা ৪, মেন্ডিস ১৬৬*, চান্দিমাল ৫, গুনারত্নে ৮৫, ডিকভেলা ১৪*; মুস্তাফিজ ১/৫০, তাসকিন ১/৪৮, শুভাশীষ ১/৫৮, মিরাজ ১/৬৬, সাকিব ০/৭১, সৌম্য ০/৯, মাহমুদউল্লাহ ০/১০)