২০১৩ সালের সেই গল টেস্টের পাঁচ দিনে পতন হয়েছিল মাত্র ১৮ উইকেট। ম্যাচ শেষে ওই উইকেটকে সড়ক অ্যাখ্যা দিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। চোটের জন্য এবার দলে নেই এই অলরাউন্ডার। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য যাওয়া এই ক্রিকেটার কোচকে নিয়ে লম্বা সময় ধরে দেখলেন উইকেট। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন সিরিজের জন্য টেস্ট দলের নেতৃত্ব পাওয়া রঙ্গনা হেরাথ। পরে দুই জনের মধ্যে আলোচনা চললো অনেকক্ষণ ধরে।
না থেকেও যেমন আছেন ম্যাথিউস তেমনি না থেকেও আছে চার বছর আগের সেই টেস্ট। ৬৩৮ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ গড়ে ড্র করেছিল ম্যাচ। ফিরে ফিরে আসছে সেই ম্যাচের কথা, সেই ম্যাচের উইকেটের প্রসঙ্গ। হেরাথ উইকেট নিয়ে যে আভাস দিলেন তাতে মিললো বড় রানের উইকেটের আভাস।
প্রথম তিন দিন উইকেট থাকতে পারে পুরোপুরি ব্যাটিং সহায়ক। শ্রীলঙ্কার অধিনায়কের বিশ্বাস, ব্যবধান গড়ে দিতে পারে প্রথম ইনিংস। প্রথম ইনিংসে বড় স্কোর গড়া সম্ভব। খুব ভালো বোলিং করতে পারলে খানিকটা সহায়তা মিলতে পারে বোলারদের জন্যও।
গল টেস্টে লঙ্কানদের জন্য একরকম দুর্গই। এখানে খেলা ২৮ টেস্টের ১৬টিতেই জিতেছে তারা। মুত্তিয়া মুরালিধরনের পর এখানে স্পিনে রাজত্ব করছেন হেরাথ। সেখানে হানা দেওয়ার সামর্থ্য আছে সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজদের।
গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে সোমবার সবার আগে উইকেট দেখতে গেলেন সাবেক অধিনায়ক ও মিডিয়া ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ। একে একে চান্দিকা হাথুরুসিংহে, মুশফিকুর রহিম, কোর্টনি ওয়ালশরা উইকেট দেখে এলেন।
শ্রীলঙ্কাতেই বেড়ে উঠা হাথুরুসিংহে, থিলান সামারাবিরার এক নজর দেখেই উইকেট চিনতে না পারার কোনো কারণ নেই। পাশের উইকেটে দলের সব পেসারদের নিয়ে রীতিমত মিটিংয়ে বসে গেলেন তারা। যোগ দিলেন ওয়ালশ। ঠিক কোন লাইন-লেংথে বল করে যেতে হবে বুঝিয়ে দিলেন সবাইকে। ভারী রোলের পর আর উইকেট নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখা গেল না অতিথিদের মধ্যে।
স্বাভাবিকভাবেই একাদশ ঠিক করার জন্য ম্যাচের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে দুই দল। সংবাদ সম্মেলনে দুই অধিনায়ক জানালেনও সেই কথা। গতবার গলে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিশতক করা মুশফিকের এবারের উইকেট একটু ভিন্ন মনে হচ্ছে।
“এটা ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো উইকেট। এক-দুই দিন পেসারদের জন্য কিছু থাকতে পারে। এখানে প্রচুর বাতাস থাকে যা পেসারদের মুভমেন্টে একটু সহায়তা করতে পারে। এর বাইরে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে স্পিনাররা সহায়তা পাবে।”
“এটা ভালো পিচ মনে হচ্ছে। আমি নিশ্চিত, শেষের দিকে স্পিনাররা কিছুটা সুবিধা পাবে।”
প্রচণ্ড গরম আর উত্তাপে টিকাই দায়। মুশফিকের শঙ্কা প্রখর রোদের ভূমিকা নিয়ে।
“গতবারের মত যে উইকেট একদমই ফ্ল্যাট তা নয়। শুরুর দিকে অবশ্যই কিছু সাহায্য পাওয়া যাবে। স্পিনাররা গলে সব সময় সহায়তা পেয়ে থাকে। গতবারের তুলনায় এবার গরম অনেক বেশি। উইকেট একটু তাড়াতাড়ি ভাঙতে পারে।”
প্রস্তুতির শেষ দিনে স্বাগতিকরা প্রস্তুতি নিয়েছে তেমনি উইকেটে। নেটে বোলারদের ল্যান্ডিংয়ে এবড়ো-থেবড়ো হয়ে যাওয়া অংশকে উইকেট বানিয়ে অসমতল বাউন্স আর আচমকা টার্ন সামলানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন নিরোশান ডিকভেলা, দিমুথ করুনারত্মেরা।
মুশফিকরা প্রস্তুতি নিয়েছেন নিজেদের মতো করে। দ্বিতীয় ইনিংসের চেয়ে আগে তাদের মনোযোগ প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহ গড়ার দিকে। গতবারের মতো এবারও প্রথম ইনিংসেই নিজেদের নিরাপদে নিতে চায় অতিথিরা।
“ব্যাটসম্যানদের জন্য অবশ্যই ভালো একটি উইকেট। ব্যাটসম্যানরা যদি সবাই প্রয়োগ করতে পারি ঠিকমত তাহলে এ উইকেটে অনেক রান থাকবে। উইকেটের থেকেও কঠিন হবে এখানকার গরম। এখানে গরমটা অনেকটা বেশি। আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।”