নিউ জিল্যান্ড ২৮০, গাপটিল অপরাজিত ১৮০

মন্থর উইকেট। মাঝ বিরতিতে ২৮০ রানের লক্ষ্যটা একটু বেশিই মনে হচ্ছিলো কেন উইলিয়ামসনের। সেই ম্যাচ শেষ ৫ ওভার আগেই, নিউ জিল্যান্ড অধিনায়কের মুখে জয়ের হাসি। কঠিন কাজটি অনায়াস হয়ে গেল অসাধারণ এক ইনিংসে, যেটিকে উইলিয়ামসন বলছেন, কঠিন উইকেটে তার দেখা সেরা ইনিংস!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2017, 11:39 AM
Updated : 1 March 2017, 11:45 AM

হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে মাসখানেক বাইরে ছিলেন মার্টিন গাপটিল। ফিরেই দারুণ এক জয়ের নায়ক। কঠিন রান তাড়ায় এই ওপেনার প্রায় একাই হারিয়ে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। দলের ২৮০ রানে গাপটিল একাই অপরাজিত ১৮০!

১৩৮ বলের ইনিংসে ১৫ টি চার, ছক্কা ১১টি। রান তাড়ার শুরুর রানটির মত জয় এনে দেওয়া রানও তার ব্যাট থেকেই। বুধবার হ্যামিল্টনে দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে গেল গাপটিলকে থামাতে না পেরেই। চতুর্থ ওয়ানডে ৭ উইকেটের জয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল নিউ জিল্যান্ড।

ওয়ানডেতে এর আগে ২৩৭, ১৮৯ রানের ইনিংস আছে গাপটিলের। তিনটি ১৮০ ছোঁয়া ইনিংস ওয়ানডে ইতিহাসে নেই আর কারও। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি ওয়ানডে ইনিংসের মালিক গাপটিল ছাড়া নেই আর কেউ!

রান তাড়ার শুরুতেই নিউ জিল্যান্ড হারায় ডিন ব্রাউনলিকে। তবে সেই অস্বস্তি বা উইকেটের মন্থরতা, সব ভেসে যায় গাপটিলের স্ট্রোকের জোয়ারে।

উইলিয়ামসনের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে জুটি ৭২ রানের। তাতে উইলিয়ামসনের অবদান ২১, গাপটিলের ৫২। ম্যাচ জেতানো তৃতীয় উইকেট জুটিতে রান ১৮০। তাতে গাপটিল করেছেন ১০৬, রস টেইলর ৬৬।

গাপটিল-টেইলরের এই ১৮০ রানের জুটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে কোনো উইকেটে নিউ জিল্যান্ডের সর্বোচ্চ।

গত ৩০ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৬১ করেই ছিটকে গিয়েছিলেন গাপটিল। ফিরেই সেঞ্চুরি ছুঁলেন ৮২ বলে, যা ওয়ানডেতে তার দ্বাদশ সেঞ্চুরি।

জয়ের কাছে গিয়ে আউট হয়েছেন টেইলর (৬৬)। গাপটিল ফিরেছেন দলের জয় সঙ্গে করে। ১১ ছক্কার তিনটিতে বল ফেলেছেন স্টেডিয়ামের বাইরে।

কেবল ইমরান তাহিরকেই মেরেছেন পাঁচটি ছক্কা। তাহিরের ২৩ বলে গাপটিল নিয়েছেন ৪৩ রান। অন্যদের বিপক্ষে ৩৭ বলে মাত্র ১৩ রান দিয়ে তাহির নিয়েছেন ২ উইকেট!

অথচ প্রথম ইনিংস শেষে মনে হচ্ছিলো, এই ম্যাচেই সিরিজ জিতে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। এবি ডি ভিলিয়ার্সের আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংস ও শেষের ঝড় প্রোটিয়াদের এনে দিয়েছিল ভরসার স্কোর।

মন্থর উইকেট বলে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবার দুই প্রান্তে স্পিনার দিয়ে বোলিং শুরু করে নিউ জিল্যান্ড। তাতে কাজও হয়েছিল। আগের টানা পাঁচ ইনিংসে ফিফটি করা কুইন্টন ডি কক ফিরে যান শূন্য রানেই।

এই ম্যাচে আরেকটি অর্ধশতক করলে দক্ষিণ আফ্রিকার রেকর্ড গড়তে পারতেন ডি কক। উল্টো প্রথমবার পেলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গোল্ডেন ডাকের স্বাদ।

দারুণ খেলতে থাকা হাশিম আমলাকে (৩৮ বলে ৪০) বোল্ড করে দেন জিতান প্যাটেল। ফাফ দু প্লেসি রান পেয়েছেন আবারও। তবে ৬৭ করতে খেলে ফেলেন ৯৭ বল।

মাঝে দ্রুত কয়েকটি উইকেটে কমে যায় রানের গতিও। কিন্তু ডি ভিলিয়ার্স তখনও উইকেটে; সময় মতোই তোলেন ঝড়। শেষ দিকে দারুণ খেলেছেন ক্রিস মরিস ও ওয়েইন পার্নেলও।

অষ্টম উইকেটে পার্নেলের সঙ্গে ডি ভিলিয়ার্সে জুটি মাত্র ২৬ বলে ৬৩ রানের!

দুটি করে চার ছক্কায় ১২ বলে ২৯ করে অপরাজিত থাকেন পার্নেল। ৩ ছক্কায় ৫৯ বলে ৭২ রানে অপরাজিত ডি ভিলিয়ার্স। শেষ ৬ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা তোলে ৮৩ রান।

কে জানত, ব্যাটে তখন শান দিচ্ছেন গাপটিল!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ২৭৯/৭ (আমলা ৪০, ডি কক ০, দু প্লেসি ৬৭, দুমিনি ২৫, ডি ভিলিয়ার্স ৭২*, মিলার ১, প্রিটোরিয়াস ১০, মরিস ২৮, পার্নেল ২৯*; প্যাটেল ২/৫৭, স্যান্টনর ১/৪০, বোল্ট ১/৭০, সাউদি ১/৭০, ডি গ্র্যান্ডহোম ০/১০, উইলিয়ামসন ০/১৭, নিশাম ১/১৫)।

নিউ জিল্যান্ড: ৪৫ ওভারে ২৮০/৩ (গাপটিল ১৮০*, ব্রাউনলি ৪, উইলিয়ামসন ২১, টেলর ৬৬, রনকি ১*; রাবাদা ১/৪১, পার্নেল ০/৪৪, মরিস ০/৫৪, দুমিনি ০/২৬, প্রিটোরিয়াস ০/৫৫, তাহির ২/৫৬)।

ফল: নিউ জিল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে ২-২ সমতা

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মার্টিন গাপটিল