শেষটায়ও মিশে থাকল আক্ষেপ

সূর্যের তেজ তখনও প্রখর। দিনের খেলার বাকি প্রায় ২৫ ওভার। রানের হিসেবেও বাংলাদেশের হারের ব্যবধান বিশাল। তার পরও শেষটায় মিশে থাকল আক্ষেপ। একজন কামরুল ইসলাম রাব্বি বা মেহেদী হাসান মিরাজকে দেখেও কি বিব্রত হবেন না মূল ব্যাটসম্যানরা?

ক্রীড়া প্রতিবেদক হায়দরাবাদ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2017, 10:49 AM
Updated : 13 Feb 2017, 02:52 PM

লোয়ার অর্ডারে এই দুজনের লড়াইটাও জাগাল আক্ষেপ। ভারতের মাটিতে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ দিন কাটিয়ে দেওয়া এমনিতে যত কঠিন মনে হয়, আসলে কাজটা ছিল তার চেয়ে সহজই। শেষ দিনেও উইকেটে নেই তেমন কিছু। ভারতীয় বোলাররাও করেননি আহামরি বোলিং। রাব্বিরা পারলে মুশফিকরা পারবেন না কেন?

কিন্তু এটাই টেস্ট ক্রিকেটের বাংলাদেশ। প্রয়োজনের সময় হাত তুলে এগিয়ে আসেন কম জনই। ভারতের জয়টাও তাই শেষ পর্যন্ত অনায়াস। একমাত্র টেস্টে ২০৮ রানের জয়ে ভারতের অপারেজয় যাত্রা ছুটল আরও সামনে।

আগের টেস্টেই নিজেদের রেকর্ড গড়ে ফেলা ভারত এই নিয়ে অপরাজিত টানা ১৯ টেস্ট। সবশেষ হেরেছিল ২০১৫ সালে অগাস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে।

ম্যাচ বাঁচাতে প্রয়োজন ছিল ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে অসাধারণ কিছু। কিন্তু তাদের একেকটি আউট যেন বুড়ো আঙুল দেখালো সেই প্রত্যাশাকে। দায়মুক্তি কেবল দেওয়া যায় সাকিবকেই।

শেষ কবে ভালো বলে আউট হয়েছেন, সাকিব নিজেও নাকি মনে করতে পারেন না। এখন পারবেন। ফুট মার্ক লক্ষ্য করে জোরের ওপর বল করলেন জাদেজা, একদম ঠিক জায়গায় পড়ে বল লাফিয়ে উঠে ছোবল দিল সাকিবের গ্লাভসে।

নিজের মতই খেলে যাবেন বলে যদি তর্কের খাতিরে ‘বোনাস’ হয়ে নেওয়া হয় সাকিবের ব্যাটিং, তাহলে তখনও জিইয়ে ছিল বাংলাদেশের ম্যাচ বাঁচানোর সম্ভাবনা। শেষ করলেন তিনি, প্রথম ইনিংসে যিনি ছিলেন লড়াইয়ের মূর্ত প্রতীক।

ব্যাটিং কোচ থিলান সামারাবিরা আগের দিন বলেছিলেন, শেষ দিনে উইকেট আকড়ে রাখতে হবে। সেটি বোধহয় ছিল স্রেফ তার নিজের ভাবনা। কারণ মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলেই গেছেন। সেটিরই বলি হয়েছেন মুশফিক।

অশ্বিনকে বেরিয়ে এসে চার মেরেছিলেন কাভার ড্রাইভে। আসলে সেটি ছিল ফাঁদে ফেলার প্রক্রিয়া। মুশফিকও সানন্দে ধরা পড়লেন জালে। বোলার আবারও তাকে বের করে আনলেন, এবার বল উঠল হাওয়ায়। সহজ ক্যাচ।

মুশফিক যখন মাথা নাড়তে নাড়তে ফিরছেন, অপেক্ষা তখন কেবল ম্যাচ শেষ হওয়ার। সাব্বির ফিরলেন ইশান্ত শর্মার ভেতরে ঢোকা বলে। মিডল অর্ডারে তিন ব্যাটসম্যানের রান ২২, ২৩ ও ২২। এই দল ম্যাচ বাঁচাবে কি করে!

মাহমুদউল্রাহ অবশ্য দলে জায়গা বাঁচিয়ে ফেলেছেন। প্রায় দেড় বছর ও ১০ ইনিংস পর করলেন অর্ধশতক। তার পর যেভাবে আউট হলেন, সেটি বলবে খেলছিলেন বুঝি স্রেফ জায়গা বাঁচাতেই। ৬১ রানে জীবন পেয়ে কোথায় সতর্ক হবে, উল্টো খেললেন আলগা শট। লং লেগে ফিল্ডার কেন আনা হলো, সেটা না বোঝার কারণ নেই। শর্ট বলটি তবু লং লেগ ফিল্ডারের হাতে তুলে দিলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান!

ব্যাটসম্যানদের নিয়ে সেই আক্ষেপ আরও বাড়ল পরের এক ঘণ্টায়। মিরাজ ও রাব্বি আঁকড়ে রইলেন উইকেট। জুটি মাত্র ১৭ রানের, কিন্তু দুজনে খেলেছেন ১৪ ওভার। তাদের খুব বেশি ভোগাতেও পারেনি উইকেট বা ভারতের কোনো বোলার।

শেষ পর্যন্ত জাদেজারই দারুণ একটি বলে মিরাজের বিদায়ে ভেঙেছে জুটি। আড়াইশতে ইনিংসের ইতি। তবে হারেননি কামরুল। আগের টেস্টেই ৬৩ বলে ২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ক্রাইস্টচার্চে। এবার ৭০ বলে ৩ রানে অপরাজিত!

টেকনিক তার অবশ্যই ব্যাটসম্যানদের মতো নয়। কিন্তু ছিল বুক চিতিয়ে লড়ার সাহস, ইচ্ছা ও প্রতিজ্ঞা। ম্যাচ শেষে থেকে গেল সেটিরই রেশ। কামরুলের এসব থাকলে ‘বড়দের’ কেন নয়!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত ১ম ইনিংস: ৬৮৭/৬ (ডি.)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৮৮

ভারত ২য় ইনিংস: ২৯ ওভারে ১৫৯/৪ (ডি.)

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ১০০.৩ ওভারে ২৫০ (লক্ষ্য ৪৫৯, আগের দিন ১০৩/৩) (মাহমুদউল্লাহ ৬৪, সাকিব ২২, মুশফিক ২৩, সাব্বির ২২, মিরাজ ২৩, কামরুল ৩*, তাইজুল ৬, তাসকিন ১; ভুবনেশ্বর ০/১৫, অশ্বিন ৪/৭৩, ইশান্ত ২/৪০, উমেশ ০/৩৩, জাদেজা ৪/৭৮)।

ফল: ভারত ২০৮ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: বিরাট কোহলি