‘সব ক্ষেত্রেই মাশরাফি ভাই আমার মেন্টর’

বাংলাদেশ দল তখন ভারতে। তাসকিন আহমেদের পায়ে হঠাৎ বেশ ব্যথা। ফিজিও দেখে অভয় দিলেন। তাসকিনের মনে তবু খচখচ। দেশে ফোন করলেন মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। বিস্তারিত শুনে মাশরাফি বললেন, “কিছুই হয়নি। মন থেকে ভয় সরিয়ে ফেলো, দেখবে সব ঠিক।” কথায় কাজ হলো জাদুমন্ত্রের মতো। মন থেকে ব্যথার ভাবনা সরাতেই যেন উধাও শরীর থেকেও। হায়দরাবাদ টেস্টে তাসকিন বোলিং করলেন ৩২ ওভার!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2017, 01:50 PM
Updated : 22 Feb 2017, 04:07 PM

মিরপুর একাডেমির জিমে হাসতে হাসতে এসব বলছিলেন তাসকিন। খুব বিস্ময়কর কিছু অবশ্য নয়। এরকম টুকটাক গল্প আছে অনেকেরই। ক্যারিয়ার জুড়ে অসংখ্য চোট সামলে মাশরাফি নিজেই মোটামুটি বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। চোট আঘাতে শারীরিক ও মানসিক ব্যাপারগুলো তাই খুব ভালো বোঝেন। ক্রিকেটাররাও ফিজিও-ট্রেনারের পাশাপাশি অনেক সময়ই দারস্থ হয় মাশরাফির।

ভারত সফর শেষে ছিল কদিনের ছুটি। তাসকিন বেরিয়ে এসেছেন কক্সবাজার। ঝেরে এসেছেন অবসাদ। শুক্রবার থেকে শ্রীলঙ্কা সফরের প্রস্তুতি। তবে বুধবার থেকেই তরুণ ফাস্ট বোলার শুরু করেছেন জিমে ঘাম ঝরানো। জিমে নানান কসরতের ফাঁকে বললেন, “ফিট থাকা অনেক কঠিন কাজ।”

কঠিন তো বটেই। তাসকিনের জন্য টানা ফিট থাকা একসময় ছিল প্রায় অসম্ভব। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর আগেই এমন একটি স্ট্রেস ফ্র্যাকচারের ধাক্কা সামলেছেন, যেটি ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে পারত শুরুর আগেই। চোট ছোবল দিয়েছে আরও বেশ কবার।

তবে সেসব এখন অতীত। তার জন্য বরাবরই আলাদা ট্রেনিং সূচি ছিল বিসিবির। প্রচণ্ড পরিশ্রম করে, ফিটনেস নিয়ে খাটুনি করে তিনিও তৈরি করেছেন নিজেকে। চোটপ্রবণ শরীরটিই এখন দারুণ পোক্ত। কয়েক মাস আগেও দীর্ঘ ক্রিকেটে তার দীর্ঘ সময় বোলিং করার সামর্থ্য নিয়ে সংশয় ছিল স্বয়ং কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহের। সেই তাসকিন ক্যারিয়ারের প্রথম ৩ টেস্টে বোলিং করে ফেলেছেন ৯৪ ওভার!

শুধু টানা টেস্ট খেলাই নয়, বেশ কিছুদিন ধরেই খেলে চলেছেন টানা চোটমুক্ত থেকে। নিজের পরিশ্রমের পাশাপাশি তাসকিন এতে অবদান দেখছেন মাশরাফির পরামর্শেরও।

“ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টির চেয়ে টেস্টে চাপ অনেক বেশি পড়ে। অনেক কিছু মেনে চলতে হয় ফিট থাকতে। তবে ফিজিক্যালি ফিট থাকার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক শক্তি। দুটিই ভালো করার চেষ্টা করছি। সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলছি। মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছি।”

“ইনজুরি ব্যাপারটা এমন যে হাঁটার সময় সিড়িতে পা মচকেও ইনজুরি হতে পারে। আমার ভাগ্য ভাল, আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছি। পরিশ্রম তো অনেক করছিই। মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে মাশরাফি ভাই আমার পথ প্রদর্শক। তিনিই বলেছেন, এসব নিয়ে বেশি না ভাবতে।”

মাশরাফির বার্তাটি পরিষ্কার। চোটের ভয় যদি মনে থাকে, তাহলে শরীরে আঘাত হানতেও সময় নেয় না। আর মন যদি শক্ত থাকে, তাহলে ইনজুরি শরীর থেকেও দূরে থাকে।

তবে শুধু চোট সামলানোয় নয়, সব কিছুতেই মাশরাফিকে গুরুর জায়গা দিয়ে রেখেছেন তাসকিন।

“ভাই না থাকলে যে কী হত! সব কিছুতেই মাশরাফি ভাই আমার মেন্টর। ক্রিকেট, মাঠের বাইরে, লাইফস্টাইল সব কিছুতে..।”

তাসকিন অবশ্য বরাবরই বলে এসেছেন, মাশরাফিই তার আদর্শ। দুজনের সম্পর্কও দারুণ। মাশরাফির আঙুলের চোট এখনও পুরো সারেনি। শ্রীলঙ্কা সফরে ওয়ানডে পরে হওয়ায় তাই দারুণ খুশি তাসকিন, “ভালো হয়েছে শ্রীলঙ্কায় টেস্ট আগে। ওয়ানডে আসতে আসতে ভাই (মাশরাফি) ঠিক হয়ে যাবে। ভাইকে টেস্টে মিস করি। টেস্টেও ভাই থাকলে ভালো হতো, মাঠে অভিভাবক পেয়ে যেতাম!”

তাসকিনের এই আক্ষেপ তো বাংলাদেশ ক্রিকেটেরও দীর্ঘশ্বাস। টেস্টে পাওয়া যাচ্ছে না মাশরাফিকে। পূরণ হলো না টেস্ট বোলার মাশরাফির সম্ভাবনার কিছুই।

সেই আক্ষেপ থেকেই যাবে। তবে তাসকিনদের কেবল শুরু। তারাই পারেন টেস্টে বাংলাদেশের পেসারদের নতুন অধ্যায়ের জন্ম দিতে!