লাল বলে স্বরূপে মুস্তাফিজ

দিনের প্রথম বল করার জন্য মুস্তাফিজ যখন রান আপে যাচ্ছিলেন, বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ তখন সীমানা ধরে হাঁটছিলেন। একটু থেমে শিষ্যর বোলিং দেখলেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতমোরাটুয়া থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2017, 11:19 AM
Updated : 3 March 2017, 05:01 PM

শুধু ওয়ালশ নন মুস্তাফিজের দিকে বাড়তি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন মিডঅনে দাঁড়ানো অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, মিডঅফে দাঁড়ানো সহ-অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

তাদের আগ্রহের কারণটাও অনুমেয়। লাল বলে মুস্তাফিজ কেমন করে দেখতে চান তারা। শ্রীলঙ্কায় টেস্টে ভালো করতে এই পেসারের ওপর অনেকখানি নির্ভর করবে দল।

নিউ জিল্যান্ডে টেস্টে টিম ম্যানেজমেন্ট খেলাতে চেয়েছিল এই তরুণকে। কিন্তু পিঠের ব্যথায় খেলেননি তিনি; দলও তাকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেয়নি। লঙ্কা সিরিজে সম্পূর্ণ ফিট মুস্তাফিজকে পেতে খেলানো হয়নি ভারতে। নির্বাচকরা শুনেছিলেন তার কথাই। গতি, বোলিংয়ে ছন্দ আর আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে দিয়েছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সুযোগ। পরিকল্পনা কাজেও লেগেছে, লঙ্কা সফরের শুরুতে পুরনো চেহারাতেই দেখা গেছে মুস্তাফিজকে।

ডি সয়সা স্টেডিয়ামে বাতাসের কমতি নেই। কিন্তু প্রাণশক্তি শুষে নিতে আছে রোদ। বোলারদের সতেজ রাখতে ছোটো ছোটো স্পেলে পেসারদের দিয়ে বল করান মুশফিক। প্রথম সেশনে দুই স্পেলে ৬ ওভার বল করেন মুস্তাফিজ। প্রথম স্পেলে ৪ ওভার বল করে ১টি মেডেনসহ ৯ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন তিনি। 

প্রথম ওভারেই উইকেট পেতে পারতেন মুস্তাফিজ। রন চন্দ্রগুপ্তার ব্যাটের কানায় লাগা বল তৃতীয় স্লিপের পাশ দিয়ে সীমানার বাইরে চলে যায়। চতুর্থ স্লিপের ফিল্ডারের জন্য সেটি হতো সহজ ক্যাচ। পরের ওভারেও তার পুনরাবৃত্তি, এবার একটুর জন্য তৃতীয় স্লিপের পাশ দিয়ে যায় সীমানার বাইরে। প্রথম স্পেলে এর বাইরে স্কোরিং শট মোটে একটি।

কোনো আড়ষ্টতা ছিল না মুস্তাফিজের। ফিরে পেয়েছেন স্বাভাবিক গতি। ভালো সুইংও পেলেন। আগের দিনই বোঝা গিয়েছিল উইকেটে গ্রিপ আছে। সেটাও দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন এই তরুণ বাঁহাতি পেসার।

 

কাঁধে অস্ত্রোপচারের পর নিউ জিল্যান্ড সফর দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেন মুস্তাফিজ। সেখানে টেস্ট খেলেননি। নিজেকে ফিরে পেতে ২১ বছর বয়সী পেসার খেলেন বিসিএলের দুটি রাউন্ড। নিজেকে ফিরে পাওয়ার শুরুটা সেখান থেকেই। শ্রীলঙ্কায়ও ধরে রেখেছেন ধারাবাহিকতা।  

দ্বিতীয় স্পেলে প্রান্ত বদল করেই মিলে সাফল্য। অফ স্টাম্পের একটু বাইরের স্লোয়ার বুঝতে না পেরে ফিরতি ক্যাচ দেন বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান চন্দ্রগুপ্তা। ক্যাচ ধরতে গিয়ে তালগোল পাকালেও শেষ পর্যন্ত মুঠোতেই রাখেন মুস্তাফিজ। দ্বিতীয় স্পেলে ২ ওভার ১ মেডেনে ২ রান ১ উইকেট।  

অন্য প্রান্তে মুস্তাফিজ বোলিংয়ে থাকলে যে সুবিধা পাওয়া যায় সেটা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। সতীর্থের আঁটসাঁট বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের অস্থির হয়ে ওঠার সুবিধা কাজে লাগাতে পেরেছেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট লেংথে বল করে শট খেলার জন্য প্রলুব্ধ করে উইকেট নিয়েছেন এই তরুণ পেসার।

যথারীতি দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ওভারে আক্রমণে আসেন মুস্তাফিজ। ৩ ওভারের ছোট্ট স্পেলে দুটি মেডেনসহ দেন ৮ রান। তৃতীয় সেশনে ফিরে বোল্ড করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান লিও ফ্রান্সিসকোকে। সব মিলিয়ে ১২ ওভারে ৪টি মেডেনসহ ২৮ রানে ২ উইকেট। মোরাটুয়ায় এই কয় ওভারেই জানিয়ে দিলেন, টেস্টেও ফেরার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত তিনি।